©মোঃ আবদুর রহমান মিঞা (’শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পদকপ্রাপ্ত)
ছোট শিশুরা স্বভাবতই কৌতূহলী হয়। ছোটবেলা থেকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এমনকি তারুণ্যেও সন্তান তার অজ্ঞতার কারণে ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে। বিষয়টি বিচেনায় নিয়ে সন্তানের নিরাপদ এবং সুস্থ জীবনের জন্য তথা নৈতিকতার অবক্ষয় রোধকল্পে জীবনের প্রতিটি ধাপে বা স্তরে সন্তানকে সঠিক যৌন শিক্ষা দেওয়া অত্যান্ত জরুরি। বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে কোন সন্তানই না বুঝে কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে আপত্তিকর বা বিব্রতকর কোনো ভুলে জড়িয়ে পড়বে না।
শিশুকে যৌনশিক্ষা দেয়ার অর্থ কেবল এটা নয় যে, শারীরিক বিকাশ সাধন ও বাচ্চা তৈরির প্রক্রিয়া বোঝানো। এর গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি অংশ হলো, শরীরে খারাপ স্পর্শ বা ভালো স্পর্শ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা। অর্থাৎ শারীরিক স্পর্শের সীমা সম্পর্কে সুশিক্ষিত করে তোলা। পাশাপাশি কে শরীর স্পর্শ করতে পারবেন এবং কে পারবেন না তা সম্পর্কে অবহিতকরণ।
ছোট বেলায়ই শিশুকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঠিক নাম শেখানো উচিত। শরীরের কোন অঙ্গগুলো নেহায়েতই ব্যক্তিগত এবং এগুলো কাউকে স্পর্শ করতে দেয়া যাবে না সে বিষয়টি ভালোভাবে শিখিয়ে দিতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই শেখাতে হবে যে তার নিজের এই অঙ্গগুলো যেমন কেউ স্পর্শ করার অধিকার রাখে না তেমন অন্যেরও একই অঙ্গগুলো সে ও স্পর্শ করার অধিকার রাখে না। বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে যৌনতা নিয়ে কথা বলাটাকে খুবই অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর মনে করেন। ফলশ্রুতিতে সন্তানকে যৌন শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকেন অধিকাংশ বাবা-মায়েরাই। কিন্তু সন্তানের সুন্দর এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্যই যৌনতার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সন্তানের সামনে তুলে ধরা শুধু উচিতই নয় বরং সময়ের দাবী।
কিন্তু কিভাবে?
অনেক সময় শিশুদের মনে কৌতূহল জাগে যে কিভাবে সন্তান জন্ম নেয় অথবা স্বাভাবিকভাবেই আপনার শিশু কোনো গর্ভবতী নারীর দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন তুলতে পারে, ‘এই মহিলার পেটে বাচ্চা ঢুকলো কীভাবে?’ এরকম প্রশ্নের জবাবে মনগড়া কিছু একটা বলে দেওয়াটা বাবা-মা ভালো মনে করতে পারেন। কারণ তাঁরা হয়ত ভাবছেন যে, স্কুলে যাওয়ার বয়স যেহেতু হয় নাই তাই এখনই শিশুকে যৌনশিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন নাই। কিন্তু গবেষকদের মতে- শিশুকে ডায়াপার পরার বয়স থেকেই যৌনশিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌনশিক্ষা বিষয়ক সংস্থা আনসার এর কার্যনির্বাহী পরিচালক ড্যান রাইস বলেন, ‘শিশু বয়স থেকেই যৌন শিক্ষার সূচনা হওয়া উচিত। বিকাশসাধনের শুরু থেকে শিশুরা সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে এবং তাদের শরীর হলো এসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’ বিধায় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাশ না কাটিয়ে বরং সুন্দরভাবে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কোনো ভুল ধারণা দেয়া বা হাসপাতালের দোকান থেকে ক্রয় করা কিংবা কোন রূপকথার গল্প বলা ঠিক হবে না সন্তানকে। অস্বস্তি পরিহারপূর্বক স্বাভাবিকভাবে তারা সন্তানকে বুঝাতে পারেন যে নারী এবং পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদের ভালোবাসার ফসল হিসেবে সন্তান জন্ম নেয়। কম বয়সী শিশুকে এটুকু বোঝালেই সে সন্তুষ্ট থাকবে। কৈশোরে হয়ত এটুকু জবাবই যথেষ্ঠ হবে না, সেক্ষেত্রে বয়সভেদে উত্তর প্রদান বাঞ্চনীয়। বয়সভেদে কখন কি শেখাতে হবে সে বিষয়টিও আলোচনায় নিয়ে আসব আমার এ ধারাবাহিক উপস্থাপনায়।
সমাজে বা পরিবারে যৌন নিপীড়ন বা যৌন হয়রানি কিংবা ধর্ষণ এর মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা পরিহারে বা দূরীকরণে সন্তানকে শিখিয়ে দিতে হবে যে, আপত্তিকর যে কোনো পরিস্থিতির কথা ভয়ে লুকিয়ে না রেখে বা গোপন না করে বাবা-মা কে অবিলম্বে জানাতে। সাথে এটাও জানিয়ে দিতে হবে যে কোন স্পর্শে যদি সন্তান কোনো ধরনের ব্যাথা নাও পায় তবুও যেন তা বাবা-মা বা অভিভাবককে জানিয়ে দেয় সাথে সাথেই।
সন্তান কৈশোরে পদার্পণ করলে তার অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। বয়ঃসন্ধিকালের এসকল পরিবর্তনের কথা সন্তানকে বাবা-মা’ই জানিয়ে দিবেন এবং এটাই যে স্বাভাবিক তাও সন্তানকে অবগত করতে হবে। এ পরিবর্তনের সময়টা যেহেতু স্পর্শকাতর সেহেতু তাদেরকে জানাতে হবে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনার বিষয়ে। অনিয়ন্ত্রিত ও অনাকাঙ্খিত যৌন জীবনের নেতিবাচক ও অনৈতিক দিক, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ এবং গর্ভপাতের বিষয়েও শিক্ষা দিতে হবে সন্তানকে এই কৈশোরকালে। সন্তানকে জানানো উচিত যে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন বয়সে বয়ঃসন্ধি অর্জন করতে পারে এটা সৃষ্টিকর্তার প্রাকৃতিক নিয়ম। বয়ঃসন্ধি অর্জনে যে সকল পরিবর্তন আসে তা বোধগম্য ভাষায় সঠিক শব্দ চয়নে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। মাসিক চক্র একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাভাবিক বিষয় যা প্রতিটি বাবা-মা কে তাদের সন্তানের কাছে ব্যাখ্যা করা উচিত। বাচ্চাকে জানান যে এটা একটি মাসিক চক্র যা একবার কোনও মেয়ে বয়ঃসন্ধির বয়স লাভের পরে শুরু হয় এবং যোনিপথে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণকালে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে এ রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়ে পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা জরুরি, উপরন্তু এসময়ে পেটের নিচে বা পেটে বা শরীরে শারীরিক অস্বস্তিতা অনভূত হতে পারে। এ সময় সাবধানতা অবলম্বন না করা হলে, তাকে যৌন সংক্রমণজনিত অসুস্থতা এবং এর সাথে যুক্ত অযাচিত গর্ভধারণের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং বিপদগুলি সুন্দর ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে ভোলা যাবে না।
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য যৌনশিক্ষা এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা তাদের সাধারণ শিক্ষারই অংশ কেননা এটি তাদের ব্যক্তিত্বকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই এটির শুরু হওয়া প্রয়োজন নিজ বাড়িতেই অর্থাৎ বাবা-মা এর নিকট থেকে। পারিবারিকভাবে এ শিক্ষা পেলে সন্তান একদিকে যেমন তার নিজের বিষয়ে সচেতন থাকবে তেমন নৈতিক স্খলনকে দূরে রেখে উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রদত্ত সঠিক ও যথাযথ যৌন শিক্ষা দূর করতে পারে সমাজের এ সংশ্লেষে ঘটিত অনাকাঙ্খিত অপরাধসমূহকে নিশ্চিত করতে পারে সুস্থ্য সমাজ ব্যবস্থাকে। সর্বোপরি ছেলে-মেয়ের একে অপরের প্রতি বৃদ্ধি করতে পারে পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং নিশ্চিৎ করতে পারে স্ব স্ব অধিকারকে।
সন্তানের সাথে যৌনতা সম্পর্কে কথা বলার সময় কুরুচিপূর্ণ বা অশ্লীল শব্দ চয়ন থেকে বিরত থাকা জরুরি। প্রাথমিক জীবনের এ কথাগুলি কয়েক দশক পর্যন্ত সন্তানের স্মৃতিতে আটকে থাকবে এবং বাবা-মা সম্পর্কে তার একটি বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। তাই বিষয়টি ইতিবাচক হওয়া আবশ্যক। সন্তান বড় হওয়ার পরে বাবা-মা’র নিকট থেকে প্রাথমিক জীবনে প্রাপ্ত ইতিবাচক বার্তা তার মধ্যে সুন্দর একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সহায়ক হবে।
অনেক বাবা-মা’ই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন যে, আত্মীয়স্বজনকে জড়িয়ে ধরা, শিক্ষকের সঙ্গে হাই ফাইভ করা এবং পিতা-মাতার সুড়সুড়ি সবকিছু শিশুর মনস্তত্ত্বে প্রভাব বিস্তার করে। যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক গ্রুপ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন ফর অ্যাডভোকেটস ফর ইয়ুথের পরিচালক নোরা জেলপারিন বলেন, ‘শিশুরা শরীরের বিভিন্ন অংশ ও অনুভূতি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করে।’ তাই বিশেষজ্ঞদের মত হলো, শিশুকালে বয়স অনুযায়ী যৌনশিক্ষা দিতে পারলে আত্মীয়স্বজন বা বাইরের মানুষের দ্বারা নিপীড়নের সম্ভাবনা কমে যাবে। নিম্নে সামগ্রিকভাবে কোমলমতি শিশুদের যৌনশিক্ষা দেয়ার কিছু সাধারণ কৌশল উপস্থাপন করা হলো:
ভালো বন্ধু সম্পর্কে ধারণা প্রদান:
স্কুলে ভর্তির পূর্বে বাবা-মা কর্তৃক শিশুদেরকে ভালো বন্ধুর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যা শিশুদেরকে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে সুস্থ সম্পর্কে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। ভালো বন্ধুর সাথে আনন্দ বা কষ্ট ভাগাভাগি করে নেয়ার পাশাপাশি সহনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিপদের সময়ে একে অপরের সহযোগিতা করতে সক্ষম হবে। সেইসাথে নৈতিক মূল্যবোধ ও অধিকার সম্পর্কে শিশুরা সচেতন হতে পারবে।
জীবাণু প্রতিরোধের পন্থা অবহিতকরণ:
ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক উপদেশ দিতে হবে। কেবল সুন্দর সুন্দর শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে উপদেশে সীমাবদ্ধ না থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কেও জ্ঞানদান করা প্রয়োজন। ড্যান রাইস বলেন, ‘যখন আপনার শিশুকে কনুইতে কাশি বা হাঁচি দিতে বলেন, তখন তারা রোগ প্রতিরোধের উপায় শিখছে এবং অন্যদের মাঝে জীবাণু ছড়াতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এভাবে শিশুরা সহজেই বুঝতে পারে যে কেউ কাছে আসলে জড়িয়ে ধরা উচিত নয়, এমনকি পরিচিত কোনো মানুষ হলেও। এটা শিশুদের জন্য একটা কৌশলী বার্তা যে নিজের শরীরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় এবং কেউ জড়িয়ে ধরতে বা চুমু দিতে চাইলে অনুমতি দেয়া উচিত নয়।’
শারীরিক অঙ্গের সঠিক নাম বা পরিভাষা শেখানো:
বেশীরভাগ বাবা-মা সন্তানকে যৌনাঙ্গের সঠিক ও যথাযথ নাম বা পরিভাষা বলতে বিব্রত বোধ করেন এবং এসকল অঙ্গের অদ্ভুত ও কুরুচিপূর্ণ নাম বলেন। উদাহরণস্বরূপ, শিশু আশ্চর্য হয়ে পেনিসের নাম জিজ্ঞেস করলে তাকে ছদ্ম বা বিকৃত কিছু বলা হয়। কিন্তু এভাবে ভিন্ন কিছু বলা শিশুদেরকে এমন বার্তা দেয় যেন যৌনাঙ্গের প্রকৃত পরিভাষা ব্যবহার করা অনুচিত এবং শরীরের এসকল অঙ্গ নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত। ডা. রাইস বলেন, ‘আপনি যেমন নাককে নাক ও কনুইকে কনুই বলেন, তেমনি ভ্যাজাইনাকে ভ্যাজাইনা ও পেনিসকে পেনিস বলা উচিত। আপনার শিশু কথা বলতে পারলেই এসব পরিভাষা শেখাতে পারেন। জেলপারিনের মতে, শেখানোর জন্য জন্য ডায়াপার পরিবর্তন ও গোসল করানোর সময়টা উত্তম। অল্প বয়সেই শিশুকে এসব পরিভাষা শেখালে তারা আরেকটু বড় হলে সেখানকার কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করবে না, যার ফলে সঠিক সময়ে ফলপ্রসূ চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। শিশুদেরকে শরীরের গোপনাঙ্গের ভুল বা বিকৃত পরিভাষা না বলে সঠিক পরিভাষা জানানো খুবই জরুরি। সেসঙ্গে তাদেরকে এটাও বোঝানো প্রয়োজন যে এ অঙ্গগুলো একান্তই ব্যক্তিগত অঙ্গ, যেখানে অনুমতি ছাড়া অন্য কারো স্পর্শ করার অধিকার বা সুযোগ নাই। যা শিশুদের যৌন নিপীড়নও প্রতিরোধ করতে সহায়ক হয় কেননা তখন সে সঠিক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে অবাঞ্চিত স্পর্শের কথা ব্যক্ত করতে সক্ষম হয়। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, গোপনাঙ্গ সম্পর্কে সঠিক তথ্য শিশু নিরাপত্তার অন্যতম পরিমাপক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ক্ষেত্রে নিপীড়কেরা সেসব শিশুকে টার্গেট করে যারা ভ্যাজাইনা বা পেনিস কি তা জানে না। জেলপারিন বলেন, যেসব শিশু যৌনাঙ্গের সঠিক নাম বলতে পারে না তাদের মধ্যে নিপীড়নের হার বেশি। জেলপারিন জানান, ‘শিশুকে গোপনাঙ্গের বিশদ বর্ণনা দেয়ার দরকার নেই। কেবল সঠিক নামটা বলুন এবং জানান যে এগুলোও শরীরের অন্যান্য অংশের মতো স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক। এটাও অবহিত করুন যে এসব অঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করাতে লজ্জা বা দ্বিধার কিছু নেই।’
বিশ্বস্ত মানুষ শনাক্তকরণ:
এটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই যে, বিশ্বস্ত বয়স্ক মানুষ শনাক্তকরণ শিশুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জীবনে এমন কোন সময় বা পরিস্থিতি আসতে পারে যখন বাবা-মা এর অনুপস্থিতিতে বিশ্বস্ত কারো সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমেই বাবা-মা’কে বিশ্বস্ত মানুষ চিহ্নিত করতে হবে। যেখানে বয়সকেও প্রাধান্য দেয়া উচিত, বিশেষ করে এমন কাউকে নির্বাচনের চেষ্টা করতে হবে বা ভালো হয় যার বয়স ৫০ পেরিয়েছে। কেউ শরীরে হাত দিলে বা স্পর্শ করলে বা খারাপ কিছু বললে অথবা কঠিন প্রশ্ন থাকলে ওই বিশ্বস্ত মানুষকে জানাতে বলুন। জেলপারিনের মতে, প্রকৃতিগতভাবে শিশুদের মনে কৌতূহল খেলা করে। এই কৌতূহলের একটি অংশ হলো যৌনতা। এই বিষয়টা কেবল বাবা-মা ও শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তারা প্রয়োজনের সময় সাহায্য নাও পেতে পারে। তাই শিশুরা বাবা-মা এর সাথে যেভাবে দ্বিধাহীন যৌনতা বিষয়ক কথাবার্তা বলে সেভাবেই যেন বিশ্বস্ত মানুষটার সঙ্গেও বলতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে যেন শিশুদের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকলে তারা কাঙ্ক্ষিত সাহায্য পেতে পারে।
ছেলেমেয়ের বৈষম্য দূরীকরণ:
জেন্ডারভিত্তিক বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের অন্যতম কারণ ছেলেমেয়ের মধ্যে পারিবারিক বৈষম্য। একারণে শৈশব থেকেই সন্তানদের এটা অনুধাবন আবশ্যক বা গুরুত্বপূর্ণ যে ছেলেমেয়ে সকলেই সমান। পরিবারে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি বণ্টনে বৈষম্য থাকলে অপরিপক্ক আবেগী মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি বা সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। তাছাড়া পারিবারিক বৈষম্য ছেলে শিশুকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অনুপ্রাণিত করে এবং কালের পরিক্রমায় তা মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণে প্রভাবান্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে। অপরদিকে দৃশ্যমান এ বৈষম্য মেয়ে শিশুকে এটা ভাবতে প্ররোচনা জোগায় যে সে মূল্যহীন, তার কোন ভালো কিছু পাওয়ার সুযোগ নাই এবং তার সঙ্গে খারাপ কিছু হওয়াটাই স্বাভাবিক। এভাবে সময়ের বিবর্তনে দুর্বল নারী হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তার সাথে অন্যায় কিছু ঘটলেও প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলে বা সাহস পায় না। জেলপারিন বলেন, ‘ছেলেমেয়ে উভয়েরই সমান আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা শিশুমনে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে একটা আদর্শ প্রজন্মের আশা করা যায়।’ বৈষম্য দূরীকরণের একটি উদাহরণ হলো- ছেলের রঙ ও মেয়ের রঙ বলতে কিছু নেই, যে কেউ যে কোনো রঙকে পছন্দ করতে পারে, অন্যের পছন্দকে উপহাসের পরিবর্তে সম্মান করতে হয়। খেলনা, পোশাক বা কস্টিউম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এভাবে শিক্ষা দেয়া যায়। এটা শিশুকে ইতিবাচক ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করবে এবং স্ব স্ব আত্ম সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান ও আত্মমূল্যায়নের শিক্ষা প্রদান:
ডা. রাইসের মতে, যৌনশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমূল্যায়নের শিক্ষা। শিশুকে তার নিজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে পারলে সে নিজেকে অন্যের হাতের অনুসঙ্গ বা খেলনা ভাববে না। তার সঙ্গে কেউ অমানবিক বা অনাকাঙ্খিত ব্যবহার করতে চাইলে তার চেতনা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেগে ওঠবে এবং তার প্রতি অপরের অশোভনীয় আচরণকে তার সম্মানে আঘাত হিসেবে বিবেচনা করবে। কীভাবে শিশুকে আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমূল্যায়ন শেখানো যায় তা সম্পর্কে ধারণা পেতে কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে না, এটা পারিবারিকভাবেই নিশ্চিত করা যায়। পরিবারের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান এবং সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াই পারে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান ও আত্মমূল্যায়নের শিক্ষা নিশ্চিত করতে। অর্থাৎ পারিবারিক শিক্ষারই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরেও অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিবেদন পড়া বা ভিডিও দেখা যেতে পারে।
যৌনশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান বা তথ্য চলমান সময়ে এতটাই জরুরি যে এ জ্ঞান বাবা-মাসহ শিশুদের গ্রহণ প্রয়োজন। কেননা ভাল ও কার্যকর প্যারেন্টিংয়ের অংশ হিসেবে, বাবা-মাকে বাচ্চাদের যৌনশিক্ষার বিষয়ে সন্তানের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা হওয়া আবশ্যক।
যৌনতা সম্পর্কে আলোচনা কেবল পুরুষ ও মহিলাদের সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয় না যা শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই নিষিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করে। যৌন শিক্ষা বলতে শুধু স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্কে বুঝায় না বরং যৌন শিক্ষা এর বাইরেও বহু বিষয় থাকে যা সকলের জানা জরুরি। একটি বাচ্চা তার প্রথম বয়সে যৌন শিক্ষা সম্পর্কে যা জানবে এবং সে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে যা জানবে, এ দু’টি জানার ভেতর অনেক পার্থক্য থাকে। বাবা-মা যদি সঠিক ও যথাযথভাবে সন্তানকে যৌন সম্পর্কে জ্ঞান দান করে তবে তা কোমলমতি শিশুদের বিষয়টি বোঝার পরিধি বিস্তৃতিই করবে না বরং ভবিষ্যতে যৌনতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের ভিত্তি দৃঢ় হবে।
বর্তমান জনগোষ্ঠীর বেশীভাগেরই বাবা-মায়েরা যৌন সম্পর্কে আলোচনা করা বা জ্ঞানদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানায় নাই বা উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাই বা অনুভবই করেন না এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে চলমান আকাশ সংস্কৃতির কারণে পরিবর্তনশীল সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের যুগে বিষয়টি খুবই জরুরি। শিশুদের যৌন বিষয়ক জ্ঞান বা যৌনতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া কেন প্রয়োজন তা নিম্নে তুলে ধরার চেষ্টা করছি, অভিবাবকগণ একবার ভেবে দেখতে পারেন বা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োগ করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিহতকরণ:
