একটা ভালো প্রতিষ্ঠানেরও কর্মীরা কেন চলে যান বা চাকরি ছেড়ে দেন?

একটা ভালো প্রতিষ্ঠানেরও কর্মীরা কেন চলে যান বা চাকরি ছেড়ে দেন?

©মোঃ আবদুর রহমান মিঞা (‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ পদকপ্রাপ্ত)

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যখন অনেকেই ভাবছেন মানুষ কাজ হারাবে কিংবা রোবট বা মেশিন মানুষের স্থান দখল করে নিবে ঠিক তখনও কর্মীরা কেন ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা স্বত্ত্বেও কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন? যেখানে আশেপাশে অসংখ্য চাকরি প্রার্থীর ভীড়! নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আবেদনপত্র দাখিলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর কারণ অনুসন্ধানে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতিবেদনগুলো পড়লে নতুন চিন্তার খোড়াক পাওয়া যায়।

মানব সম্পদ ব‍্যাবস্থাপকগণ অভিযোগের সুরে বলে থাকেন শত শত আবেদনের ভিড়ে নাকি দিন শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত দক্ষ কর্মী খুঁজে পায় না। আবার যে দু-একজন দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদের নাকি ধরে রাখা যায় না। আমার আলোচনার বিষয়বস্তু বর্তমান কর্পোরেট কালচারে প্রতিষ্ঠানগুলো কেন তাদের কর্মী ধরে রাখতে পারে না বা কর্মী কেন প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান?

অনেক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক বলে থাকেন যে, ভালো কর্মীরা এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান, তারা বর্তমান প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা না করে কেবলই নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যে সকল ব্যবস্থাপক এমন মন্তব্য করেন, তারা কখনও নিজেদের ভুলগুলো খোঁজার চেষ্টা করেন না বা তারা একবারও ভেবে দেখেন না ভালো কর্মীরা কেন প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়।

এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, ভালো কর্মী হতে হলে তাকে কাজে মনোযোগী, উদ‍্যমী এবং যত্নশীল হতে হয়, যারা কাজকে ভালোবাসেন ও উপভোগ করেন। তাই এটা নিশ্চিন্তেই বলা যায় যে, কাজ ভালোবাসা মানুষগুলো বারংবার তার কাজ এবং প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে চান না। তাহলে প্রশ্ন হলো, ভাল কর্মীরা চাকরি ছাড়েন কেন? এর জবাব খুঁজতে গেলে দেখা যায় এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব। কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হারায়।

একটি প্রতিষ্ঠান সেরা বা ভালো মানের-এ কথার মূল বক্তব্যই হলো প্রতিষ্ঠানটিতে সেরা মানের কর্মীরা কাজ করেন। তাই প্রতিষ্ঠানের এ সেরাত্ব টেকসই করার লক্ষ্যে ভালো কর্মী নিয়োগ দেয়া এবং তাঁকে ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে উঁচু স্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। নিম্নে এ সংশ্লেষে কিছু সাধারণ চ্যলেঞ্জ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

কর্মীর পরিচর্যা

স্বপ্রণোদিত এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবেদিত প্রাণ দক্ষ কর্মী ধরে রাখার জন্য নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন। মূলত মানব সম্পদ বিভাগকেই এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। ভালো কর্মীকে অনুপ্রানিত (মোটিভেটেড) করার জন্য যেমন কৌশল প্রয়োগ করতে হয়, তেমনি সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করতে হয়। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতাও করতে হতে পারে। যা নিশ্চিত করা প্রতিষ্ঠানের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচ্য।

কর্মীর থাকা বা না থাকা বিষয়ক উন্নাসিকতা

কর্মী চলে গেলে প্রতিষ্ঠানের কিছু যায় আসে না-এ ধরনের মানসিকতাও অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে থাকে যা থেকে বেরিয়ে আসাটা কষ্টকর। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, ‘ভালো ও দক্ষ কর্মী’ চলে গেলে প্রতিষ্ঠানের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে থাকে।

