কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত সেলফ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন

কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত সেলফ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন

কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত সেলফ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন

কোভিড-১৯ ভাইরাস পরিচিতি

● কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত একটি নতুন রোগ যা পৃথিবী জুড়ে মানুষের মৃত্যু এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতার জন্য দায়ী।
● চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে কোভিড-১৯ প্রথম শনাক্ত করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র অসুখটি ছড়িয়ে পড়েছে।
● কোভিড-১৯ রোগটি সার্স-কোভিড-২ ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট যা করোনা ভাইরাস নামেও পরিচিত। করোনা ভাইরাস জনিত অসুখে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে জ্বর, কাশি এমনকি গুরুতর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়ে থাকে।
● করোনা ভাইরাস অতি ক্ষুদ্র। এক বিন্দু পরিমাণ জায়গায় দশ হাজার করোনা ভাইরাস আঁটতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অদৃশ্য করোনা ভাইরাস আমাদের চারপাশের ব্যবহার্য বস্তুতে লেগে থাকতে পারে।
● ব্যবহার্য বস্তুতে লেগে থাকা এই ভাইরাস নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে (যেমনঃ দরজার ধাতব হাতলে) ৩ দিনেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকতে পারে।
● ভাইরাসটি আবরণ যুক্ত (এটি আবরণ যুক্ত হওয়ায় সাবান-পানি এবং এলকোহল দ্রবণে ধ্বংস হয়)।
● করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে অধিকাংশ মানুষের সাধারণ ঠাণ্ডা কাশির মত উপসর্গ হলেও, অল্প সংখ্যক মানুষের প্রাণঘাতী শারীরিক জটিলতা হতে পারে এবং অতি অল্প সংখ্যক মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

ভাইরাসটি যেভাবে ছড়ায়

কোভিড -১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির রেস্পিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে এই রোগ সাধারণত মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষের স্বাভাবিক কথাবার্তা, অট্টহাসি, হাঁচি-কাশি, বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন: নেবুলাইজেশন, এন্ডোস্কপি, দাঁতের চিকিৎসায় এ ধরনের রেস্পিরেটরি ড্রপলেট তৈরি হয়।
● মানুষ থেকে মানুষে: দু’জন মানুষের মধ্যে যদি দূরত্ব ৩ ফুটের কম থাকে সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর হাঁচি, কাশি, কফের মাধ্যমে রেস্পিরেটরি ড্রপলেটের দ্বারা রোগটি সুস্থ মানুষের দেহে সরাসরি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
● বস্তু থেকে মানুষে: আক্রান্ত ব্যক্তির রেস্পিরেটরি ড্রপলেট কোন বস্তুর উপর পড়লে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি কোন বস্তু বা সমতলে (মেঝে, টেবিলে) ৭২ ঘন্টার মত সক্রিয় থাকতে পারে। তাই ভাইরাস লেগে থাকা কোন বস্তু বা তল স্পর্শ করার পর অপরিষ্কার হাতে মুখ, নাক কিংবা চোখ স্পর্শ করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রোগটি সুস্থ মানুষে সংক্রমিত হতে পারে।

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ এবং উপসর্গ

করোনা ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে ২-১৪ দিন (গড়ে ৫ দিন) লাগতে পারে। এ কারণে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার পর ১৪ দিন আলাদা থাকতে উপদেশ দেয়া হয়। ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে ১৪ দিন সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির কোয়ারেন্টিন থাকার বিকল্প নেই।
সেলফ আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের লক্ষণ ও উপসর্গ জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি।

লক্ষণ ও উপসর্গঃ

● শুষ্ক কাশি
● ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রার জ্বর
● গলা ব্যথা
● মাথা ব্যথা
● পাতলা পায়খানা
● শরীর ব্যথা এবং অতিদুর্বলতা
● শ্বাসকষ্ট
● শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হওয়া, রক্তে সংক্রমণের নানা উপসর্গ

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯ সংক্রমণে নাক দিয়ে পানি পড়া উপসর্গ সাধারণত দেখা যায় না।
আক্রান্ত রোগীর যথাযথ সেবার জন্য আমরা কোভিড–১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গগুলোকে ৪টি ভাগে বিভক্ত করি:

● মৃদু অসুস্থতা : শুকনো কাশি, ঠাণ্ডা লাগা
● মাঝারি অসুস্থতা : নিউমোনিয়া জাতীয় অসুখ যেখানে মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর, শুকনো কাশি তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত অক্সিজেনের যোগান প্রয়োজন নেই
● তীব্র অসুস্থতা : তীব্র শ্বাসকষ্ট, রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া
● সংকটাপন্ন : তীব্র শ্বাসকষ্ট সংশ্লিষ্ট উপসর্গ, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হওয়া, রক্তে সংক্রমণের নানা উপসর্গ

আপনার এসকল উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত সরকার নির্ধারিত হটলাইনগুলোতে ১৬২৬৩, ৩৩৩, ১০৬৬৫ এ কল করে চিকিৎসা সাহায্য নিন।

গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে ৯৯৯ এ কল করুন এ্যাম্বুলেন্সের জন্য।

ঝুঁকিপূর্ণ রোগীঃ

বার্ধক্য এবং যারা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ , হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, ডায়াবেটিস অথবা ক্যান্সার, তাদের করোনা ভাইরাসজনিত অসুখে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্য রোগীদের তুলনায় বেশি।
কোভিড – ১৯ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মাঝে মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা যায় এবং এরপর তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। প্রায় ১৪ % রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং তীব্র অসুস্থতার জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট সহ হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজন হয়। আনুমানিক ৫% মানুষের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে তাদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

প্রতিরোধে করণীয়

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসজনিত কারণে মৃত্যু প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা।

● সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
● কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা
● মাস্ক ব্যবহার করা
● হাত ধোয়া
● জীবাণুনাশক ব্যবহার করা