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে শিশুদের ইন্টারনেট এবং সহস্রাধিক চ্যানেল সমৃদ্ধ টেলিভিশনের অ্যাক্সেস পাওয়া এখন খুবই সহজলভ্য। এমনকি বর্তমানের বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলি বহুল বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়। পারিবারিকভাবে যৌন জ্ঞান বা যৌনতা নিয়ে আলোচনা শিশুকে টিভি বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সরাসরি রক্ষা করতে সক্ষম। অবাধ যৌনতা বা অপরাধমূলক ক্রিয়কলাপের শিকার যাতে না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং আতংক সৃষ্টি না করে তাদেরকে বাস্তব জগতের প্রেক্ষাপটে ধারণা প্রদান করতে হবে যাতে যথাসময়ে তাদের যথাযথ উপলব্ধি জাগ্রত হয়।
বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধিকরণ:
বামা-মা এর অস্বস্তি এবং বিব্রতভাব পরিহারপূর্বক কোনরকম ভনিতা ব্যাতিরেকে সন্তানের সাথে সরাসরি যৌন জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হলে যথাযথ এবং সঠিক তথ্য আদান প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যা সন্তানকে যৌনতা বিষয়ক নেতিবাচক উৎসসমূহ অনুসন্ধানে বিরত রাখবে এবং সে অনুধাবন করতে পারবে যে নেতিবাচক উৎসগুলো তার জন্য শোভন নয় কিংবা উপযুক্ত নয় এবং অনিরাপদ। মূলত যৌন শিক্ষা হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যৌনতার ব্যাখ্যা, এটা কি এবং কেমন জানা যায়, সম্পর্ক গুলো চিহ্নিত করা যায় এবং এই তথ্যগুলো জানা যায়। এ শিক্ষা বাচ্চাদের জানার পরিধিকেও উন্নত করে। যাতে করে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাদের আচরণগুলো কেমন হওয়া উচিত এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। সর্বোপরি সন্তানদের বাবা-মা এর প্রতি অধিকতর আস্থার জায়গা উন্মুক্ত হবে কারণ তারা বুঝবে যে বাবা-মা এর সাথে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলা যায় এবং অন্যান্যদের তুলনায় বাবা-মা তাদের ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী।
সন্তানের বিকাশ সাধন এবং অনুধাবনের লক্ষ্যে সমর্থন প্রদান:
যৌন জ্ঞান সংশ্লেষে আলোচনা সন্তানকে এটা উপলব্ধি করতে শেখায় যে, তার নিজের শরীর রক্ষা করার পাশাপাশি যেমন তার নিজেকেই সম্মান করতে হবে তেমন অন্যের প্রতিও সম্মান প্রদর্শণ করতে হবে। যেমন-
– যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পাদিত যৌন বিষয়ক আলোচনা সন্তানকে এটার গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ সন্তান বুঝতে পারে যে কেউ তাকে তার দেহের অযাচিত খারাপ ব্যবহার করতে বা জোর জবরদস্তি করতে পারেন না এমনকি সে নিজেও অপরের সাথে একই কাজ করার অধিকার রাখে না;
– সঠিক যৌন জ্ঞান শিক্ষা সন্তানকে অন্যের প্রতি সঠিক আচরণ করতে এবং সহমর্মিতার হাত প্রশস্ত করতে তার নিজস্ব দায়বদ্ধতা দৃঢ় করতে অনুপ্রেরণা যোগায়;
– বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যে মা-বাবারা সন্তানদের সাথে যৌন জ্ঞান বিষয়ে প্রকাশ্য আলোচনা করেন সে সকল সন্তানের সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত উপযুক্ত সময়ে এবং সঠিক সঙ্গীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের জন্য অপেক্ষা করার সম্ভাবনার হার বেশি;
– বিদ্যাপীঠে জীববিজ্ঞান বিষয়ের বডি অ্যানাটমির অধ্যায়টি যৌন জ্ঞানের অংশটিকে পূর্ণ করতে সহায়ক হয়। যা বিশেষ করে পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের নৈতিক দিকগুলির বোঝাপড়া সহজ করে দেয় সন্তানের নিকট;
– যৌনতা একটি মানবিক জিনিস। এতে সংস্কৃতি, ধর্ম, নৈতিকতা থেকে শুরু করে সুখের মানবিক ধারণা পর্যন্ত অনেকগুলি বিষয় থাকে যা উপলব্ধি করতে সহায়ক হয়। সতর্কতার সাথে এ সম্পর্কে কথা বলা বা উপস্থাপন সন্তানকে ভবিষ্যতে সমাজ এবং নিজেকে একটি সভ্য এবং বুদ্ধিমান উপায়ে সঠিক পছন্দ নির্ধারণে সক্ষমতার দৃঢ়তাকে শক্তিশালী করে।
সন্তানকে যৌন বিষয়ে শিক্ষাদান:
ঘটনাচক্রে সন্তান যদি টিভিতে অন্তরঙ্গ ভালোবাসার কোন দৃশ্য দেখে ফেলে কি করবেন? আপনার রেসপন্স কেমন হবে তখন? আপনার জবাব কি হতে পারে যদি সন্তান তার ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে চায়?
নিশ্চিতভাবেই স্থান কাল পাত্রভেদে উত্তর প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। সমস্যা তখন যখন বাবা-মা এ ধরনের অনুসন্ধিতসু প্রশ্নে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তাদের এসবের কৌতুহল বিষয়ক প্রশ্নে হতচকিত হয়ে বাকরুদ্ধ করে দেয়।
আমাদের সমাজে এবং বেশিরভাগ বিদ্যাপীঠে যৌন শিক্ষা দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। উপরন্ত কিছু অভিভাবক ‘সেক্স’ শব্দটিকে একটি নিষিদ্ধ শব্দ হিসাবে বিবেচনা করে। বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের সাথে যৌন সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলেন কারণ তারা মনে করেন এই জাতীয় বিষয় সন্তানের চলমান বয়সের জন্য খুব বেশি অনুপযোগী বা তাকে ইঁচড়ে পাকা করে ফেলবে। বেশীরভাগেরই ধারণা যে বাচ্চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে যৌন বিষয়টি নিজেরাই শিখবে। অর্থাৎ অভিভাবকগণ তাদের বাচ্চাদের ভুল তথ্য তথা বিভ্রান্তিকর ধারণা উপর রেখে দিয়ে উপকারের চেয়ে বরং বেশী ক্ষতি সাধন করছেন। একটি বিষয় এক্ষেত্রে লক্ষনীয় যে, অভিভাবকরা যতই চেস্টা করুক না কেন তথ্য-উপাত্তের সহজলভ্যতার কারণে তারা সন্তানকে এ বিষয়গুলো থেকে দূরে রাখতে ব্যর্থ হন। এছাড়াও বাচ্চারা বাবা-মা’র সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্য তথা বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা করে এবং সেখান থেকেও এ সংশ্লিস্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকে।
ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাবা-মা চাইলেও তাদের সন্তানদের নিকট পৌঁছে যাওয়া তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। সন্তান যদি বাড়ীতে তথ্য না পায় তবে তার কৌতুহলী মন একটি বিকল্প পথ খুঁজে নিবে যা খারাপ বিকল্পও হতে পারে বা সমাজের নিকট কাঙ্খিত নাও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ছোট বাচ্চাদের মন অনেক বেশি কৌতুহলী হয়ে থাকে। তারা যখন কোন প্রশ্নের সদুত্তর তাদের বাবা-মা এর কাছ থেকে না পায় তখন তারা বিকল্প পথ খুজে বের করতে স্বচেষ্ট হয় নিজেদের মনকে নিবৃত করতে। অতএব এক্ষেত্রে শোভন উপায় হলো সন্তানের কৌতুহলী এবং আপাত বিতর্কিত প্রশ্নের যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে উত্তর দেয়া অভিভাবকদের রীতিমত দায়িত্বের পর্যায়ে পরে এবং এর সঠিক উত্তর পাওয়া সন্তানের অধিকার হিসেবে বিবেচ্য।
বয়স বিবেচনায় যথাযথ জবাব দেয়ার প্রচেষ্টা:
সন্তানদের ছোট থাকতেই যৌন শিক্ষা দেয়ার কাজটা শুরু করা জরুরি। কেননা অল্প বয়সে প্রদত্ত শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ হয়, তাদের সম্মুখে এ সংশ্লেষে উপস্থিত সামনের জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাটা তখন অধিকতর সহজ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন সন্তান ছোট থাকে তখন তাদেরকে বলা যায় কিভাবে সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ বড় হয়, শারীরিক পরিবর্তন সাধিত হয় এবং শিশুরা কিভাবে শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এসবের উপর ভিত্তি করেই তারা তাদের কৈশরের প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো সহজেই উপলব্ধি করার পাশাপাশি সাবলীলভাবে গ্রহন করতে পারে।
যথাযথ বয়সে কখন কি তথ্য প্রদান করা উচিত বা কতটুকু বলা উচিত তা সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে সন্তানের শারীরিক, মানসিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশের পাশাপাশি তাদের বোঝার ও গ্রহণের স্তরের উপর। একটি কিশোর বা কিশোরীকে যৌন শিক্ষা দিলে তা এমন নয় যে, তার শুধু এ ক্ষেত্রেই দক্ষতা বৃদ্ধি করে বরং এটা তার সাধারন জীবন শোভনভাবে যাপনেও সরাসরি ব্যাপক সহযোগিতা করে থাকে। একজন শিশু বা কিশোর/কিশোরির এ গুণ থাকা আবশ্যক যেন সে সহজেই সনাক্ত করতে পারে কার সাথে কিভাবে কথা বলবে, কিভাবে চলবে, কাকে বিশ্বাস করতে পারবে, কার সাহায্য চাইতে পারবে, কার সাথে কতটুকু সম্পর্ক রাখতে পারবে। সর্বোপরি কখন ‘না’ বলতে পারবে, বাচ্চাদের তথা কিশোর-কিশোরীদের ‘না’ বলার দক্ষতা অর্জন খুবই জরুরি। আর এ শিক্ষা যৌন বিষয়ক জ্ঞান থেকেও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যৌনতা সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা বাচ্চা বা কিশোর-কিশোরীকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে, মানুষকে বুঝতে এবং অপরের কথার মর্ম উপলব্ধি করতে শেখায়। এছাড়াও এ থেকে যে শিক্ষাগুলো তারা সহজেই পেয়ে থাকে তা হলো:
– উপস্থিত ব্যক্তির আচরণ বিশ্লেষণ তথা অনুধাবন এবং প্রয়োজনে ‘না’ বা নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশের কৌশল;
– বাবা-মা’সহ, সমাজের লোক বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারি সংস্থা অথবা নির্ভরশীল বড়দের নিকট থেকে প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় সাহায্য নিতে পারার দক্ষতা;
– সমাজের অযাচিত বা অহেতুক ভয়কে গুরুত্ব না দিয়ে সামনে এগিয়ে চলার কর্ম কৌশল, ইত্যাদি।
প্যারেন্টিং এ যৌন শিক্ষা-তৃতীয় পর্ব
– ©মোঃ আবদুর রহমান মিঞা (’শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পদকপ্রাপ্ত)