কর্মীর মনের খবর না রাখা

কর্মীকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সে কেমন আছে, কর্মী সব সময়ই বলবে ভালো আছি, কোনো সমস্যা নেই স্যার, এ-জাতীয় ইতিবাচক উত্তরই তিনি দিবেন, কখনই মনের প্রকৃত অবস্থা বলবেন না। তার বাস্তব অবস্থা জানানোর জন্য কর্মীকে উৎসাহ দিতে হবে, মানবসম্পদ বিভাগ থেকে বলতে হবে ‘আপনার জন্য এ বিভাগের দরজা সব সময় খোলা। কোনো সমস্যা হলেই যোগাযোগ করতে পারবেন’। তাকে কর্তৃপক্ষের নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে হবে যে, কিভাবে চাকরির শুরুতে নিজের সমস্যার কথা মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করে উপকৃত হয়েছিলেন। কর্মীকে বোঝাতে হবে সমস্যা প্রাথমিক স্তরেই চিহ্নিত করা ও সমাধান করা প্রয়োজন।

মানবসম্পদ বিভাগ একসঙ্গে শাসক ও বন্ধু হলে কর্মীরা উপকৃত হতে পারে। তাই কর্মীর মনের খবর জানার জন্য আন্তঃব্যাক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা আবশ্যক।

কর্মীর ক্যারিয়ার গঠনে সহয়তা

ভিন্ন ভিন্ন কর্মীর নিজস্ব ক্যারিয়ার গঠনে স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য থাকে তাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বা বসকে তাঁর অধীনস্থ কর্মীর ক্যারিয়ার সংক্রান্ত দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। কর্মীকে এ সংশ্লেষে যথাযথ নির্দেশনা দিতে হবে। যেহেতু মানবসম্পদ বিভাগের চেয়ে কর্মীর অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা বস তাঁর সবচেয়ে কাছে থাকেন সেহেতু তাকেই প্রাথমিকভাবে কর্মীর দৈনন্দিন দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কর্মীর মানসিক অবস্থা যাচাই করা হয় না, ফলে কর্মীর মানসিক চাপ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ থাকে না। অথচ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিষয়টি জরুরি। খুব কম ক্ষেত্রেই কর্মীকে নিয়োগ দেয়ার পর মানবসম্পদ বিভাগ তাঁর খাপ খাওয়ানোর বিষয়টির প্রতি নজর দেয়। ফলে নিরবে নিভৃতে সবার অগোচরে কর্মী তাঁর উৎসাহ হারাতে থাকেন এবং একসময় ঝরে পড়েন।

কর্মীর মূল্যায়নে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ

অনেক প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী ভালো নাকি মন্দ, সেটা বোঝার বা পরিমাপের জন‍্য গ্রহণযোগ্য ভালো কোন পদ্ধতি নাই। মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়ন করার জন্য বার্ষিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে যা সবার জন্যই একই ধরনের একটা ফরম্যাট। এই ফরম্যাট অনুযায়ী বছর শেষে কর্মীর সঠিক মূল্যায়ন কতটুকু সম্ভব বা যিনি ফরম্যাট অনুযায়ী প্রতিবেদন দেন তার বিচক্ষণতাই বা কতটুকু সে প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূল‍্যায়নকারী নিজেই প্রণীত ফরম্যাটের বিষয়বস্তু বা প্রতিবেদন প্রস্তুত বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান রাখেন না ফলে তার অধ:স্তন কর্মীর সঠিক মূল‍্যায়ণ হয় না বা আদর্শ কোন প্রতিবেদন তৈরি হয় না। আবার বছরশেষে মূল‍্যায়নকারী যখন কর্মীর মূল‍্যায়ন করতে বসেন তখন তার মন মানসিকতার প্রচ্ছন্ন একটা প্রভাব পরে মূল‍্যায়ন প্রতিবেদনে। এসমস‍্যা নিরসনে বছরব‍্যাপী নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি, যাতে খুব সহজেই কর্মীর দক্ষতা মূল্যায়নের পাশাপাশি তার আগ্রহ, সৃজনশীলতা, নেতৃত্বদানে সক্ষমতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। প্রয়োজনে এ বিষয়ে মূল‍্যায়নকারীকেও যথাযথ প্রশিক্ষেণর আওতায় এনে কর্মীর সঠিক ও গ্রহণযোগ্য মূল‍্যায়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক।