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা

সামাজিক দূরত্ব বলতে ঘরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই, একে অপরের থেকে সুনির্দিষ্ট দূরত্ব (৩ ফুট) বজায় রেখে চলাকে বোঝায়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ করতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

● একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে তার হাঁচি, কাশি, কফ, লালা কিংবা থুতুর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কণা তথা ‘ড্রপলেট’ বাইরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ড্রপলেটে করোনা ভাইরাস থাকে যা সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে।
● একজন সুস্থ ব্যক্তি যদি আক্রান্ত ব্যক্তির ৩ ফুটের কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করেন, তবে বাতাসে ছড়িয়ে থাকা এই ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাস, নিঃশ্বাসের সাথে তার ফুসফুসে প্রবেশ করে ও তিনি সংক্রমিত হন।
● একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে অসুস্থবোধ নাও করতে পারেন। কিন্তু উপসর্গবিহীন অবস্থায় তিনি অন্য ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারেন।
● করোনা ভাইরাস যেহেতু প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের মাধ্যমেই বিস্তার লাভ করে, তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে একে অপরের সাথে ৩ ফুট বা ১ মিটার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
● নিম্নোক্ত বিষয়গুলি মেনে চললে সহজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব:
○ একে অন্যের থেকে ৩ ফুট অর্থাৎ ১ মিটার দূরত্বে অবস্থান করা।
○ দলবদ্ধভাবে অবস্থান না করা যেমনঃ আড্ডা না দেয়া।
○ ভীড় ও জনসমাগম এড়িয়ে চলা।
○ অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ির বাইরে না যাওয়া ও ভ্রমণ পরিহার করা।
○ গণপরিবহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।
○ সম্ভব হলে বাসায় থেকেই প্রয়োজনীয় কাজ করা।
○ কুশল বিনিময়ের ক্ষেত্রে করমর্দন এড়িয়ে চলা।
○ হাঁচি-কাশি জনিত শিষ্টাচার মেনে চলা।

হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার

● হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু পেপার / মেডিকেল মাস্ক / কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ।
● মাস্ক না থাকলে কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি বা কাশি দিতে হবে। প্রতিবার হাঁচি-কাশির পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে । কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি-কাশি দিলে সে স্থান কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করা যাবে না।
● টিস্যু কিংবা কাপড়ে হাঁচি বা কাশি দেওয়ার পর টিস্যুটি বা কাপড়টি ঢাকনা যুক্ত পাত্রে ফেলতে হবে ।
● হাতের তালুতে হাঁচি বা কাশি দেওয়া যাবে না ।
● অন্যের কাছাকাছি থেকে তার দিকে ফিরে হাঁচি বা কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

মাস্ক ব্যবহারের নিয়মাবলী

কারা মাস্ক ব্যবহার করবেন:

● যারা অসুস্থ ও কারো মধ্যে যদি এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
● যাদের কোভিড-১৯ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের দেখভালের কাজে যারা নিয়োজিত রয়েছেন তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন।
● করোনা পজিটিভ রোগী এবং তার পরিচর্যাকারী।
● সুস্থ ব্যক্তি কেবলমাত্র অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাশি আসলে এবং বাসার বাইরে জনসমাগমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে যেমনঃ বাজারে গেলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।

মাস্ক ব্যবহারে করণীয়:

● মাস্ক স্পর্শের পূর্বে হাত সাবান-পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিন।
● ভাল করে দেখে নিন কোন ছেঁড়া বা ফুটা আছে কি না।
● ধাতব অংশের দিকটা উপরে রাখুন এবং রঙিন দিকটা বাইরের দিকে রাখুন।
● মাস্ক দিয়ে মুখ ভালভাবে ঢেকে শক্ত করে বাঁধুন যেন মাস্ক এবং মুখমণ্ডলের মাঝে কোন ফাঁকা না থাকে।
● হাঁচি-কাশির ফলে মাস্ক ভিজে গেলে অথবা বাহ্যিক কোন দৃশ্যমান ময়লা থাকলে মাস্কটি ফেলে দিন বা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
● মাস্ক ব্যবহারের সময় হাত দিয়ে মাস্ক ধরা থেকে বিরত থাকুন।
● ব্যবহার করা মাস্কটি ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ফেলুন বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডিটারজেন্টে আধা ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে ধুয়ে রোদে তিন দিন শুকাতে দিন।
● মাস্ক খোলার সময় মাস্কের সামনে হাত না দিয়ে পেছন থেকে ইলাস্টিক সুতা ধরে খুলুন।
● মাস্কটি খুলে একটি ঢাকনা যুক্ত বাক্সে ফেলে দিন।
● মাস্ক খোলার পর সাবান-পানি দিয়ে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিন।

মাস্ক ব্যবহারে বর্জনীয়:

● ছেঁড়া বা ভেজা মাস্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
● ঢিলেঢালা মাস্ক পরা যাবে না।
● মাস্কের সামনের অংশ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
● কারো সাথে কথা বলার সময় মাস্ক খোলা যাবে না।
● মাস্ক খুলে করতে হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
● মাস্ক যাতে অন্যের নাগালে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
● একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।

মাস্ক পরিষ্কার করার নিয়মাবলিঃ

অপরিষ্কার মাস্কের মাধ্যমেও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।তাই মাস্ক ধোয়ার পদ্ধতি জেনে রাখা জরুরি।
সার্জিক্যাল মাস্ক পুনঃ ব্যবহারের অযোগ্য। তাই ব্যবহারের পরপরই ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু এন৯৫ (চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য) ও সুতির কাপড়ের মাস্ক বা টেরিলিন কাপড়ের মাস্ক এমনকি ঘরোয়া উপায়ে বানানো মাস্ক পরলেও নির্দিষ্ট রীতি মেনে তাদের পরিষ্কার করতে হবে।