শিশুর বয়স ভিত্তিক যৌন শিক্ষা প্রদান
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা এর পক্ষে তাদের বাচ্চাদের সাথে যৌন সম্পর্কে কথা বলা খুব একটা সহজসাধ্য কাজ হয় না, বিশেষ করে যখন সন্তান কৈশোরে পৌঁছায়। এ পর্যায়ে বিষয়টি কেমন যেন জটিল ও অস্বস্তিকর পর্যায়ে চলে যায় এবং যৌন সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান বাবা-মা এর নিকট লজ্জার হাল্কা পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে যায়, এমনকি তারা অনিশ্চিত আশঙ্কার ভয়ও পান। বাস্তবতা বিবেচনায় তাদের অবশ্যই এমন ভয় থাকা উচিত যে, যদি তারা তাদের সন্তানের সাথে যৌনজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে কথা না বলেন বা এড়িয়ে যান তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অস্বাস্থ্যকর ও অনৈতিক এবং মূল্যবোধ বিবর্জিত যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান তাদের সন্তানদেরই ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন করার পাশাপাশি নৈতিক স্খলনের কারণ হতে পারে।
বাবা-মা এর উচিত পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে সন্তানকে ইন্টারনেট থেকে অনিয়ন্ত্রিত যৌনতা বা টেলিভিশনে বা অতিকল্পনা মিশ্রিত পর্ণ সিনেমা থেকে যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণে বাঁধা দেয়া। প্রকৃতপক্ষে সন্তানের বয়সভেদে যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে মার্জিত যৌন শিক্ষা গ্রহণ প্রয়োজন, যা সাধারন শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত করে নিশ্চিত করতে পারে বাবা-মা বা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ আস্থাভাজন ব্যাক্তিবর্গ।
বাস্তবিকই আমরা শিশুর যৌন-শিক্ষা বা সেক্স এডুকেশন নিয়ে খুবই অনুৎসাহী। শিশুকে সঠিক বয়সে সঠিক যৌন শিক্ষা না দিলে যে তারা নানবিধ অনাকাঙ্খিত সমস্যার সম্মুখীন হয় এমনকি যৌন নিগ্রহের মত ঘৃন্য পরিস্থিতির স্বীকার হয় তা আমাদের অনুধাবন করা উচিত এবং এসব বিষয়ে অধিকতর সচেতন হওয়ার এখনই সময়। মনে রাখা প্রয়োজন আজকে আমার সন্তানকে যা জানাতে সংকোচ বোধ করছি তা একদিন সে অন্যের কাছ থেকে জানবে, যেখানে থাকবে ভুল-ভ্রান্তি, অভিনয়, কুসংস্কার এবং মিথ্যা, অনেক সময় যা জানতে জানতে অনেক বেশী দেরী হয়ে যাবে, তাই আমাদের উচিত নিজ দায়িত্বে সঠিক কাজটি, সঠিক উপায়ে, সঠিক সময়ে সঙ্কোচহীনভাবে সম্পাদন করা। শিশুকে কখন, কিভাবে, কি যৌন শিক্ষা দিব তার একটা রূপরেখা ঠিক করে নিতে হবে এখনই দেরী করার কোন সুযোগ নাই। এবার দেখা যাক কিভাবে ধাপে ধাপে আগানো যায়।
যৌন শিক্ষা হলো যৌন অঙ্গ, যৌন প্রজনন, যৌনাচার, প্রজনন স্বাস্থ্য, মানসিক সম্পর্ক, প্রজনন অধিকার, ছেলে-মেয়েভেদে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, যৌন বিরতি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সকল বিষয়ই মানব যৌনতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যৌন শিক্ষার জন্য প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য পন্থার মধ্যে থাকবে বাবা-মা এবং আস্থাভাজন অভিভাবক, বিদ্যাপীঠের আনুষ্ঠানিকতা এবং দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রচারণা।
বয়স সংশ্লেষে যৌন শিক্ষার পরিবর্তন:
শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের যৌনতা বয়সানুযায়ী পরিবর্তনশীল বিধায় তাদেরকে যৌন শিক্ষা দেওয়ার পূর্বে শারীরিক ও মানসিক বয়স বিবেচনায় ক্রমাঙ্কিত করা আবশ্যক। বাবা-মা এবং বয়েজ্যেষ্ঠগণ একটি সাধারণ ভুল করে থাকেন তা হলো যৌনতা তারা তাদের নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন কিন্তু এমনটা হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না, তাদের দেখতে হবে তাদের সন্তানদের দৃষ্টি দিয়ে। এ দৃষ্টি যতই প্রখর হবে ততই শিক্ষণ-শিখন ফলাফল আশানুরূপ হবে এবং সমাজ তথা দেশ উপকৃত হবে।
শিশুদের জন্য যৌন শিক্ষা প্রদানের সঠিক সময়:
আমার পূর্বের দু’টি পর্ব পাঠের পরে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক আমার সন্তানকে কখন যৌন শিক্ষা দেওয়া শুরু করা উচিত? প্রাথমিকভাবে কি বিষয় দিয়ে শুরু করব? কতটুকুই বা বলব? উপস্থাপন কেমন হবে? প্রতিটি যৌন অঙ্গের সঠিক নাম কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রথমেই আমাদের যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো দেখতে হবে শিশুরা কি ধরনের প্রশ্ন বেশী করে থাকে। যেমন বাচ্চারা যখন তার চারপাশের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে তখন তারা তাদের নিজের দেহের অঙ্গগুলি চিনতে শুরু করে এবং তাদের বন্ধুদের সাথে নিজেকে তুলনা করা শুরু করে। তখনই তারা ছেলে-মেয়েদের দেহের পার্থক্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। ছেলেদের চুল কেন ছোট? মেয়েদের চুল কেন লম্বা? কেন ছেলে-মেয়ের লিঙ্গের ভিন্নতা থাকে? সে পৃথিবীতে কিভাবে আসল বা কে তাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসছে? এমন সব শিশুসুলভ কৌতুহলী নানাবিধ প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলিই বাবা-মা’কে শিশুদের প্রাথমিক যৌন জ্ঞান প্রদানের ক্ষেত্র তৈরীর জন্য প্রকৃত সুযোগ। সন্তানের শারীরিক ও মানসিক প্রেক্ষাপট বিচেনায় নিয়ে বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাবককেই নিজ দায়িত্বে জানতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন, কিভাবে এবং কি কি বিষয় অন্তর্ভূক্তকরণের মাধ্যমে সন্তানের প্রাক-কৈশোর বা কৈশোর বা কৈশোরত্তোর বয়সী সন্তানের যৌন সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। আমার আজকের এই ‘প্যারেন্টিং এ যৌন শিক্ষা-তৃতীয় পর্ব’ এর উপস্থাপনায় বাবা-মা এর সঠিক ও যথাযথ চিন্তায় উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন গবেষণা পত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
শিশুদের বয়সভিত্তিক কখন, কি বিষয়সমূহে এবং কিভাবে যৌন শিক্ষা দিবেন?
বাচ্চাদের জন্ম থেকে তিন বছর বয়স ব্যাপ্তিতে:
শিশুরা জন্ম থেকে তিন বছরের মধ্যে ইন্দ্রিয়গুলিকে কেন্দ্র করে আবিষ্কারের পর্যায়ে অবস্থান করে। এসময় তারা স্পর্শ, শ্রবণ, দর্শন, স্বাদ এবং গন্ধ তাদের আনন্দপূর্ণ ধারণা পায় যা অবাক হওয়ার বিষয় নয় বরং নবজাতকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কারণ এটা শিশুর একটি স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিত্ব বিকাশের সূচনা পর্ব। তারা বাইরের পৃথিবী আবিষ্কার এবং অন্বেষণ করার পাশাপাশি তারা তাদের শরীর অন্বেষণের সুযোগ লাভ করে এবং সেটা অবশ্যই যৌন অঙ্গ সহ। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে তাদের বিকাশ ঘটে লিঙ্গ পরিচয়সহ যেখানে তারা পুরুষ-মহিলা বা ছেলে-মেয়ের পার্থক্য শিখে। এই ব্যাপ্তিতে তারা তাদের শরীর পরীক্ষা করার পাশাপাশি তারা এটা অন্যান্যদের দেখায় যা তাদের যৌনতা সংশ্লেষে আবিষ্কারের অংশ হিসেবে বিবেচ্য। এ পর্যায়ে শিশুরা তাদের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করতে শুরু করে কারণ তারা এটা তাদের মদ্যে আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টি করে। এসময় থেকেই যদি যথাযথ যৌন শিক্ষা শুরু করা না হয় তবে দিন যত যেতে থাকবে ততই তারা ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হবে যা বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাকদের জন্য পরবর্তীতে আশংকা, ভয় বা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে পারে এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার সুযোগ করে দিবে।
শিশুরা এ বয়সে যৌন বিষয়ক ব্যাখ্যা পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে যৌন শিক্ষাদানে নিম্নবর্ণিত পন্থাসমূহ অবলম্বন করা যেতে পারে:
– বাচ্চাদের বয়সে বাচ্চারা তাদের অঙ্গগুলির নাম শিখতে শুরু করে। লিঙ্গ, স্তন, যোনি নামের পরিবর্তে তার যৌন অঙ্গগুলির নাম পরিবর্তন করা বা অশ্লীল নাম বলা এড়িয়ে চলতে হবে। শরীরের সব অঙ্গের সঠিক নাম শেখান। যৌনাঙ্গের জন্য ছদ্মনাম একদম ই ব্যাবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে মেডিকেল টার্ম ব্যাবহার করা যেতে পারে। যদি শিশু তার বা অন্য কারও শরীরের অঙ্গের বিষয়ে প্রশ্ন করে তবে তাকে বিব্রত করা বা হাসি ঠাট্টা করা যাবে না;
– ব্যক্তিগত অঙ্গ সম্পর্কে কথা বলা শুরু করতে হবে যাতে তারা সময়ের সাথে সাথে সেসব অঙ্গের সাথে পরিচিত হতে পারে। তাকে বলতে হবে শরীরেরে এ সকল অঙ্গ খুবই “ব্যক্তিগত” এবং উলঙ্গ বা উন্মুক্ত থাকা যাবে না শারীরিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে। শিশুকে বোঝাতে হবে এবং জানাতে হবে জনসাধারণের মধ্যে ব্যক্তিগত অঙ্গগুলো প্রদর্শন করা বা স্পর্শ করা ঠিক নয় এবং এটা শোভন নয় এমনকি অন্যের এসব অঙ্গ নিয়েও কথা বলা বা স্পর্শ করা যাবে না;
– এছাড়াও দেখা যায় এ বয়সে তারা উলঙ্গ থাকার সময় অথবা ডায়াপার পরিবর্তনের সময় কিংবা গোসল করানোর সময় তাদের নিজেদের যৌনাঙ্গে হাত দিচ্ছে, অন্য শিশুর যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তাদের ধমক দিলে নিজের শরীরের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মায় তাই একান্তে তাদেরকে বলতে হবে শরীর তাদের ব্যাক্তিগত সম্পদ এবং শরীরের কিছু কিছু স্থান একান্তই ব্যাক্তিগত, যা অন্যদের সামনে দেখাতে হয় না। নিজের ব্যাক্তিগত স্থানে হাত দেয়া কোন অন্যায় বা লজ্জাজনক কাজ নয় তবে তা অন্যের সামনে করা অশোভন সেটা বোঝাতে হবে। শিশুকে বলতে হবে যে বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাবক বা কেয়ারগিভার ব্যতীত তার শরীরের ব্যক্তিগত অঙ্গগুলি অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারেন না। অন্য কেউ এমন কি পরিবারের কারও কোন অধিকার নেই তার ব্যাক্তিগত স্থানে হাত দেয়ার, এটা জোর দিয়ে বলতে হবে এবং কেউ এমন করতে চাইলে তা যেন অবশ্যই তার বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাবককে সাথে সাথে জানাতে বলতে হবে। ভাল ও খারাপ স্পর্শের এবং আদরের পার্থক্য বোঝাতে হবে;