কাউন্সিলিং এর অভাব

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই যথাযথ কাউন্সেলিংয়ের চর্চা নাই। ভালো ও দক্ষ কর্মীকে ধরে রাখার জন্য বা তাকে অনুপ্রানিত করার জন্য অন্যতম উপায় হলো কাউন্সেলিং। অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী উর্ধ্বতন বস ও মানবসম্পদ বিভাগ উভয়ের সমন্বয়ে কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে কর্মীর মানসিক সত্তার উৎকৃষ্ট পরিচর্যা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

ধাপে ধাপে সুযোগ-সুবিধা প্রদান

কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে যেমন একসঙ্গে সব সুবিধা প্রদান করা উচিত না আবার দীর্ঘ ব্যবধানও ঠিক না। যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মুদ্রাস্ফীতি হয়, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়, বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়, কর্মীর পারিবারিক খরচ বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি নির্দেশকসমূহ বিবেচনায় নিয়ে এবং বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য ও সমন্বয় করে কর্মীর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করা উচিত।

কর্মীর সমস্যা চিহ্নিতকরণ

কর্মীর সমস্যা যত দ্রুত চিহ্নিত করা যায় তত দ্রুত তাঁকে ধরে রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে, যাতে কর্মীর ঝরে পড়ার হার হ্রাস পায়। প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মীর অনেক সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন

মানবসম্পদ বিভাগকে ভালো ও দক্ষ কর্মী ধরে রাখতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন তা হলো- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন। ব্যবস্থাপনার মধ্যম পর্যায় থেকে জ‍্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ কর্মীর মধ্যে সমন্বয় এ বিভাগের জন্য আর একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। যদিও খুব কম ক্ষেত্রেই মানবসম্পদ বিভাগ কর্তৃপক্ষকে কর্মীর সত্য অবস্থান বোঝাতে সক্ষম হয়। ফলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বড় বড় প্রতিষ্ঠান দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী হারায়। মানবসম্পদ বিভাগের ব‍্যার্থতার দরুন অন‍্যান‍্য বিভাগের কর্মী ধরে রাখার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর করার কিছুই থাকে না।

যোগ্য কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির চূড়ায় নিয়ে যায়। কিন্তু ব্যবস্থাপনার কিছু ভুল বা অসংলগ্নতায় সে সকল যোগ্য কর্মীরা তাদের কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পরেন। কর্তৃপক্ষের সাথে কর্মীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় নয় কিন্তু সুসম্পর্ক থাকাটা জরুরি। নচেৎ দৈনন্দিন কাজের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কর্মীদের একটি অস্বস্তিকর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এবং একজন খারাপ স্বভাবের বসের কারণে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খুব নামিদামি প্রতিষ্ঠান, বেতন-ভাতাও বেশি, সম্মানও আছে তবুও দেখা যায় কর্মী কাজটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, এর একমাত্র কারণ হলো ‘বস বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা’ এর আচরণ। এ বিষয়ে প্রবাদ আছে- “প্রতিষ্ঠান নয়, চাকরি করুন বস দেখে”। খারাপ জায়গায় পোস্টিং হলে বস যদি ভাল হয় তবে খারাপ জায়গাও স্বর্গ হয়ে যায় আর এর বিপরীতে যদি পোস্টিং ভালো জায়গায় হয় এবং বস যদি খারাপ হয় তবে ভালো জায়গায়ই নরকের স্বাদ পাওয়া যায়। কারণ, ভুল বসের পাল্লায় পড়লে কর্মীর ক্যারিয়ারের ধুলিস্যাৎ হতে সময় লাগে না।

নিম্নবর্ণিত কিছু কারণে যোগ্য কর্মীরা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান-