● বাড়ি ফিরে মাস্ক খুলুন দড়ি, ফিতে বা রাবার ব্যান্ডের অংশ ধরে। মাস্কে সরাসরি হাত দেবেন না। এবার তা সাবানপানিতে ভিজিয়ে কেচে নিন। তাতে মাস্ক জীবাণুমুক্ত হবে।
● ধোয়ার পর জীবাণুনাশক দ্রবনে ডুবিয়ে ফিতে বা দড়ির অংশটির মাধ্যমে কাপড় শুকানোর দড়িতে শুকাতে দিন খোলা বাতাসে বা সরাসরি সূর্যের আলোতে। শুকানোর সময় মাস্কের মূল অংশে ধুলোবালি যেন না লাগে খেয়াল রাখতে হবে।
● কেচে শুকোনোর পর তাকে ৫-৭ মিনিট ধরে ইস্ত্রি করে নিলেই আপনার মাস্ক ফের ব্যবহারের জন্য তৈরি।
● কোনোভাবেই ভেজা মাস্ক পরবেন না। এতে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

হাত ধোয়া

আক্রান্ত ব্যক্তি বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর হাতে দৃশ্যমান ময়লা থাকলে অথবা, পরিচর্যাকালীন রোগীর থুতু, কফ, মলমূত্র কিংবা রক্ত স্পর্শ করার পর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাতে দৃশ্যমান ময়লা না লেগে থাকলে বিকল্প হিসেবে এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। পরিচর্যাকারী সর্বদা হাতের নখ ছোট রাখবেন এবং যে কোন অলংকার যেমনঃ আংটি ও চুড়ি খুলে রাখবেন।

হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম:

● পানি দিয়ে হাত ভেজান।
● যথেষ্ট পরিমাণ সাবান নিন যাতে হাতের সম্পূর্ণ উপরি ভাগে লাগে।
● এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের তালু ঘষা দিন।
● ডান হাতের তালু বাম হাতের পৃষ্ঠদেশের উপর নিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে দিন এবং উল্টোটিও করুন।
● দুই হাতের তালু মিলিয়ে আঙ্গুলগুলো জড়িয়ে নিন।
● আঙ্গুলগুলোর পেছনভাগ দিয়ে উল্টোদিকের তালুর সংস্পর্শে আঙুলের সাথে আলিঙ্গনবদ্ধ করুন।
● ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘষা দিন এবং উল্টোটিও করুন।
● ডান হাতের আঙ্গুলগুলো একত্রিত করে বাম হাতের তালুতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সামনে ও পেছনে ঘষা দিন এবং উল্টোটিও করুন।
● বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কবজির চারদিকে ঘুরিয়ে পরিষ্কার করুন এবং উল্টোটিও করুন।
● বাম হাতের তালুর উপর ডান হাত রেখে পানির নিচে ধরুন।
● একবার ব্যবহার যোগ্য তোয়ালে দিয়ে হাত ভালভাবে মুছে নিন।
● তোয়ালেটি পানির কল বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করুন।

কতক্ষণ ধরে হাত ধোয়া উচিত:

সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেণ্ড ধরে হাত ধুতে হবে। এলকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ২০ সেকেন্ড সময় ধরে ব্যবহার করতে হবে।

২০ সেকেন্ড গণনায় করনীয় :

ইংরেজির ভাষাভাষিগণ ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার এভাবে ২০ হাজার পর্যন্ত এছাড়াও তারা একবার ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ এবং অন্যান্য পদ্ধতিগুলি গায়। ব্র্যাক ‘আমরা করব জয়’ গানটি ব্যবহার করছে।
পরামর্শ : খুব খুব আস্তে ‘এক’ থেকে ‘কুড়ি / বিশ’ গণনা করলেও ২০ সেকেন্ড সময় অতিবাহিত হয়।

কখন হাত ধুতে হবে:

● করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নিম্নলিখিত সময়ে অবশ্যই হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে-
● হাঁচি, কাশি ও নাক পরিষ্কারের পর
● জনসমাগম হয় এমন স্থান থেকে ফিরে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে যেমনঃ গণপরিবহন, বাজার, প্রার্থনাগার
● বাড়ির বাইরে কোন পৃষ্ঠতল (দরজার হাতল, রিমোট) বা টাকা স্পর্শ করার পর
● অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যা করার আগে ও পরে
● খাবার আগে ও পরে
● ঘরের যে কোন ধোয়ামোছা পরিষ্কার করার পর

সাধারণ ভাবে নিম্নলিখিত সময়ে সবসময় হাত ধোয়া উচিত:

● টয়লেট ব্যবহারের পর
● খাবার আগে ও পরে
● আবর্জনা পরিষ্কারের পর
● পোষা প্রাণী স্পর্শ করার পর
● হাত দেখতে ময়লা মনে হল

জীবাণুনাশকের ব্যবহার

সংক্রামক জীবাণু যেমন ভাইরাস যেহেতু পরিবেশে, কোন বস্তুতে কয়েক ঘন্টা এমনকি তিন দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে, তাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ‘জীবাণুমুক্তকরণ’ অবশ্য করণীয়।

ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক সমূহ:

● সাবান, ডিটারজেন্ট
● ০.৫-১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন (যেমন ক্লোটেক, ক্লোরোক্স)
● ব্লিচিং পাউডার
● ৭০% এলকোহল (যেমন আইসো প্রোপাইল ৭০% বা ইথাইল এলকোহল ৭০%)
● লাইজল
● ফেনোলিক কমপাউন্ড (যেমন: ফিনিশ)
● ২% গ্লুটেরালডিহাইড (যেমন: সিডেক্স)
● ফরমালডিহাইড ফিউমিগেশন ইত্যাদি।
● ডেটল, সেভলন ইত্যাদি