– এই বয়সে শিশুরা বাচ্চা কিভাবে হয় এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং কৌতুহলী প্রশ্ন করে থাকে। এসময়য় সন্তান জন্মের সহজ ব্যাখ্যা দিতে হবে। এভাবে বলা যেতে পারে যে, বাবা আর মায়ের ভালোবাসায় সন্তান হয়। মায়ের ভেতরে পেটের ভেতর সন্তান থাকে পরে তারা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনায় মা এর ভ্যাজাইনা/যোনি পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। কোনরকম রূপকথার গল্প, হসপিটালের দোকান থেকে আনা ইত্যাদি ধরনের কৌতুকপূর্ণ কথা বলা যাবে না;
– প্রতিদিনের ঘটনা বা টিভি শো ব্যবহার করে বিষয় শিশুর নজরে আনা যেতে পারে। যেমন যদি কোনও পরিবারের সদস্য গর্ভবতী হন, তবে গর্ভবতী মা এর পেট দেখিয়ে বলা যেতে পারে সেখানে একটি শিশু বা বাবু রয়েছে যে তার ভাই বা বোন (বা অন্য প্রযোজ্য সম্পর্ক) রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের পরে তাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবে;
– শিশুদের বয়স এবং প্রশ্ন অনুযয়ী ব্যাখ্যা দিতে হবে। তারা যতটুকু জানতে চায় ততটুকুরই জবাব দিতে হবে সুস্পষ্টভাবে, বাড়তি তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশু যদি প্রশ্ন চালিয়ে যায় তবে তার বয়স বিবেচনায় জবাব দিয়ে যেতে হবে, তাকে থামানো যাবে না।
বাচ্চাদের তিন থেকে ছয় বছর বয়স ব্যাপ্তিতে
তিন থেকে ছয় বছর বয়সেই সাধারণত: তারা তাদের পৃথিবীতে আগমন বা উপস্থিতির বিষয়ে কৌতুহলী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে। এ সময় থেকে বাবা-মায়েদের এক রকম যৌনতার বিষয়টিতে জ্ঞানদান শুরু করতে হবে। তবে শিশুদের সাথে এ সময়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে কথোপকথনের সময় বিশেষ প্রস্তুতি ও সতর্কতার সাথে বিশেষ করে কতটুকু বলা যাবে তা নির্ধারণপূর্বক শিশুকে জানাতে হবে। শিশুর মানসিক ও শাররিক বয়সকে গুরুত্ব দিতে হবে জবাব প্রদানের ক্ষেত্রে। তিন বছরের বাচ্চার পক্ষে ‘বাবা এবং মায়ের মধ্যেকার ভালবাসা থেকে বাচ্চা পৃথিবীতে আসে’ এতটুকুই তা জানা যথেষ্ট। শিশু যদি অতিরিক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তবে তার চাহিদানুযায়ী যতটুকু বলা প্রয়োজন ততটুকুই বলতে হবে শোভন ভাষায় কোনরকম ধমক দেয়া বা বিব্রত হওয়া থেকে দুরে থাকতে হবে।
এ সময়টাতে যখন কোনও শিশু তার শরীর সম্পর্কে জানতে শুরু করে বিশেষ করে শিশুর প্রাক-স্কুল শুরু করার পরে, সে লিঙ্গ সম্পর্কে শিখবে এবং একটি ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে পার্থক্য কী তা জানতে আগ্রহী হবে। কৌতূহলের কারণে, সে এমনকি তার নিজের অঙ্গ স্পর্শ করতে পারে বা অন্য বাচ্চাদের ব্যক্তিগত অঙ্গগুলি বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। তাকে শান্ত ও শোভনভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে এটা করা ঠিক নয় কেননা এটা নেহায়েতই ব্যক্তিগত এবং তাকে অন্যান্য কাজের দিকে তার মনোযোগ পুনর্নির্দেশ করে তার সাথে তুলনা করে অনুধাবন করার সুযোগ করে দিতে হবে কোনটি শোভন এবং কোনটি নয়। এটিও বুঝিয়ে বলতে হবে যে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কোনও ব্যাথার চিকিৎসা করতে বা কারণ সনাক্ত করতে যদি শারীরিক পরীক্ষা করতে হয় তবে তার নিজের বাবা-মা, ডাক্তার বা নার্স ব্যতীত অন্য কাউকেই তার ব্যক্তিগত অঙ্গগুলিকে স্পর্শ করতে দেওয়া উচিত নয়। বাচ্চাকে গোসলের সময়ই তার ব্যাক্তিগত অঙ্গ সম্পর্কে শিখিয়ে দেয়া যেতে পারে, শেখানোর সময় শিশুর নিকট থেকে এ সংশ্লেষে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বিব্রত বা লজ্জিত না হয়ে দৃঢ়তার সাথে জবাব দিতে হবে এবং জবাবের ক্ষেত্রে সত্যবাদী হওয়াটা জরুরি।
বাচ্চারা এ বয়সটাতেই কিন্ডারগার্টেন কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে ও অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে শেখে যা প্রাথমিক সামাজিক বিধির আওতাভূক্ত। তখনই তারা শিখেছে যে প্রাপ্তবয়স্করা বা বড়রা অন্যের কাছে নিজেকে উলঙ্গ দেখা বা যৌনাঙ্গে স্পর্শ করা পছন্দ করেন না এবং তাদের কৌতুহলী মনে প্রশ্ন জাগে শিশু কিভাবে জন্মগ্রহণ করে বা জন্মের পদ্ধতিটা কি। এটাই উপযূক্ত সময় বাবা-মা, শিক্ষক ইত্যাদি ব্যাক্তিবর্গ শিশুদের লিঙ্গ, গর্ভাবস্থা, অপব্যবহার, ভাষা ব্যবহার সম্পর্কে প্রথম ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজ সহজ, শোভন এবং সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করার।
বাচ্চাদের ছয় থেকে নয় বছর বয়স ব্যাপ্তিতে
ছয় থেকে নয় বছর বয়সে শিশু নিজের এবং অপর শিশুর শরীরের অঙ্গগুলির বিষয়ে আরও বেশি জানতে চেষ্টা করে। এ সময়ে কীভাবে নিজেকে যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়? কোন অঙ্গগুলি নেহায়েতই ব্যাক্তিগত? প্রকাশ্যে থাকাকালীন কিভাবে নিজেকে আবৃত করে রাখতে হয় বা আবৃত করে রাখার গুরুত্ব কি? নিজের ব্যক্তিগত অঙ্গগুলি কিভাবে নিজেকেই পরিষ্কার রাখতে হয়? কিভাবে একা গোসল করতে হয়? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়াটা খুবই জরুরি, সেইসাথে এটাও তাদের বোঝাতে হবে উল্লেখিত কাজগুলো কোনভাবেই লজ্জাজনক নয় বরং জীবন চলার পথে বিষয়গুলো অনুষঙ্গ।
আলোচ্য বয়স সীমাটা এমন যে, এ সময় শিশুরা লজ্জিত হতে শেখে তখন তারা অন্যের সামনে কাপড় পরিবর্তন, যৌনতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো করতে বা জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করে। তাদের শরীরের জন্য নিরাপদ সামগ্রীসমূহ ব্যবহার করতে চেষ্টা করে। সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জীবন কী তা জানে এবং পারতপক্ষে তারা যৌন শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে কিন্তু অনেক নোংরা কৌতুক করে বা বলে কিন্তু তারা যা বলে তা বোঝায় না। এ বয়সে তাদের মধ্যে প্রথম প্রেমে পড়া জাতীয় ঘটনা ঘটতে পারে কেননা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে এবং মনে অনেক অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ের জন্ম নেয়। এ সময়টাতে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাবা-মা এর উচিত প্রথম ইঙ্গিত দেওয়া যে, ঋতুস্রাব, বীর্যপাত ও যৌন সহিংসতা কি এবং এসবের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও একই বিষয়ে কিভাবে সহনশীলতা শ্রদ্ধার সাথে রক্ষা করতে হয়।
নারী-পুরুষের সমাজে সমান অধিকার সেটা বোঝাতে হবে। এ সময় পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের ভেতরে খোলামেলা আচরণ পরিহার করা জরুরি। যেমন শিশুর সামনে পোশাক পরিবর্তন, বাবা-মা একজন অপরকে জড়িয়ে ধরা বা অন্তরঙ্গ ভালোবাসা প্রদর্শণ, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা বা সে বিষয়ে আলোচনা করা।
শিশুরা এ সময় কৌতুহলী উদ্ভট প্রশ্ন করে বাবা-মা’কে অপ্রস্তুত করে ফেলতে পারে কিন্তু তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে প্রয়োজনে একান্তেআলোচনার মাধ্যমে উত্তর দিতে হবে। শারীরিক পরিবর্তন বিশেষ করে নারীপুরুষের শরীর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, হরমোনের প্রভাব (কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হওয়া, ব্যক্তিগত অঙ্গে কেশ ওঠা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহী হওয়া এবং ব্যক্তিগত অঙ্গের তদরূপ পরিবর্তন সাধিত হওয়া, ইত্যাদি), শারীরিক পরিবর্তন কে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়, কিভাবে প্রস্তুত হতে হয় সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এটি মাসিক চক্রের সময় নিয়মিত পেট ব্যাথা বা শরীরের অসুবিধার জন্যও তাকে প্রস্তুত করবে। যখন সে তার প্রথম পিরিয়ডটি অনুভব করবে তখন এটি তাকে ভয় সৃষ্টি করবে না বা আতঙ্কিত হবে না, সে অনুধাবন করবে এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।
যৌন-মিলন কি, মাস্টারবেশন কি এসব প্রশ্ন করলে কোনরকম লুকোচুরি না করে বয়সানুযায়ী সহজ ভাষায় সঠিক উত্তর দিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুদের জন্য প্রযোজ্য গ্রাফিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট বা অ্যানিমেশন ব্যাবহার করা যেতে পারে। যৌন মিলনের ফলে কি হয় এবং নির্দিষ্ট বয়সের আগে কেন তা করা উচিত না তা বলতে হবে। নারী-পরুষের ভালবাসা এবং তার উপযূক্ত সময় সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। এসব শিক্ষা যদি শিশুর জন্য বাড়াবাড়ি বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে নীচের বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া যেতে পারে:
• এ সময়টাই বয়ঃসন্ধির সময় তাই বিষয়গুলো জরুরি;
– অনেক মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের স্বীকার হয়ে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়;
