রেভল্যুশন ইংরেজী শব্দ। যার বাংলা হল বিপ্লব। বিপ্লব হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে একটি মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন যা তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে ঘটে, যখন জনগণ চলমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জেগে উঠে। সহজ ভাষায় বিপ্লব হল খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বব্যাপী বিশাল পরিবর্তন, যে পরিবর্তন রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতি/প্রযুক্তি – তিনটিকেই স্পর্শ করে এবং যে পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবে হতে হয়তো দীর্ঘ সময় লাগত। অন্যদিকে দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগত মানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয়, তাকেই সাধারণভাবে ‘শিল্প বিপ্লব’ বলা হয়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সমাজতন্ত্রী নেতা লুই অগাস্তে ব্ল্যাঙ্কি শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।
বিশ্ব অর্থনীতির সর্বাধিক উন্নয়ন ঘটেছে শিল্পবিপ্লবের ফলে। বর্তমান বিশ্বও শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর টিকে আছে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত তিনটি শিল্প বিপ্লব ঘটেছে যা বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ধারাকে।
প্রথম শিল্প বিপ্লব:
প্রথম শিল্প বিপ্লবটি সংগঠিত হয়েছিল ১৭৬০ সালে পানি ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের কৌশল আবিষ্কারের মাধ্যমে। যা উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটায়। এর মূল প্রভাবক ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং ফলাফল ছিল উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণ। এই শিল্প বিপ্লব অর্থনীতি ও সমাজকে বদলে দেয় নাই, তবে তার গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসে ধীরে ধীরে। দ্রুত বাষ্পীয় ইঞ্জিন ভিত্তিক রেলপথ ও জাহাজের আবির্ভাব ঘটে ফলশ্রুতিতে ক্রমশই বিশ্ব ছোট হয়ে আসে।
দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব:
দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব সংগঠিত হয় ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে যা মানুষের জীবন ধারার পরিবর্তন ঘটায় এবং এর মাধ্যমে উৎপাদন শিল্পে আমূল পরিবর্তন সংঘটিত হয়। এর মূল প্রভাবক ছিল বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার এবং ফলাফল ছিল উৎপাদন শিল্পের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। শারীরিক শ্রমের ব্যবহার কমতে থাকে দ্রুততর গতিতে। কালের পরিক্রমায় বিদ্যুৎ চালিকাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং শিল্পের সাধারণ চালিকাশক্তি হিসাবে বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে প্রতিস্থাপন করে। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবে নতুন আরও কিছু প্রযুক্তির অংশ ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রাসায়নিক শিল্পের উদ্ভব এবং প্লাস্টিক, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদির উৎপাদন সূচনা ও প্রসার লাভ।
তৃতীয় শিল্প বিপ্লব:
তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়কাল ধরা হয় ১৯৬৯ সাল থেকে, এই বিপ্লবের সাথে জড়িত মূল প্রযুক্তি হল কম্পিউটার, যার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে ইন্টারনেট উদ্ভাবনের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের আগমনে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হয় এবং সারা বিশ্বের গতি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ সময় তৃতীয় যে প্রযুক্তির উদ্ভব হয়েছে তা হল মোবাইল ফোন। এরপর মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ ঘটানো হয় ইন্টারনেটের এবং এটা সম্ভব হয়েছে স্মার্ট মোবাইল ফোনের আবির্ভাবের ফলে। মোবাইল ফোন একটি ক্ষুদ্র কম্পিউটার হিসাবেও দৈনন্দিন কাজ করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। সে জন্য কম্পিউটারভিত্তিক শিল্প বিপ্লবকে অনেক সময় ‘ডিজিটাল বিপ্লব’ বলেও অভিহিত করা হয়। এ শিল্পবিপ্লবগুলো বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিধারা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল নিয়ামক হিসাবে কাজ করছে প্রযুক্তি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষতা, চিন্তাশক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি। বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আলোচনায় আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ত্রিমাত্রিক মূদ্রণ, ব্লক চেইন প্রযুক্তি, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান ‘ক্লাউস সোয়াব’ ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি ব্যবহার করেন তাঁর ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’ নামক বইয়ে। ক্লাউস সোয়াব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে নিজের লেখা প্রবন্ধে বলেছেন, “আমরা চাই বা না চাই, এত দিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা যেভাবে চলেছে, সেটা বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।” চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জনক বলা হয় ক্লাউস সোয়াব (Klaus Schwab) কে। তার ভাষ্যমতে অন্যান্য শিল্প বিপ্লবের সাথে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব শুধুমাত্র মানুষের শারীরিক পরিশ্রমকে প্রতিস্থাপন করেছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক পরিশ্রমকেও