ব্লিচিং পাউডারের ক্ষেত্রে, ১ লিটার পানিতে ২ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার ১০ সেকেণ্ড নেড়ে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ব্যবহার করতে হবে। এই দ্রবণটি ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করুন।

ব্লিচিং সলিউশনের ক্ষেত্রে (ক্লোরোক্স, ক্লোটেক), ১ লিটার পানিতে ৫০ মিলি ব্লিচিং সলিউশন ১০ সেকেণ্ড নেড়ে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ব্যবহার করতে হবে। এই দ্রবণটি ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করুন।

মানসিক স্বাস্থ্য

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে কি কি করবেন:

● করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভীতি থেকে অবসাদে ভোগা, মনের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া, হতবিহ্বল হয়ে পড়া, আতঙ্কিত হওয়া বা রেগে যাওয়া স্বাভাবিক।
● এই সময় আপনি যাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন তাদের সাথে কথা বলুন, পরামর্শ নিন।
● স্বজন আর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
● বাড়িতে থাকতে বাধ্য হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
● সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান, হালকা ব্যায়াম করুন।
● বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো সময় কাটান আর বাইরের বন্ধু বা স্বজনদের সাথে ইমেইল, টেলিফোন বা সামাজিক মাধ্যম এর সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
● ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য, এলকোহল বা অন্য কোন নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে আপনার মনের চাপ দূর করার চেষ্টা করবেন না।
● নিজের উপর যদি খুব বেশি চাপ বা স্ট্রেস বোধ করতে থাকেন তবে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে কথা বলুন।
● কেবলমাত্র সঠিক তথ্য সংগ্রহ করুন।
● তথ্যের এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস ঠিক করে রাখুন যে কেবলমাত্র সেগুলোর উপর ভরসা করবেন। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট বা সরকার হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
● দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা কমাতে, আপনি এবং আপনার পরিবার, প্রচার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আর এর পরিণতি নিয়ে বিপর্যস্তকর সংবাদ শোনা বা দেখা কমিয়ে দিন।
● অতীতে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার দক্ষতাগুলোর কথা আবার মনে করুন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এর সময় আপনার মানসিক চাপ কমাতে পূর্বের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভাল থাকার চেষ্টা করুন।

শিশুদের যেভাবে মানসিক চাপ মুক্ত রাখবেন:

দেখা যায় যে, বড়দের চেয়ে শিশুরা ভিন্ন ভাবে কোন চাপের মোকাবিলা করে। কোন বিপদে শিশুরা তাদের বাবা মাকে ধরে রাখতে চায়, খুব চিন্তিত–আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, নিজেদের গুটিয়ে রাখে, খুব রেগে যায়। এভাবে থাকতে থাকতে তারা অস্থির হয়ে পড়ে, কোন কোন সময় বিছানায় প্রস্রাবও করে ফেলে।

প্রতিকূল পরিবেশে বাচ্চারা বড়দের কাছ থেকে আরও বেশি ভালবাসা এবং আরও বেশি মনোযোগ চায়। তাই,

● তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনুন। যত্ন করে উত্তর দিন। তাদের আরেকটু বেশি ভালোবাসুন এবং ওদের প্রতি আরও দয়ালু হোন।
● বাচ্চাদের ঘরের ভেতরে খেলতে উৎসাহিত করুন। এটা তাদের চাপ কমিয়ে দিবে।
● কোভিড ১৯ রোগের সকল পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব, বাচ্চাদের তাদের বাবা মা ও পরিবারের সাথে রাখুন। পরিবার এবং যারা তাদের যত্ন নেয় তাদের থেকে আলাদা রাখবেন না।
● যদি তাদের হাসপাতালে ভর্তির জন্য অথবা কোয়ারেন্টাইনে নেওয়ার জন্য অথবা অন্য যে কোন কারণে আলাদা রাখতে হয়, তবে তাদের সাথে নিয়মিত টেলিফোনের মাধ্যমে বা অন্য যে কোন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
● তার দৈনন্দিন রুটিন এবং সকল পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড যতটুকু সম্ভব করানোর চেষ্টা করুন অথবা প্রয়োজন পড়লে নতুন পরিবেশে কাজের জন্য নতুন রুটিন তৈরি করতে তাকে সাহায্য করুন।
● তার বয়স অনুযায়ী তার জন্য সঠিক তথ্যগুলো দেওয়ার চেষ্টা করুন।
● তাদের এই প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে তাদের জন্য সহজবোধ্য ভাষায় তাদের সাথে বিশদভাবে কথা বলুন এবং তাদের জানান তারা কিভাবে তাদের জীবাণু সংক্রমণ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে এবং নিরাপদ থাকতে পারে।
● শিশুদের এই সংক্রমণের ফলে কি কি ঘটতে পারে তা অবহিত করুন এবং তাকে সর্বদা আশ্বস্ত করুন। যেমন, যদি কোন শিশু অথবা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় তবে শিশুটিকে আগে তা জানান এবং এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই সে ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করুন। ডাক্তাররা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থাই নিবেন তা তাকে জানান।

করোনায় খাদ্যাভাস

লকডাউনের দিনগুলোতে শরীরের যত্ন নিতে হবে। কারণ সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের বসবাস।

কোন রোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। নিম্নোক্ত খাবারগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। এই সময়ে যখন বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে থাকছেন, চাইলেই বের হতে পারছেন না, অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে ভুগছেন, সেক্ষেত্রে পুষ্টির গুণগত মান ও পরিমাণ অক্ষুণ্ণ রেখে পরিবারের আর্থিক সাশ্রয় যাতে হয়, সে লক্ষ্যে প্রতি বেলায় খাদ্য তালিকা নির্বাচনে কিছুটা কৌশলী হতে হবে।

ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট আপ তথা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে হলে সুষম খাবার গ্রহণ আবশ্যক। যারা নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন , তারা সুস্বাস্থ্য ও শক্তিশালী রোগ প্রতিরােধক ক্ষমতার অধিকারী হন । একই সাথে তাদের দুরারোগ্য ও সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কম থাকে । খেয়াল রাখতে হবে, এই সুষম খাদ্য তালিকায় যাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই থাকে এবং প্রোটিন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ডি, ই ছাড়াও কিছু খনিজ পদার্থ যেমন: জিংক, সেলেনিয়াম, আয়রন, আয়োডিন ইত্যাদির ঘাটতি না হয়। নিম্নোক্ত খাবারের তালিকাটি প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টিমান বজায় রাখার পাশাপাশি কিছুটা বৈচিত্র্য আনতেও সহায়তা করবে।

আমিষ: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বিচি জাতীয় খাবার।
শর্করা: ভাত, রুটি, আলু, ওটস, সুজি ইত্যাদি।
তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার:
মাছ, মাংস, ডিমের কুসুম, দুধ, ঘি, মাখন ইত্যাদিতে থাকে স্যাচুরেটেড চর্বি যা সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। বাদাম, সরিষার তেল, অলিভ তেল, বিচি জাতীয় খাবারে থাকে আনস্যাচুরেটেড চর্বি যা খুবই উপকারী।
তরকারি:
লাউ, পটল, ব্রকলি, পেঁপে, শিম, বাঁধাকপি, মিষ্টিকুমড়া, লতি, ডাটা, বরবটি, বেগুন, কাঁচা কলা, করলা, ঢেঁড়স।
শাক:
পালং শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, কলমি শাক, পাটশাক সহ যে কোন শাকে প্রচুর ভিটামিন এ, ই এবং এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
ফল:
কলা, আনারস, পেয়ারা, বরই, কাঁচা আম, জাম্বুরা, বেল, আতা, কমলা, লেবু, আমলকি, আপেল, মাল্টা, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, ই এবং এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
মশলা:
আদা, রসুন, কাঁচা হলুদ, দারুচিনি গুঁড়ো, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জিরা, কালোজিরা, কাঁচা মরিচ, আলু বোখরা ইত্যাদি যে কোন প্রকারে কাঁচা বা রান্নায় খাওয়া উপকারী।

এছাড়াও নিচের বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখা উচিত:

● ‘শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, খাদ্য আঁশ, আমিষ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে প্রতিদিন তাজা ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করুন।
● প্রতিদিন দুই কাপ ফল, আড়াই কাপ শাক- সবজি, ১৮০ গ্রাম শস্য , ১৬০ গ্রাম মাংস ও ডাল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন। লাল মাংস (গরু, ছাগলের মাংস) সপ্তাহে ১/২ বার ও হাঁস – মুরগির মাংস /ডিম সপ্তাহে ২ – ৩ বার খেওয়া যেতে পারে।
● তবে লাল মাংসের (গরু, ছাগলের মাংস) পরিবর্তে মুরগির মাংস ও মাছ গ্রহণ করা উত্তম
● দিনে ন্যূনতম দুই লিটার পানি পান করুন।
● পানি পান করা সর্বোত্তম ; তবে আপনি অন্যান্য পানীয় যেমন- লেবুর রস, চা-কফি গ্রহণ করতে পারেন। খেয়াল রাখুন যাতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবন না হয় এবং চিনিযুক্ত বা ঘনীভূত ফলের রস অথবা সিরাপ, কোমল পানীয় পরিহার করুন যেহেতু এসবই চিনিযুক্ত ।
● নাস্তা বা স্ন্যাকস হিসেবে চিনি , লবন ও চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে সবজি ও তাজা ফল বেছে নিন ।
● পুষ্টিকর শাক-সবজি গ্রহণ করুন। শাক-সবজি অতিরিক্ত রান্না করবেন না, এতে করে তাদের জরুরি পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
● টিনজাত খাবার ও শুকনাে সবজি বা ফল যাতে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি যোগ করা নেই সেগুলো ব্যবহার করুন
● পরিমার্জিত পরিমাণে চর্বি ও তেল সেবন করুন
● নাস্তা হিসেবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে তাজা ফল বেছে নিন
● পরিমিত লবণ ও চিনি গ্রহণ করুন। আপনার প্রতিদিনের লবণের পরিমাণ ৫ গ্রাম এরও কম (প্রায় ১ চা চামচ) সীমাবদ্ধ করুন এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন।
● জিংক এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
● প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
● প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং অতিরিক্ত স্ন্যাক্স বা ইচ্ছেমত খাবার পরিহার করুন।

গর্ভবতী মা এবং নবজাতকের যত্ন

সবসময় গর্ভবতী মা এবং নবজাতকের জন্যে চাই বিশেষ যত্ন, কিন্ত এই করোনা পরিস্থিতিতে মা এবং শিশুর প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে।

তাই নিম্নলিখিত ধাপগুলি মেনে চলা উচিত:

● সামাজিক দূরত্ব যথাযথভাবে মেনে চলা।
● হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষার নিয়ম মেনে চলা
● ডিম, দুধ, মাছ, মাংস (প্রাণী উৎস হতে প্রাপ্ত খাদ্য) যথাযথভাবে সিদ্ধ করা এবং সব ধরনের খাদ্য পরিপূর্ণ ভাবে ধোয়া।
● গর্ভবতী মায়ের যদি জ্বর এবং কাশি থাকে:
o মাস্ক পরিধান এবং সেল্ফ আইসোলেশনে যাওয়া উচিত
o উপসর্গ অনুসারে ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া এবং জলপট্টি ব্যবহার করা
● করোনা পজিটিভ হলে: প্রসূতি ইউনিটকে অবহিত করুন
● উপসর্গ বিহীন বা মৃদু উপসর্গ থাকলে ঘরে অবস্থান করুন, তীব্র উপসর্গ হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন
● দ্রুত হাসপাতালে গমন করুন যদি:
o তীব্র মাথাব্যথা
o চোখে ঝাপসা দেখা
o যোনিপথে রক্তপাত
o পেট ব্যথা, তীব্র জ্বর, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
● মা এবং স্বাস্থ্য কর্মী উভয়েরই মাস্ক এবং গ্লাভস পরিধান করা উচিত
● যে কোন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো যাবে কারণ বুকের দুধের উপকারিতা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে পরিবারের একজন সদস্য কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্য বিধি মেনে মায়ের বুকের দুধ আলাদা পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করে বাচ্চাকে খাওয়াবে।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ও কোভিড-১৯

এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে বা এতে সংক্রমিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে– এমন কোনো মায়ের বুকের দুধের মধ্যে সক্রিয় কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত করা যায়নি। সুতরাং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে অথবা এতে সংক্রমিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে– এমন মায়েদের বুকের দুধের মাধ্যমেও শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় না বললেই চলে।

কাজেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে বা এতে সংক্রমিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে– এমন নারীরা চাইলে তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে। তাদের উচিত হবে:

o সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া অথবা অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড রাব (হাত পরিষ্কারক) ব্যবহার করা, বিশেষ করে শিশুকে স্পর্শ করার আগে;
o শিশুকে খাওয়ানোর সময়সহ যে কোনোভাবে তার সংস্পর্শে আসার সময় মেডিকেল মাস্ক পরিধান করা;
o হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়া। তারপরে তাৎক্ষণিকভাবে টিস্যুটি ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলা এবং পুনরায় হাত ধোয়া।
o বিভিন্ন পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর নিয়মিত সেগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা।
o এমনকি যদি মায়েদের মেডিকেল মাস্ক নাও থাকে সেক্ষেত্রেও তাদের তালিকাভুক্ত সংক্রমণ রোধের অন্য সব পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া উচিত।

● গর্ভবতী মায়ের করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে শিশুর জন্মপূর্ববর্তী সময়ে হাসপাতালে না যাওয়াই শ্রেয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত আইসোলেশন কাল শেষ হয় ।
● যদি গর্ভবতী মায়ের এপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়ে যায় তবে প্রসূতি ইউনিটের সাথে কথা বলে পুনরায় এপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।
● বাচ্চার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ থাকলে তাকে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে ।
● করোনায় আক্রান্ত সন্দেহভাজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই বাসায় জন্মদান থেকে বিরত রাখতে হবে। গর্ভবতী মা আইসোলেশনে থাকা কালে যদি প্রসব বেদনা উঠে তবে প্রসূতি ইউনিটে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

সংক্রমণ ও সম্ভাব্য সংক্রমণের ক্ষেত্রে করণীয়

‘কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্র কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ।

আপনি কখন কোয়ারেন্টিন থাকবেন?

যখন আপনি নিজে সুস্থ আছেন কিন্তু কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির বা উপসর্গ (জ্বর সাথে কাশি বা শ্বাসকষ্ট আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে গত ১৪ দিনে এসেছিলেন। সংস্পর্শ মানে হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তির ১ মিটার বা ৩ ফুটের কাছাকাছি দূরত্বে ১৫ মিনিটের বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন। যেদিন থেকে সংস্পর্শে এসেছেন সেদিন থেকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিন থাকাকালীন আপনার জ্বরসহ অন্য কোন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই হটলাইনে চিকিৎসা সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন।

আপনি কখন আইসোলেশনে থাকবেন?

যখন আপনার কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে অথবা আপনার জ্বরের সাথে কাশি বা শ্বাসকষ্ট আছে, আপনার স্যাম্পল নেয়া হয়েছে এবং রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। যখন আপনি সেলফ আইসোলেশনে থাকবেন তখন আপনার সাথে একই বাড়িতে অথবা একই ঘরে যারা থাকেন তাঁদের প্রত্যেক সদস্য যাদের কোন উপসর্গ নেই তাঁদের কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে, যাদের কোন উপসর্গ আছে তাঁদেরও সেলফ আইসোলেশনে যেতে হবে এবং হটলাইনে চিকিৎসা সাহায্যের জন্য জানাতে হবে। আপনার উপসর্গ দেখা দেয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে হবে।

কোয়ারেন্টাইন:

কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে সেই সকল সুস্থ ব্যক্তিদের (যারা কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে) অন্য সুস্থ ব্যক্তি থেকে আলাদা রাখা হয়, তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং তারা ঐ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

আইসোলেশন:
আইসোলেশনের মাধ্যমে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের অন্য সুস্থ ব্যক্তি হতে আলাদা রাখা হয় ।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির আইসোলেশন এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গযুক্ত (জ্বর সাথে শুকনো কাশি বা শ্বাসকষ্ট) ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির কোয়ারেন্টিন থাকা। আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনা ভাইরাস যেন আক্রান্ত ব্যক্তি বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মাঝে না ছড়ায়। একজন মানুষ দিনের সর্বোচ্চ সময়টুকু যেহেতু তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সাথে কাটান একারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি সবার আগে তাঁর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবকে সংক্রমিত করতে পারেন। আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া মূলত পরিবারের সদস্যদের এবং অন্যান্য সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সংক্রমণ ঠেকাতে অতি জরুরি। একারণে সেলফ আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের নিয়মাবলী অনুসরণ করা সকলের জন্য অপরিহার্য। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং জীবাণুনাশকের ব্যবহার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

পার্থক্যঃ


কোয়ারেন্টাইন আইসোলেশন

‘কোয়ারেন্টাইন’-এর মাধ্যমে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে এমন সুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা রাখা হয় ও তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ‘আইসোলেশন’ -এর মাধ্যমে রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা রাখা হয়।