– শিশু নিগ্রহকারীরা এই বয়সের ছেলেদের বেছে নেয়। অনেকেরই ধারণা ছেলে বাচ্চারা বেশী নিরাপদ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে কারণ শিশু নিগ্রহকারীদের মানসিক বিকৃতি সঙ্গার অতীত। বাচ্চারা আগে থেকে ব্যাপারটা না বুঝলে বা ধারণা না থাকলে কেউ নিগ্রহের সম্ভাবনা তৈরি করছে কিনা সে বিষয়টি বুঝতেই পারবে না, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতেও পারবে না;
– নিগ্রহকারীরা শিশুর (ছেলে-মেয়ে উভয়েরই) যৌনাঙ্গ সংবেদনশীল (Sensitized) করে তুলে পর্যায়ক্রমে যাতে শিশুর মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয় বা তারা অযাচিত সুখানুভূতি পায়, এটা নিশ্চয়ই কারও কাম্য নয়;
– ফাঙ্গাল ইনফেকশন কিভাবে শরীরের ব্যাক্তিগত অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে সে বিষয়ে ধারণা পাবে না ফলে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, কেননা শিশুর শারীরিক বয়স এর কোন ধরা বাধা নাই যে সুনির্দিষ্টভাবে কখন তার ঋতুচক্র শুরু করে এটা সম্পূর্ণরূপেই নির্ভর করে শারীরিক গঠণের উপর, এ কারণেও এ বয়সে যৌন শিক্ষা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত নয়।
বাচ্চাদের নয় থেকে তের বছর বয়স ব্যাপ্তিতে
বাচ্চার নয় থেকে তের বছর বয়সসীমার মধ্যে অবশ্যই যৌনতা সম্পর্কে ভালভাবে জানাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে যৌনতার বিরুপ প্রভাব থেকে কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করা কঠিনই হয়ে পড়বে এবং যৌন নিগ্রহের হার কামানো দুষ্কর হবে। তবে যেকোন শিক্ষা দেয়ার পূর্বে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং উদ্ভূত পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিচেনায় রাখতে হবে।
পূর্বের ধাপে অর্থাৎ ছয় থেকে নয় বছর বয়সের ধাপে প্রদত্ত ধারণার বাইরেও বয়ঃসন্ধির বিস্তারিত ধারণা দিতে হবে এবং শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন ও জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে শিশুকে অবগত এবং প্রস্তুত করতে হবে। শিশু কিভাবে জন্মায় তার বিস্তারিত ধারণা, সন্তান জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়া এবং সন্তান লালন-পালন কতটা জটিল, স্পর্শকাতর ও কস্টসাধ্য সেটা বোঝাতে হবে যাতে ধীরে ধীরে দায়িত্ববোধ এবং বাবা-মা’র প্রতি সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধাবোধের জায়গা তৈরি হয়। নিরাপদ যৌন আচরণ এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের ধারণা, যৌনবাহিত রোগ ও তার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। ছেলে-মেয়ে সম্পর্কের মধ্যে পারস্পারিক সম্মানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্য যে খুবই অন্যায় একটা কাজ সেটা বোঝাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মাধ্যমে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপিত যৌনতার সাথে বাস্তব যৌনতার যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে সেটা বোঝাতে হবে যাতে শিশুরা ফ্যান্টাসি বা কল্পনাপ্রসূত বা অলীক যৌনতার বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে।
বাচ্চাকে পর্ন সিনেমা বা ভিডিও এবং এর কুফলগুলি সম্পর্কে সতর্ক করাসহ সমকামিতা কেন গ্রহণযোগ্য নয় বা এর কুফল কি বা এর পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারণা দিতে হবে। গর্ভাবস্থা কিভাবে তৈরি হয়, অযাচিত গর্ভধারণের নেতিবাচক দিক ও জীবনে এর পরিণতি, গর্ভনিরোধ এবং গর্ভপাত সম্পর্কে গুরুত্বের সাথে ধারণা প্রদান করতে হবে। বাচ্চাদের বই এবং এনসাইক্লোপিডিয় দেখানো যেতে পারে, যা একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার কাঠামো বর্ণনা করে এবং কিভাবে সন্তানের গর্ভধারণ ঘটে সে সম্পর্কেও অবগত করে।
প্যারেন্টিং এ শিশুকে যৌন শিক্ষা: পঞ্চম পর্ব পড়ার অনুরোধ থাকল।
সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর নৈতিক জীবন যাপনে যৌন শিক্ষা শিশুদের এমন সব তথ্য প্রদান করে যা তাদের দেহকে ইতিবাচক উপায়ে চেনা, জানা, বোঝা এবং অযাচিত ব্যবহারের শিকার রোধকল্পের জন্য খুবই জরুরি। যেহেতু যৌন শিক্ষা আদর্শভাবে পরিবার থেকেই অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার ন্যায় শুরু করা উচিত সেহেতু বাবা-মা এর উচিত তাদের সমস্ত লজ্জা, বিব্রতভাব কিংবা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শুধুমাত্র একটি স্বাস্থ্যকর দেহ নয় বরং একটি সুস্থ ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত নৈতিকতাপূর্ণ মনের অধিকারী শিশুকে লালনপালনের প্রতি নজর দেয়া।
বাচ্চাদের তের থেকে আঠার বছর বয়স ব্যাপ্তিতে
তের বছর বয়স থেকে মূলত শিশুরা কৈশোরে প্রবেশ করে এবং যৌনতা কী তা জেনে যায়। তবে তখনও যৌনতা বিষয়ে অনেক কিছুই তাদের অগচোরে থেকে যায় যেমন- যৌনরোগ, কৈশোরের গর্ভাবস্থা, ধর্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্ক, যৌনতার অপব্যবহার ইত্যাদি। এ বয়সে তারা যদি যথাযথ ও শোভন যৌনশিক্ষা না পায় এবং নিজেকে রক্ষা করতে না শিখে তবে তারা ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। এক্ষেত্রে বাবা-মা এর স্বাস্থ্যসম্মত যৌনশিক্ষা সম্পর্কে বিশদভাবে কথা বলা খুবই জরুরি দরকার এবং যৌন সম্পর্ক তৈরির জন্য সমাজ নির্ধারিত পন্থা ও সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা বিষয়টিকে বোঝাতে হবে প্রয়োজনে আর্থ-সামাজিক, মনোবৈজ্ঞানিক বা মনোসামাজিক এবং ধর্মীয় বিধি নিষেধকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। যৌনতার বিষয়ে বা যৌন জ্ঞানে পরিপক্কতার জন্য যৌন মিলনে কোনও অংশীদারি হিসেবে ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের কোন প্রয়োজন নাই বা এ বিষয়ে চিন্তা করারও সুযোগ নাই বিষয়টির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি কেননা সকল বিষয়ে প্র্যাক্টিক্যাল করার প্রয়োজন নাই।
যৌনতার ক্ষেত্রে বাচ্চার সাথে পারস্পরিক সম্মতির গুরুত্ব, যৌন রোগের (বিশেষ করে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি) বিরুদ্ধে সুরক্ষা, কনডম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব এবং অযাচিত বা অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে কথা বলুন। মেয়ে বাচ্চা কোন কারণে (সেটা বাল্যবিবাহ বা অন্য কোন পরিস্থিতির কারণে) আঠার বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই যৌন কাজে সচল হয়ে থাকলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য।
পর্নোগ্রাফির কুফলসমূহ, অযাচিত যৌনতা এবং ধর্ষণের ন্যায় অন্যান্য বিপদ সম্পর্কে এবং প্রতিরোধ ও প্রতিহত সংশ্লেষে কথা বলা ও সতর্কতা বিষয়েও বিস্তারিত জ্ঞান প্রদান এ বয়সে খুবই জরুরি প্রয়োজন। ইন্টারনেটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্তানের সকল প্রকার ব্রাউজিং বিষয়ে গুপ্তচরবৃত্তি পরিহারপূর্বক এ সকল তথ্য প্রযুক্তি থেকে কি কি ভাল সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা প্রদান করতে হবে। প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভাল শিক্ষার প্রস্তাব দেওয়া জরুরি।
তের থেকে যতই সামনের দিকে আগাবে ততই কৈশোরের চঞ্চলতার পাশাপাশি যৌন বিষয়ে যথেষ্ঠ সচেতন হয়ে উঠবে কিন্তু সমস্যার গন্ডির বাইরে নয়, তাই তার দৈনন্দিন সমস্যার কথা বাবা-মা এর মন দিয়ে শুনতে হবে, কোনভাবেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না, ধীরে সুস্থ্যে ঠাণ্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রয়োজনে বাচ্চাকে বোঝাতে হবে। ইতিমধ্যে বাচ্চা যদি কোন প্রকার ভুল করেই ফেলে তবে তাকে যথাযথ সহযোগিতা করতে হবে। বাস্তব আর ফ্যান্টাসির পার্থক্য বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে এক্ষেত্রে গ্রাফিক্স বা অ্যানিমেশনের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। যৌন সম্পর্ক কোনভাবেই গোপনীয় বিষয় নয় তবে তা নেহায়েতই ব্যাক্তিগত বিষয় এ বিষয়টা বাচ্চার মনে গেঁথে দিতে হবে এবং এ বিষয়টির স্টিল ছবি বা ভিডিও রেকর্ডিং সংরক্ষণ ও প্রচার শুধুমাত্র নৈতিকতার অবক্ষয়কেই প্রকাশ করে না বরং এটা সম্পূর্ণ বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই এধরণের কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করতে হবে। নিরাপদ যৌনতা, সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে যৌনতায় অংশগ্রহণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ তথা অযাচিত গর্ভধারণ এবং গর্ভপাতের কুফল ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত শিক্ষা দিতে হবে। বাবা-মা যে বিষয়গুলি সরাসরি বলতে পারছেন না বা যে বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান রাখেন না সে বিষয়গুলি সঠিক এবং যথাযথ তথ্য-উপাত্তপূর্ণ ওয়েবসাইট থেকে নিজেকে আগে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে তারপরে সন্তানকে বোঝাতে হবে অথবা শোভন অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্সের সহযোগিতা নিতে হবে।
বয়সন্ধির এ সময়টা বাচ্চাদের দেখলে মনে হতে পারে তারা খুবই বিব্রত ও অসহায়ত্ববোধ করছে তাদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এবং শিশুরা যৌনতা বিষয়ক প্রশ্নগুলিতে পূর্বের তুলনায় বেশী লজ্জা পেতে শুরু করেছে। যদি এমনটা হয় তবে সেটাও খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় এক্ষেত্রে বাবা-মা এর কর্তব্য হলো নিজ দায়িত্বে বাচ্চার সাথে একান্তে কথা বলা, সময় দেয়া এবং তাদেরকে উৎফুল্ল রাখা পাশাপাশি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মসমূহ বর্ণনা করা। এ সময়ে বাচ্চা যদি নিজে থেকেই যৌন সম্পর্কে কৌতূহলী হতে পারে এবং আপনাকে প্রকাশ্যে জিজ্ঞাসা করে তবে তা বাবা-মা এর জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবে গণ্য। যাইহোক হোক না কেন, বাচ্চার প্রাক যৌবনের মানসিকতা এগিয়ে চলছে সেটা বোঝা যাবে তাদের এধরনের আচরণে এবং এক্ষেত্রে অর্থাৎ যৌনতার বিষয়ে বাবা-মা কে যথাযথ আন্তরিকতা এবং সততা প্রদর্শণ জরুরি।