প্রতিস্থাপন করবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংশ্লিস্ট উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রভাববিস্তারকারী উদ্ভাবন বা প্রযুক্তিগুলো হলো: ক) রোবট; খ) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; গ) চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন; ঘ) ড্রোন; ঙ) ভার্চূয়াল রিয়েলিটি বা কল্প বাস্তবতা; চ) অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা বর্ধিত বাস্তবতা; ছ) ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ; জ) ইন্টারনেট অব থিংস; ঝ) ব্লক চেইন প্রযুক্তি; ঞ) ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সামগ্রিক প্রভাব আমাদের জীবনে কতটা বিস্তৃত এবং গভীর হতে যাচ্ছে তা আমরা খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারি যদি এর উদ্ভাবনগুলো পর্যবেক্ষণ করি। যেমন-
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাকে মেশিন ইন্টেলিজেন্সও বলা হয়। কম্পিউটার সায়েন্সের উৎকৃষ্টতম উদাহরণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রধানত যে চারটি কাজ করে তা হল- কথা শুনে চিনতে পারা, নতুন জিনিস শেখা, পরিকল্পনা করা এবং সমস্যার সমাধান করা। মূলত এইসব সুবিধাই যখন বিভিন্ন বস্তুতে যোগ করা হয় তখনই সেটা হয় ইন্টারনেট অব থিংস। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার ইতিমধ্যে প্রায় সকল স্মার্টফোনেই ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন- সুন্দর সেলফি তুলতে, গ্রাহকের অভ্যাস এবং প্রয়োজনীয়তা মনে রেখে কাস্টমাইজড সেবা দিতে। ধারণা করা হচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন, পণ্য উৎপাদন এবং ট্রান্সপোর্টেশনে আমূল পরিবর্তন চলে আসবে। মানুষের হাত ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত হবে এসব খাত।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে উৎকর্ষ সাধন তথা সুস্থতায় বংশগত রোগ কমাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি জটিল রোগের প্রতিষেধক এবং সুস্থ্য জিন এর আগমন ঘটাবে। পাশাপাশি স্পর্শকাতর অস্ত্রোপচার করতে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হবে এই বিপ্লবে।
ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ বা থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সূচনা হবে যা যে কোন বস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রতিলিপি বা রেপ্লিকা তৈরি করতে সক্ষম হবে। এমনকি কিডনি থেকে শুরু করে কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন, শিল্পকর্মের প্রতিরূপ তৈরি ইত্যাদি কাজে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার আগামী কয়েক দশকে মানব জীবনযাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন নিশ্চিত করবে বলে অনুমেয়।
ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি, যার বাংলা অর্থ বিভিন্ন বস্তুর সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ। চারপাশের সবকিছু যখন নিজেদের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, সেটাই হবে ইন্টারনেট অব থিংস। ইতিমধ্যে গুগল হোম, অ্যামাজনের আলেক্সার কথা শুনেছি, যা ঘরের বাতি, সাউন্ড সিস্টেম, দরজা, পরিচিতি নিশ্চিতকরণ, শিডিউল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ করা, গাড়ী চালানো, ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ, অফিস সজ্জা, সময়মত অ্যালার্ম দেয়াসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এমন একটি প্রযুক্তি যা তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষিত থাকবে। এটি হবে একটি অপরিবর্তনীয় ডিজিটাল কার্যক্রম। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোন কার্য-পরিচালনা রেকর্ড করা যাবে। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত বিটকয়েন সফটওয়্যার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ব্লকচেইন প্রযুক্তির অনেক বিবর্তন ঘটে চলেছে। তথ্যকে ডিজিটালরূপে বণ্টন করে এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি এক নতুন ধরনের ইন্টারনেট সৃষ্টি করেছে। কেবল ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের জন্য ব্লকচেইনের উদ্ভাবন করা হলেও এখন প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিকেন্দ্রিত হওয়ায় অনেক অনুক্রমিক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন সম্ভব, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে বয়স্ক ভাতা কিংবা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বা উপবৃত্তির মত লেনদেন যুগপৎভাবে করা যাবে এমনকি ভূমি নিবন্ধন রেকর্ডকে সকলের জন্য অধিকতর সহজলভ্য করা যাবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি যূগান্তকারী প্রযুক্তি, যা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ওপর চাপ হ্রাস করবে। যে কোন স্টোরেজ, সফটওয়্যার এবং যাবতীয় অপারেটিং সিস্টেমের কাজ চলে যাবে হার্ডডিস্কের বাইরে বা ক্লাউড সার্ভারে। শুধু ইন্টারনেট থাকলেই ক্লাউড সার্ভারে সংযোগ স্থাপনপূর্বক সকল সুবিধা উপভোগ করা যাবে। কম্পিউটার হার্ডডিস্কের যান্ত্রিক বিভ্রাট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ক্লাউড সার্ভারে সে সুযোগ নাই। যেমন গুগল ফটোস, জি-মেইল ইত্যাদি কোন কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে থাকে না বরং গুগল সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। আর সেগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এটিই হচ্ছে ক্লাউড কমপিউটিং। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের কাজগুলো যে কোন স্থানে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায় এবং কম্পিউটিংয়ের সফটওয়্যারগুলো আপডেট করার প্রয়োজন হয় না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা সম্পাদিত হয়ে থাকে।