‘কোয়ারেন্টাইন’ -এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণাধীন সুস্থ ব্যক্তি ঐ নির্দিষ্ট সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় কিনা তা দেখা হয়। ‘আইসোলেশন’ -এর মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তি হতে সুস্থ ব্যক্তিরা যাতে আক্রান্ত না হয় এ জন্য অসুস্থ ব্যক্তিদের অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখা হয়।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয়

বাসায় সেল্ফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। যাদের বাসায় যত্ন নেওয়ার মানুষ নেই বা যাদের বাসায় অনেক মানুষ বসবাস করে বা অন্য কোন কারণে যাদের বাসায় আইসোলেশনে থাকা সম্ভব না তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাতে হবে।

● সম্ভব হলে একা একটি কক্ষে অবস্থান করুন। আক্রান্ত/সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি যার নির্দিষ্ট উপসর্গগুলো আছে তাঁর বা তাঁদের আলাদা কক্ষে অবস্থান করা সম্ভব না হলে, নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কক্ষের একটি নির্দিষ্ট কোণে অবস্থান করতে হবে। টয়লেট অথবা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঐ স্থান ত্যাগ করবেন না।
● পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এমন কক্ষে অবস্থান করুন। জানালা খোলা রাখুন।
● সর্বদা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
● বাড়িতে কোন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে বিরত থাকুন।
● পুনঃ পুনঃ ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করুন।
● হাঁচি–কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন অথবা নিজের কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি দিতে পারেন।
● সব সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
● জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গের জন্য প্যারাসিটামল ও উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
● কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন।
● মানসিক অবসাদ দূর করতে প্রিয়জনের সাথে টেলিফোনে কথা বলুন।
● উপসর্গ থেকে সুস্থ হবার পরেও উপসর্গ শুরু হওয়া থেকে মোট ১৪ দিন বাড়িতে আইসোলেশনে থাকুন।

পরিবারের অন্য সদস্যদের করণীয়

প্রতিবার সংক্রামিত অথবা সম্ভাব্য সংক্রামিত ব্যক্তির যত্ন এবং সেবা করবার পূর্বে পরিচর্যাকারী মাস্ক, গ্লাভ্‌স সম্ভব হলে গগলস, গাউন ব্যবহার করবেন। এসকল ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পূর্বে এবং পরে নিয়ম অনুযায়ী হাত ধোবেন এবং একবার ব্যবহার যোগ্য সামগ্রীগুলো কালো পলিথিন ব্যাগে মুখবন্ধ করে ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে অপসারণ করুন।

● বাড়িতে থাকুন।
● পরস্পর পরস্পরের থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
● খাবার/ওষুধ কিনতে বাইরে যাবেন না , অনলাইনে অর্ডার দিন অথবা বন্ধু স্বজনদের পৌঁছে দিতে বলুন
● বাড়িতে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে নিষেধ করুন।
● আলাদা ঘরে থাকার চেষ্টা করুন ।
● পর্যাপ্ত খাবার ও পানি ঘরে রাখুন।
● গরম পানি দিয়ে প্লেট ও কাপ ধুয়ে নিন।
● তোয়ালে, চাদর ইত্যাদি যার যার আলাদা রাখুন।
● কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন ।
● নিয়মিত ২০ সেকেণ্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
● যথাযথ জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন (মডিউল ৩ সেশন ৫ দেখুন)। জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে মেঝে পরিষ্কারের ক্ষেত্রে মেঝে এমনভাবে ভেজা থাকবে স্বাভাবিকভাবে ১০ মিনিটের মাঝে শুকায়।


● ব্যবহৃত টিস্যু এবং আবর্জনার ক্ষেত্রে:
○ ব্যবহৃত টিস্যু ও ধোয়ামোছার ন্যাকড়া পলিথিন ব্যাগে রেখে নিরাপদে মুখ বন্ধ রাখুন।
○ সেগুলো বাইরের ময়লা ফেলার পাত্রে রাখার আগে ৩ দিন অপেক্ষা করুন।
○ অন্যান্য গৃহস্থালি বর্জ্য স্বাভাবিক ভাবে নিষ্পত্তি করুন।
● কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেঃ
○ স্বাভাবিক উপায়ে ধুয়ে নিন।
○ কোন অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা কাপড়-চোপড় একই সাথে ধুবেন না।
○ বাড়ির সদস্যদের নোংরা কাপড়-চোপড় বাইরে শুকাতে যাবেন না, কারণ এটি বাতাসে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।

● একই সময়ে রান্নাঘর বা বাথরুমের মত স্থানগুলো ব্যবহার করবেন না। এ সকল জায়গাগুলিতে জানালা খোলা রাখুন।
● বাথরুম ব্যবহার করার পরেই যেসব জায়গা বেশি স্পর্শ করা হয় সে স্থানসমূহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করেন।।
● থালা-বাসন ধোওয়ার সময় জীবাণুনাশক ও গরম পানি ব্যবহার করুন এবং তা শুকাতে দিন।
● একই বিছানা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
● একই হাত তোয়ালে সকলে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
● ‘বাড়িতে থার্মোমিটার, মাস্ক, জীবনুনাশক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করুন ।
● পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সক্রিয়ভাবে নিরীক্ষণ করুন ।
● প্রতি সকালে ওবং সন্ধ্যায় তাপমাত্রা পরিমাপ করা ভালো
● ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহের জন্য দিনে ২/৩ বার ২০ – ৩০ মিনিট জানালা খোলা রেখে বাড়ির বায়ু চলাচল উন্নত রাখুন ।
● হাঁস ও মুরগির ডিম খাওয়ার আগে সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করুন
● বেড়াতে যাওয়া , দাওয়াত ও আড্ডা থেকে বিরত থাকুন ।
● আপনি যদি মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকেন তবে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন , কোরেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সাথে থাকার সময় পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্তকরণের দিকে মনোযোগ রাখুন । ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করুন ।
● আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ রাখুন।
● প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় করে ঘরের কাজ, চিত্তবিনোদন, উপাসনা, পড়াশোনা, শরীরচর্চার ইত্যাদিতে পরিবারের সকলে মিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অংশ নিন।