অবাক করার বিষয় যে, বিভিন্ন মনো-সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুর পর্ণ মুভি বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য ছবি দেখা শুরু করার গড় বয়স দশ বছর। তথ্য প্রযুক্তি এ যুগে এ ধরনের বিষয়গুলি সর্বত্রই বিদ্যমান ও সহজলভ্য কোনভাবেই এটা বন্ধ করার ক্ষমতা বাবা-মা রাখেন না। মনে রাখা প্রয়োজন পর্নোগ্রাফি বাচ্চাদের জন্য নয় এবং তাদের এ ধরনের দৃশ্য দেখার অর্থই হলো তাদের মনের উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি। তাই এধরনের বিষয়ে সন্তানের হোঁচট খাওয়ার আগেই বাবা-মা কে তাদের সন্তানকে গুরুত্বের সাথে যৌন বিষয়ে সুশিক্ষিত করার কোন বিকল্প নাই। তাদেরকে বোঝাতে হবে যৌন প্রতিক্রিয়াণের চিত্র বা ভিডিও শুধু অতিরঞ্জিতই নয় বরং কিছু নোংরা মানসিকতার লোক দ্বারা কৃত বাস্তবতার বিকৃতি বৈ কিছু না, প্রেমের সম্পর্কের বা যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি সম্মাণ প্রদর্শণ জরুরি এটা বাচ্চাকে ভালোভাবে অনুধাবন করাতে হবে, এখানে জোড়জবরদস্তির কোন সুযোগ নাই বা সমাজের নিকটও কাঙ্খিত নয়। বাচ্চারা যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবে কখনও কখনও প্রাপ্ত বয়ষ্কদের সেক্স করা বা ছবি বা ভিডিও দেখে ফেললে তারা অনৈতিক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে এ বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়ে হলেও এ বয়ষটাই যথার্থ সময় যথাযথ যৌন জ্ঞান দান করা।
বাবা-মা যখন বাচ্চার সাথে বয়ঃসন্ধি নিয়ে কথা বলবেন তখন তাকে যৌন মিলনের কিছু প্রাথমিক বিষয়, যৌন অনুভূতি ও মাস্টারবেশনের স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতা সম্পর্কেও কথা বলতে হবে। এক্ষেত্রে বাচ্চার নিকট থেকে নির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন না থাকলেও নিজ থেকেই কথোপকথনের মধ্যে বিষয়গুলি নিয়ে আসতে হবে, তা না হলে বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কারও মাদ্যমে ভুল শিক্ষা গ্রহণপূর্বক ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। বর্তমান যুগে আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে কৈশরে ডেটিং এ যাওয়া বা বড়দের মত আচরণ করা বাচ্চাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে এক্ষেত্রে বাবা-মা কে সতর্কতার সাথে আগাতে হবে, বাচ্চাকে বোঝাতে হবে আগে নিজের জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়া, দায়িত্বশীল হওয়া এবং যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করা নিশ্চিতপূর্বক এসকল কাজ করা শোভন তবে অন্যায় নয়। তারপরও ডেটিং বিষয়ে বাচ্চার আগ্রহ থাকলে পারস্পরিক সম্মাণ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শণ যে ডেটিং এর গ্রাউন্ড রুলস এবং নীতি নৈতিকতা রক্ষা জরুরি তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।
বাচ্চার বয়স আঠার বা তদুর্ধ্ব ব্যাপ্তিতে
সন্তান এখন আর শিশু বা কৈশোর না, সে পরিণত এবং বাবা-মা এর দেয়া এ যাবৎ সঠিক যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা প্রযুক্তিতে বাবা-মা এর চাইতেও এগিয়ে এবং উন্নত। এ বয়সে কোন সমস্যা হলে বাবা-মা এর উচিত সন্তানের সাথে আলোচনা করা এবং কোন সমস্যা থাকলে তার সমাধানের পথ দেখানো।
সন্তানের কোন বিপরীত লিঙ্গের পার্টনার বা অংশীদার থাকলে তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই কারণ ইতিমধ্যে তিাকে যৌনতা, যৌন রোগ, গর্ভনিরোধক, গর্ভপাত, পারস্পরিক সম্মাণ প্রদর্শণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে সুশিক্ষিত করা হয়েছে। এরপরও কোন সমস্যা হলে এড়িয়ে যাওয়া বা সংকোচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে কেননা সন্তানের সুন্দর জীবন প্রস্তুত করার দায়িত্ব বাবা-মা এর কেননা হঠাৎ ঋতুচক্রের কারণে ঘাবড়ে গিয়ে বিদ্যাপীঠের টয়লেটে মাথা ঘুরে পড়ে আহত হোক, অহেতুক লজ্জা পাক, কিংবা বাচ্চা কারও নিগ্রহের শিকার হোক, বা সন্তান লিঙ্গ বৈষম্য করুক কিংবা যৌননিপীড়িত হয়ে আত্মহত্যা করুক তা নিশ্চয়ই কোন বাবা-মা চাইবেন না।
অভিভাবকত্বে সন্তানের সুস্থ্য যৌন শিক্ষায় সার্বিক করণীয়
যৌনতার নৈতিক ও মানসিক বিষয়াবলীতে বাবা-মা এর মনোনিবেশকরণ। সন্তানকে অবশ্যই বুঝাতে হবে যে ঘনিষ্ঠতা দুটি প্রেমময় মানুষের মধ্যে জীবনেরই একটি অংশ যা হতে হবে সমাজের কাঙ্খিত ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে। যৌনতা শিশু জন্মের দিকে ধাবিত করে বিধায় যৌন মিলন একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার উপর বিশেষ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে যার জন্য পরিপক্কতার প্রয়োজন অর্থাৎ এটা নাবালকের জন্য নয়।
সন্তানকে যৌনতা সম্পর্কে প্রথম তথ্য প্রদান নির্ভর করে বাবা-মা কিভাবে উপস্থাপন করছেন তার উপর। এ বিষয়টি শান্ত এবং একান্ত আলাপচারিতা শিশুকে যৌন বিষয়ে যথাযথ মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে এ আলাপচারিতায় বাচ্চা যেন বিব্রত বোধ না করে এবং বিষয়টি যেন তাদের নিকট নিষিদ্ধ মনে না হয়।
শিশুর কথা শুনতে হবে ও তাকে বিশ্বাস করতে হবে
অভিভাকগণের শিশুদের কথা না শোনা বা গুরুত্ব প্রদান না করার প্রবণতা রয়েছে। বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে তার কথা শোনা এবং গুরুত্ব প্রদান বিশেষভাবে জরুরি। ব্যর্থতায় ভবিষতে অনেক বড় ধরনের মাশুল দিতে হতে পারে, শিশু আতঙকগ্রস্থ হতে পারে এমনকি তার মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হতে পারে। অনেক সময়ই বাচ্চারা নিজেদের যৌন সমস্যার কথা বাবা-মা এর অগ্রাহ্যতার কারণে বলতে পারে না ফলে তারা সমবয়সী বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে, বন্ধুদের এ বিষয়ে সঠিক ধারনা না থাকায় বা চলতি পথে ফুটপাতের স্বস্তা লেকচার শুনে ভুল পরামর্শ দেয় যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আণে। অথচ বাচ্চারা যদি বিষয়গুলি বাবা-মা, বড় ভাই-বোন বা আস্থাভাজন অভিভাবকের নিকট শেয়ার করতে পারত তাহলে হয়ত ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেত।
মা-বাবার উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করা তা না হলে বাচ্চারা বন্ধুদের কাছে একান্ত ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করলে বয়সের অপরিপক্কতার কারণে অন্য বাচ্চারা মজা নেয় বা আামরা বড় হয়ে গেছি বা আমাদের সিগারেট খাওয়া উচিৎ বা আমাদের মা-বাবার সাথে সবকিছু শেয়ার উচিৎ না, বা অন্যরা জানলে আমাদের ক্ষ্যাপাবে এ ধরনের উদ্ভট উদ্ভট ধারণা প্রদান করে! এসব কথা বিবেচনা করে শিশু কিশোররা মা-বাবার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করে।
সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেশি পছন্দ করে বাচ্চারা, বিশেষ করে যৌনতা নিয়েই বেশি আলাপ আলোচনা হয় বন্ধু মহলেই। যথাযথ যৌন শিক্ষা না থাকলে যার শেষ পরিণতি দেখা যায় টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় বড় হেডলাইনে। অভিভাবক মহলে তখন ছি! ছি! করা ছাড়া ব্যতীত আর কিছু করার থাকে না অথচ এ ঘটনার জন্য অনেকাংশেই অভিভাবকের অসেচেতনাতাই দায়ী।
সঠিক যৌন শিক্ষার অভাবে অনেক কিশোর-কিশোরীকে বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে কিশোর অপেক্ষা কিশোরীরাই বেশি যৌন কুশিক্ষার শিকার হচ্ছে। ছেলেরা সবকথা অন্যের সামনে বলতে পারলেও মেয়েরা নিজেদের দুঃখ কষ্টের কথা অন্যের কাছে বলতে দ্বিধাবোধ করে। ফলে ছেলেদের মতো তারাও নিজেদের সব কথা সমবয়সী বান্ধীদের কাছে বলে যারাও এসম্পর্কে নিজেরাই পরিষ্কার ধারণা রাখে না। যৌনতা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে কিংবা পথে-ঘাটের মুখরোচক সস্তা ভাষণের প্রচারিত ও প্রচলিত কুসংস্কারগুলি শুনে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের যৌন জীবন নিয়ে নানান দুশ্চিন্তায় ভোগে এবং কুসংস্কারগুলির সাথে নিজেদের জীবনাচার মিলিয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
মা-মেয়ে বা বাবা-ছেলে বা বাবা-মা-সন্তান বা ভাই-বোনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা জরুরি
মানব জাতির জন্ম ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি মানুষই শিশু অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে পরিপক্কতার দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ কেউই যুবক বা বয়ঃবৃদ্ধ হিসেবে জন্ম নেন নাই। দেশ ও জাতি গঠণে তথা লিঙ্গ সমতা নিশ্চিকরণার্থে সর্বেপরি সুস্থ নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন জনবল তৈরিকরণে আজকের শিশুটিকে নিয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা আমাদের সকলের উচিৎ। যৌন শিক্ষার অভাবে প্রিয় সন্তানটি খারাপ পথে চলে যাচ্ছে অথবা আন্দময় বয়সটুকু দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাচ্ছে। তাই তাকে বুঝাতে হবে যে, তার বয়ঃসন্ধিক্ষন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, নীতি নৈতিকতাপূর্ণ জীবনকে উপভোগ করতে শেখাতে হবে। প্রিয় বাচ্চাটি কার সাথে চলাফেরা করে, কে তার বন্ধু, তাদের আচার আচরণ কেমন ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি সতর্ক নজর দিতে হবে।
