ঈদুল ফিতরের নামাজ

ঈদুল ফিতরের নামাজ

ঈদের নামাজ ওয়াজিব।

ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। যেমন ঈদের দুই রাকাত নামাজের কোনো আজান, ইকামত নেই। এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির রয়েছে। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম।

শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে।

সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধ হাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাকি থাকে।

ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত; যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সাদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে শহরের অন্য কোনো জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করা।

পরিশেষে যদি নামাজ ছুটেই যায় তাহলে এর কোনো কাজা নেই।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত

ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবী নিয়ত:

নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ঈদিল্‌ ফিত্‌রি মা’আ সিত্তাতি তাক্‌বীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা ইক্‌তাদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

ঈদুল ফিতরের নামাজের বাংলা নিয়ত:

আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র (সন্তুষ্টির) জন্য অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের দুই রাকআত ওয়াজিব নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

ঈদের নামাজ আদায়ের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়মগুলো হলো:

১. প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধতে হবে। তারপর ছানা পাঠ করতে হয় ;

২. তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলতে হবে। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলতে হবে;

৩. তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন;

৪. তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে;

৫. দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দিবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত ওঠাতে হবে এবং ছেড়ে দিতে হবে। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যেতে হবে;

৬. তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করতে হবে;

৭. নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা পাঠ করবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না;

৮. খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।

ঈদের নামাজ আদায়ের জায়গা

ঈদের নামাজ মসজিদে নয় বরং মাঠে পড়া সুন্নত। প্রয়োজনে যদি মসজিদে পড়া হয় তবে কোনো সমস্যা হবে না।

ঈদের নামাজের মুস্তাহাবসমূহ

১. ইমাম ব্যতীত অন্যান্য মুসুল্লীরা সকাল সকাল ঈদগাহে আসবে এবং প্রথম কাতারের দিকে আগাবে;

২. যদি সম্ভব হয় তাহলে পায়ে হেঁটে এক পথে যাবে এবং অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবির রাযি. বর্ণনা করে বলেন, “ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার রাস্তায় পার্থক্য করতেন”।[বর্ণনায় বুখারী]

৩. ঈদুল ফিতরের নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া (তিনটি অথবা পাঁচটি)। [আর ঈদুল আযহায় নামাজ থেকে ফিরে আসার পূর্বে কিছু না খাওয়া];

ঈদুল ফিতরের নামাজ দেরিতে আদায় করা মুস্তাহাব; যাতে মানুষ সদকায়ে ফিতর আদায় করতে ও হকদারদের কাছে তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামাজ সকাল-সকাল আদায় করা মুস্তাহাব|

ঈদের আহকাম

১. ঈদগাহে, ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে, নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। কিন্তু যদি ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করা হয়, তাহলে মসজিদে প্রবেশের সময় তাহিয়াতু মসজিদ পড়া শুদ্ধ রয়েছে;

২. যে ব্যক্তির ঈদের নামাজ পুরোটা বা অংশত ছুটে গেল তার জন্য সুন্নত হলো ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অবলম্বন করে তা কাযা করে নেয়া। অর্থাৎ অতিরিক্ত তাকবীরসহ দু রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করা। যে অংশ ছুটে গেল সে অংশও ঈদের নামাজের আদায় পদ্ধতি অনুসরণ করে আদায় করে পূর্ণ করে নেয়া;

৩. রমজান শেষে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের উপর তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার বিধান রেখেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

(شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ )

{আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর।}

[সূরা আল বাকারা:১৮৫];

৪. উক্ত আয়াতে “তুকাব্বিরুল্লাহা” এর অর্থ তোমরা যেন তোমাদের হৃদয় থেকে এবং জিহ্বা দিয়ে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করো। নিম্নবর্ণিত শব্দমালা দ্বারা ঈদের মুহূর্তে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা তথা তাকবীর দিতে হয়:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد;

৫. পুরুষদের জন্য উঁচু আওয়াজে তাকবীর দেয়া সুন্নত। আর নারীরা দেবে গোপনে। কেননা নারীদেরকে আওয়াজ নিচু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে;

৬. তাকবীর শুরু হবে ঈদের রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর থেকে তাকবীর শুরু হবে যদি পরদিন ঈদ হবে বলে সূর্যাস্তের পূর্বেই নিশ্চিত হওয়া যায়, যেমন রমজান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হয়ে গেল অথবা ঈদের চাঁদ উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল।

কিছু দিকনির্দেশনা

১. ঈদের সময় মুসলমানদের মাঝে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় মুস্তাহাব;

২. ঈদে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও মুসলিম ভাইকে শুভেচ্ছা বিনিময়ও মুস্তাহাব;

৩. ঈদ একটি সুযোগ, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং যাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়ার সর্বোত্তম সময়;

৪. ঈদে কবর যিয়ারত করা শরীয়তসম্মত নয়। ঈদের আনন্দের সাথে, তা বরং সাংঘর্ষিক।

ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার ও কাপড় চোপড় ও বৈধ বিনোদনের ব্যবস্থা করা জায়েয। ঈদ হলো খুশি-আনন্দের উপলক্ষ। আল্লাহ তাআলা আনন্দ প্রকাশকে নিষিদ্ধ করেননি। ইরশাদ হয়েছে:

( قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨ )

{বল, “আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়”। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।} [সূরা ইউনুস:৫৮]

সূত্র:

– Web of Al-feqh;

– Ahkamey Zindegi;

– Web of Islamqabd;