এপার্টমেন্ট ভবনে থাকা কেয়ারটেকারদের জন্য:

● বারবার সংস্পর্শে আসা হাতল কিংবা বহুত ব্যবহৃত সুবিধাসমূহ যেমন লিফট ও কমন টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ।

● বাইরের অতিথি ও অন্যান্য মেইন্টেনেন্স কর্মীকে আসার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করতে হবে ।

● বাইরে থেকে অতিথি বা যেই আসুক তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং আসার তারিখ লিপিবদ্ধ করতে হবে ।

যে বাড়িতে কোন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি সেলফ আইসোলেশনে থাকবেন সে বাড়ির সুস্থ সদস্যদের বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা একান্তভাবে জরুরি।

যে বাড়িতে কোন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন সে বাড়ির সুস্থ সদস্যরা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। পরিবারের মাত্র একজন সদস্য খাদ্য কেনার মত অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারবেন।

বাজার করতে বা কাজ করার জন্য সারাদিনের জন্য বাড়ির বাইরে থাকা মানে অনেক লোকের সংস্পর্শে আসা। দুর্ঘটনাবশত পরিবারের একজন সদস্যও যদি করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন তা থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুরক্ষার জন্য বাড়িতে প্রবেশের সময় তাঁকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিয়মিত বাজারে যেতে হয় বা বাড়ির বাইরে কাজ করেন এমন ব্যক্তির করণীয়ঃ

● বাইরে হবার সময়, ফিরে এসে পরার জন্য পরিষ্কার কাপড় এবং স্যান্ডেলের একটি সেট প্রস্তুত করুন। বাড়ি থেকে বের হবার পূর্বে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।


● বাড়ির বাইরে করণীয় কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করুন, যেমনঃ বাজার করার ক্ষেত্রে, একটি ক্রয় তালিকা সাথে নিন এবং অযথা সময় নষ্ট করবেন না। ব্যবহারের পূর্বে সাবান-পানি অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আপনার কেনা বস্তুসামগ্রীর মোড়ক মুছে নিতে পারেন। শাক-সবজি, তাজা ফল, মাছ মাংস ইত্যাদি পানিতে আধ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে পানি ফেলে দিয়ে অথবা দীর্ঘসময় ধরে পানিতে ধুয়ে নিলে খাওয়া বা রান্নার উপযোগী হবে। মনে রাখবেন, মাংসে, ডিম ও দুধের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না।

● বাড়িতে পৌঁছানোর সময়ঃ বাড়ির বাইরে যদি পানির কল থাকে তবে কলে পা, জুতো হাত এবং মুখ ধুয়ে নিন। জুতো বাইরে রেখে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে ভেতরে প্রবেশ করুন।

● বাড়ি প্রবেশের পরঃ আপনার মোবাইল ফোনটি অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে মুছে নিন এবং পরিষ্কার কোথাও সরিয়ে রাখুন। অবিলম্বে বাথরুমে চলে যান, সমস্ত পোশাক ছেড়ে একটি বালতিতে রাখুন। সাবান ও পানি দিয়ে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন। বালতিতে নোংরা কাপড় সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

● বাড়িতে শুকনো এবং পরিষ্কার কাপড় পরুন। একই তোয়ালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

● বাড়িতে প্রবেশের পর ব্যবহৃত পরিষ্কার কাপড় ঝুলিয়ে রাখুন, সম্ভব হলে তা রোদে শুকিয়ে দিন।

ঘরোয়া চিকিৎসা

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত সকল ব্যক্তির হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। অধিকাংশ ব্যক্তি বাড়িতে উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে এবং যথাযথ সেবা যত্ন পেলে সাধারণত ১৪ দিনের মাঝে সেরে উঠে। তবে স্বল্প সংখ্যক রোগী যাদের শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য উপসর্গ থাকে তাঁদের অক্সিজেন এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হয়।

বাসায় রেখে কাদের চিকিৎসা করা যাবে:

● মৃদু অসুস্থতা:


যেটাকে আমরা সাধারণ ঠাণ্ডা কাশি হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম, তার উপসর্গ গুলো হচ্ছে – জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, নাক বন্ধ হয়ে থাকা- এগুলোর ভেতর একটি বা তার বেশি উপসর্গ।
রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে এবং হাসপাতালে রোগীদের চাপ কমাতে এ ধরনের রোগীরা বাসায় থাকবেন এবং বিভিন্ন সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত টেলিমেডিসিন বা টেলিফোনের মাধ্যমে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিবেন।

● মাঝারি অসুস্থতা:

নিউমোনিয়া জাতীয় অসুখ যেখানে মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর, শুকনো কাশি এবং যাদের অতিরিক্ত অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন নেই তারা মাঝারি অসুস্থতার পর্যায়ে পড়েন।
তাদের ক্ষেত্রেও মৃদু অসুস্থ রোগীদের মতই বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক যোগ করতে হবে।

কখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে:

তবে যদি তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় অথবা কাশি, জ্বর বাড়তে থাকে অথবা অতিরিক্ত দুর্বল লাগে তবে দ্রুত করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্মুখ যোদ্ধা হচ্ছেন ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি যিনি নিজের শরীরে ভাইরাসকে বন্দী রেখে তিনি তাঁর পরিবার, সমাজ তথা সমগ্র বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাঁর পরিবার এই ভাইরাস সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে এবং নিয়মগুলো মেনে চললেই কেবলমাত্র আমরা আমাদের প্রিয় স্বদেশ এবং দেশের মানুষকে সুস্থ রাখতে পারবো।


তথ্য সূত্রঃ মুক্তপাঠ লার্ণিং সেসন।