অনুরূপভাবে পরিবারের ছোট ভাই অথবা বোন যখন বয়ঃসন্ধিক্ষণে চলে আসবে তখন তার সাথে বন্ধুর মত মিশতে হবে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে বাচ্চাদের আন্ডার গার্মেন্টস উপহার দেয়া এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝানো যেতে পারে, এতে মানসিক দুরত্ব কমে যাবে। একটা বিষয় জরুরি যার যা প্রয়োজন এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই সামর্থ্য অনুযায়ী দিতে হবে, কম কিংবা বেশি নয়। আঠার বছরের পূর্বে শিশুর হাতে দামী মোবাইল সেটা দেওয়া একেবারেই অনুচিত তবে শিক্ষার জন্য দিতে হলে তা নিয়ন্ত্রিত উপায়ে দিতে হবে।
সঠিক যৌনশিক্ষা প্রদান মূলত পরিবারেরই দায়িত্ব
পরিবারের বাইরের কেউ (বাবা, মা, ভাই, বোন ব্যতীত) বা চাচা, মামা, খালু, ফুফা, এমনকি স্কুল শিক্ষককেও নিজ বাচ্চার যৌনশিক্ষার দায়িত্বে থাকতে দেয়া যাবে না কারণ এটা শুধু বাবা-মা বা বড় ভাই-বোনেরই দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে শারীরিক গঠণ স্বাভাবিক থাকলে বয়ঃসন্ধি সাধারণত মেয়েদের আট থেকে তের বছর এবং ছেলেদের নয় থেকে পনের বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যায়। প্রারম্ভিক বয়ঃসন্ধি ক্রমবর্ধমান তাই বাচ্চাদের শারীরিক, মানসিক এবং হরমোনাল পরিবর্তনগুলি যা তারা অনুভব করবে তা জানানোর পাশাপাশি তাদেরকে বিপরীত লিঙ্গের অভিজ্ঞতাও জানানো প্রয়োজন তা না হলে কৌতুহলবশত তারা সেদিকে আগ্রহ প্রকাশ করবে, বন্ধুদের অভিজ্ঞতা অর্জনের পূর্বেই বিসয়টি জানানো উচিত।
বাচ্চা যখন স্কুলগামী হয় তখন কিছু শিশু বাবা-মাকে যৌন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা বোধ করতে পারে সেক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে সেগুলি হলো:
– বাচ্চারা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ অনুভব করতে পারে এবং তাদের দেহকে সমবয়সীদের সাথে তুলনা করতে পারে। তাদের এ আচরণের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে হাসি বা বিব্রতকরণ থেকে দুরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাবা-মা এ বয়সে কি করেছেন সে অভিজ্ঞতা বলা যেতে পারে;
– বিদ্যালয়ে বা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে বা অন্য কোথাও নিজেকে যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতনের হাত নিজেকে কিভাবে রক্ষা করা যেতে পারে বা সেখানে কোন ব্যক্তি অভদ্রভাবে তার শরীরের স্পর্শ করতে চাইলে তা কিভাবে প্রতিহত করতে হবে বা কার সাহায্য নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে;
– যেকোন পরামর্শ প্রদানের পূর্বে শিশুর মতামত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। বাচ্চা যদি বাবা-মা এর সঠিক পরামর্শ অনুসরণে অনীহা প্রকাশ করে তবে বাচ্চা কি কি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে তা উল্লেখ করতে হবে;
– বাচ্চা কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে বাবা-মা যদি এড়িয়ে যান বা বিব্রত বোধ করেন তবে বাচ্চা অনুরূপ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকবে এবং অন্যদের নিকট থেকে জানতে চাইবে সেটা বাবা-মা এর জন্য সুখকর নাও হতে পারে তাই এক্ষেত্রে বাবা-মা’কে এড়িয়ে যাওয়া বা বিব্রত হওয়া বা লজ্জা পাওয়া ইত্যাদির মত নেতিবাচক কাজ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি;
– বাবা-মা এর নিজস্ব পছন্দ ও আচরণ এবং মতামত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি এবং দর্শন বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে অর্থাৎ কোনটি উচিত এবং কোনটি অনুচিত সে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা জানা থাকা আবশ্যক;
– বাচ্চার সঠিক নৈতিক বিকাশ ও উন্নত চরিত্র নিশ্চিত করতে বাবা-মা‘কে এমন উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেখানে পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মাণ, দায়িত্ববোধ, সততা, শেয়ারিং, কেয়ারিং, লিঙ্গ বৈষম্যহীনতা, স্যাক্রিফাইস ইত্যাদি বিদ্যমান।
ছেলে সন্তান এর নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হবে
অনেকেরই ধারণা মেয়ে সন্তানই শুধু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, ছেলে সন্তানও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা এরা মেয়েদেরকে কোনটা খারাপ স্পর্শ বা কোনটা ভালো স্পর্শ শেখায় কিন্তু ছেলেদের বেলায় উদাসীন। এখন সময় হয়েছে এ পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার কেননা নির্যাতনকারীরা প্রতিনিয়তই তাদের কৌশল পরিবর্তন করে থাকে এবং বিকৃত মানসিকতার হয়ে থাকে। বাস্তব প্রেক্ষাপটে ছেলে শিশু হোক বা মেয়ে শিশু উভয়েই কিন্তু সমান ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি সকল বাবা-মা এরই বিবেচনায় রাখা উচিত। শিশুকে বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাবক ব্যতীত অন্য কারও কোলেই দেয়া যাবে না বা চুমু দিতে দেয়া যাবে না। এটা একদিকে যেমন শিশু জীবাণূ থেকে রক্ষা পাবে অন্য দিকে তার যৌন অঙ্গ সংবেদনশীলতা (Sensitized) থেকে দূরে থাকবে। এটা মনে রাখা জরুরি বেশীর ভাগ শিশুই তুলনামূলকভাবে কাছের আত্মীয় স্বজন বা পরিবারের সদস্য দ্বারাই যৌন নিগ্রহের শিকার হয় প্রথম যতটা না অপরিচিতজনদের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
কোমলমতি শিশু যাতে যৌন হয়রানির মত পরিস্থিতির শিকার না হয় সে লক্ষ্যে শিশুটিকে নিজেকে সুরক্ষার বিষয়গুলো ভালোভাবে শেখাতে হবে। শিশু যাতে বাবা-মা বা আস্থাভাজন অভিভাবককে সব কথা বলতে পারে সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলেই অনাকাঙ্খিত ও ঘৃণ্য যৌন হয়রানির ঘটনার শুরু থেকেই শিশুটি তার বাবা-মা’কে অবগত করতে পারবে। নিজের সন্তানকে বিশ্বাস করতে হবে, সে যাতে মনে না করে যে বড়রা তার কথা গ্রাহ্য করেন না বা শোনেন না। যৌন হয়রানির মত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে শিশু যাতে ‘আপনি আমার সঙ্গে এ রকম কাজ করবেন না’ বা ‘আমি এটা পছন্দ করছি না, আমি সবাইকে বলে দেব’ অথবা ‘না’ বলা সাহস করে বলতে পারে, সেভাবে তাকে গড়ে তুলতে হবে এবং আত্মবিশ্বাসী করতে হবে।
শিশুকে ‘আমার শরীর, আমার সীমানা’ কৌশল ব্যবহার করা শেখাতে হবে। যাতে শিশু তার শরীরের সীমানা রক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকে। ‘দুহাত দিয়ে তৈরি ত্রিভুজ আকার, সেই তো শরীরের সীমানা সবার’ বিষয়টি শিশুদের হৃদয়াঙ্গম করে দিতে হবে, এটা নিশ্চিত করা গেলে সে যেমন নিজের শরীরের সীমানা নিরাপদ রাখতে চেষ্টা করবে পাশাপাশি অন্যের শরীরের সীমানার অধিকার ও গুরুত্বও অনুধাবন করতে পারবে।
শিশুর যেহেতু শিক্ষাই শুরু হয় পরিবার থেকে সেহেতু যৌন শিক্ষাও সাধারণ শিক্ষাভূক্ত করে বাবা-মা এর উচিত তাদের এ সংশ্লেষে যাবতীয় অস্বস্তি এবং লজ্জা ঝেড়ে ফেলে শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর ও সুস্থ মনের অধিকারী হতে সহায়ক ভূমিকা পালনে ব্রত হওয়া। সকলে মিলে চেষ্টা করেই দেখি না টেকসই উন্নয়ন এর এ সংশ্লেষে লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যসমূহ বিশেষ করে,
– লক্ষ্য ৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ);
– লক্ষ্য ৪ (শিক্ষা সংশ্লিস্ট);
– লক্ষ্য ৫ (নারী-পুরুষ সমতা);
– লক্ষ্য ৮ (শোভন কার্যাংশটুকু);
– লক্ষ্য ১০ (অসমতা হ্রাস);
– লক্ষ্য ১৬ (শান্তি ও ন্যায় বিচার অংশ);
– এবং লক্ষ্য ১৭ (লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব) অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারি কিনা।
শেষ কথা হলো অবশ্যই অবশ্যই প্রত্যেক শিশুকে যৌন শিক্ষা দিতে হবে এবং এ শিক্ষার শুরুই হবে পরিবার থেকে। পারিবারিক শিক্ষাই নিশ্চিত করতে পারে শিশুর যথাযথ নীতি নৈতিকতাপূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর মানসিকতার এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পায় একজন মানবিক মূল্যবোধের মানুষ সেইসাথে বৃদ্ধি পাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং দূর করবে লিঙ্গ বৈষম্যতা। যৌনজ্ঞান বিষয়টি তখনই পরিপক্ক হবে যখন বাবা-মা শিশুকে পারিবারিকভাবেই তার ভিতরে যথাযথ সামাজিক মূল্যবোধ, সুশিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সততা, নৈতিকতা, লিঙ্গ ভেদাভেদ দূর, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সম্মাণ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারবেন। পৃথিবীর সকল শিশু নিরাপদ থাকুক, সকল প্রকার শৈশব নির্যাতন (Childhood Abuse) থেকে মুক্ত থাকুক সর্বোপরি সুস্থ পরিবেশে সুস্থভাবে বেড়ে উঠুক, সুস্থ ও সুন্দর নৈতিকতা জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়ে উন্নত চরিত্রের ধারক ও বাহক হয়ে বেড়ে উঠুক এবং পরিবারই এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করুক সে শুভকামনা থাকল।
সকলের জন্য রইল শুভকামনা।
– ©মোঃ আবদুর রহমান মিঞা
(‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পদকপ্রাপ্ত)
গ্রন্থপঞ্জি:
প্যারেন্টিং এ যৌন শিক্ষা বিষয়ক লেখনীতে যে সকল বই, আর্টিকেল, জার্নাল, কলাম, বক্তব্য, বক্তৃতা ইত্যাদি আমাকে ভাবিয়েছে এবং এ সংশ্লেষে তথ্য, জ্ঞান ও উপস্থাপনে সমৃদ্ধ করেছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সে সকল লেখকদের প্রতি।
www.armiah.com
©মোঃ আবদুর রহমান মিঞা (‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পদকপ্রাপ্ত)