রোবটিকস দূর নিরাপত্তা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম, কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালি কাজ করতে সক্ষম। রোবটিকস অটোমেশন বলতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সকল মেশিন এমন একটি সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকবে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান এবং সমাপ্ত করবে। ফলশ্রুতিতে কায়িক শ্রম হ্রাসের পাশাপাশি আর্থিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে সংকোচন করবে উপরন্ত মনুষ্য সৃষ্ট বিভ্রাট কমাতে সহায়ক হবে।
ড্রোন হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি যা আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল বা সংক্ষেপে ইউএভি নামে পরিচিত। হেলিকপ্টার বা এ জাতীয় অন্যান্য উড্ডয়ন যানের সাথে ড্রোনের মূল পার্থক্য হচ্ছে, হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য মানুষের প্রয়োজন হয় কিন্তু ড্রোন পরিচালনার জন্য সরাসরি কোন মানুষের প্রয়োজন হয় না। দূর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার মাধ্যমে বা পূর্ব থেকেই সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রোন পরিচালনা সম্ভব। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের ছবি তোলা, গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পাদন, পণ্য পরিবহন, যোগাযোগ সাধন, তথ্য প্রেরণসহ নানাবিধ কাজে গতিশীলতার সাথে ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে।
কল্পবাস্তবতা বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অর্থ বাস্তবে অস্তিত্ব নাই কিন্তু বাস্তবের অনুভূতি উদ্রেককারী বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পনা বা অনুভব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম যা ত্রিমাত্রিক অববয়ব তৈরির মাধ্যমে মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি করতে পারে এমন পদ্ধতি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় টাইটানিক, জুরাসিক পার্ক, মোয়ানা এর মত উল্লেযোগ্য থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র কিংবা ভার্চূয়াল ড্রাইভিং শিখন এ পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ।
উদ্দীপ্ত বাস্তবতা বা বর্ধিত বাস্তবতা বা অগমেন্টেড রিয়েলিটিএমন একটি প্রযুক্তি যা বাস্তব জগতের এক বর্ধিত সংস্করণ। এটি বাস্তব বিশ্বের পরিবেশের একটি উদ্দীপিত অভিজ্ঞতা যেখানে বাস্তব-জগতে থাকা বস্তু ও পরিবেশ কম্পিউটার উৎপাদিত উপলব্ধি দ্বারা বর্ধিত হয়, কখনও কখনও দৃশ্যমান, শ্রুতি, স্পর্শ সহ একাধিক সংবেদনশীল রূপগুলি জুড়ে থাকে। দৃশ্যমান উপাদান, শব্দ বা অন্যান্য সংবেদনশীল উদ্দীপনা ব্যবহারের মাধ্যমে অগমেন্টেড রিয়েলিটি হল আসল শারীরিক বিশ্বের এক উন্নত সংস্করণ। কল্পবাস্তবতা বা ভার্চূয়াল রিয়েলিটির সাথে পার্থক্য হল যে, এ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী এমন অনুভূতি পায় যেন সে নিজেই শারীরিকভাবে উপস্থিত আছেন। এমনকি এ পদ্ধতি রাস্তায় জ্যাম থাকলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে শর্টকাট পথের নেভিগেশন কিংবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্মার্টফোনটি পাশের বিল্ডিংগুলো ট্যাগ করে জানিয়ে দিচ্ছে তার পরিচিতি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণের জন্য যেসকল কর্মদক্ষতার প্রয়োজন:
১। প্রভলেম সলভিং দক্ষতা;
২। ক্রিটিক্যাল থিংকিং;
৩। ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা;
৪। পিপল ম্যানেজমেন্ট বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট;
৫। কোওরডিনেটিং (প্লানিং, সাংগঠনিক দক্ষতা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি);
৬। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা;
৭। জাজমেন্ট ও ডিসিশন মেকিং (বিচারিক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, এখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেই বিবেচনা করা হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দক্ষতা হিসাবে);
৮। সার্ভিস ওরিয়েন্টেশন;
৯। বিতর্ক ও উপস্থাপন দক্ষতা;
১০। কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি, ইত্যাদি।
বিশ্বে প্রতিনয়তই প্রযুক্তিনির্ভরতার যে ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে তার জন্য কোনভাবেই প্রযুক্তি দায়ী নয়। মানুষ নিজেই প্রযুক্তিকে আহ্বান করছে নাগরিক হিসেবে, ভোক্তা হিসেবে কিংবা বিনিয়োগকারী হিসেবে। তাই মানব জাতির সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বিপ্লবকে এমন একটা রূপ দিতে হবে যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি না হয়ে মানবসভ্যতার উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হবে। সে লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী যে উন্নয়ন ঘটছে তা একীভূত করে একটি কমন প্ল্যাটফর্মে আনতে হবে যাতে প্রযুক্তি কোন নির্দিষ্ট জাতি বা কোম্পানির একক দখলদারি সম্পদে পরিণত না হয়। মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে এগোতে হবে, তাহলেই ডিজিটাল প্রযুক্তির এই বিপ্লবের স্বার্থকতা লাভ করবে এবং মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
তথ্যসূত্র:
The Fourth Industrial Revolution, Book by Klaus Schwab
https://m.somewhereinblog.net/
https://www.banglatribune.com/