খারাপ আচরণ

গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনন্দিন অসন্তোষের একটা প্রতিকূল প্রভাব পড়ে সার্বিক উৎপাদনশীলতার উপর। বসদের খারাপ আচরণের কারণে ভালো কর্মীদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে হয়। রুঢ়তা, অহেতুক দোষ দেওয়া, ব্যঙ্গ করা, নিরাপত্তাহীনতা, যথাযথ সম্মানের অভাব এবং প্রতিহিংসার কারণে কর্মীদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। উর্ধ্বতনের বিরক্তিকর এবং খারাপ আচরণ একটি ভালো কাজের পরিবেশের অন্তরায়।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

কর্মী ধরে রাখার জন্য প্রশংসা এক বিশাল উপকরণ যা দিয়ে খুব কঠিন মনের মানুষকেও নরম করা যায় বিধায় কর্মীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে ও তার সাফল্যে শুভেচ্ছা জানানো ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আবার কোনো কোনো কর্মী মনে মনে আশা করতেই পারেন ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি নিশ্চয় পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য। সুতরাং ভালো কর্মীদের কাজের সাফল্যে প্রসংশা ও পুরস্কৃত করা উচিত। ব্যর্থতায় নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের মন আশাহত হতে পারে।

মতামতের মূল্যায়ন

দক্ষ, প্রতিভাবান ও নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের মতামতের শতভাগ মূল্যায়ন করা উচত। কেননা তারা কোনো প্রস্তাব করলে তা ভেবে চিন্তেই করেন। সুতরাং দক্ষ কর্মীদের নতুন ভাবনা ও সৃজনশীল কাজের মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়। অন্যথায়, অবমূল্যায়ন দক্ষ কর্মীদের আত্মসম্মানে আঘাত হানে যা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আরও একটি কারণ। অনেকেই মনে করে থাকেন আর যাই হোক কর্মীদেরকে কথায় কথায় প্রশংসা করা যাবে না; তাতে তারা পশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠে যাবে। কথাটা ঠিক নয়, দুই এক জন হয়তো নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যেতে পারে কিন্তু একজন মানব সম্পদ কর্মী নিশ্চয়ই ভালো জানেন যে যোগ্যতার বেশি প্রাপ্তি আশাকারী কর্মীদেরকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অতএব একজন কর্মী একটা উল্লেখযোগ্য কাজ করলে সাথে সাথে একটা আন্তরিক হাসি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত, এতে সুবিধা অনেক যেমন- কর্মী খুশি থাকবে, প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদের কাছে কর্তৃপক্ষের এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম তৈরি হবে, কর্মীরা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাবে না। তাই কর্মীদেরকে ভালো কাজে প্রশংসা করতে হবে।

কর্মীর দক্ষতাকে হেয় করা

কর্তৃপক্ষের কাজই কর্মীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের নতুন নতুন কাজে উৎসাহিত করা, নিয়মিত নতুন নতুন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে কর্মীদের যোগ্য করে তোলা ইত্যাদি। অথচ কিছু কিছু অধিকারিক আছেন যারা শুধু কর্মীদের ভুল খুঁজে বেড়ান, তাদের মাথায় সারাক্ষণ ছাঁটাইয়ের চিন্তা কিংবা কর্মীর দক্ষতাকে হেয় করা বা নিজের প্রতিদন্দ্বী ভাবা। অথচ কর্মীকে গ্রুমিং করাও যে তার দায়িত্ব, সেটা তিনি ভুলে যান। তার সঙ্গে কাজ করলে কিছু শেখা যাবে না, এটা বুঝতে পেরেই যোগ্য কর্মীরা চাকরি ছেড়ে দেন। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে অনেক সময় উর্ধ্বতনরা নিম্নের কর্মীর উপর দোষ চাপিয়ে দেন এবং তাদের বিশ্বস্ততা, দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই অনৈতিক আচরণ কোনো কর্মীর কাছেই গ্রহণযোগ্য হয় না। মনোযোগী ও দক্ষ কর্মী যে কাজেই হাত দেন না কেন সে কাজেই ভালো ফলাফল আসে। এযাবৎ যত প্রতিষ্ঠান সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে তাদের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সৃষ্টিশীল কর্মীদের গুণের কদর করেছে তারা। কিন্তু যে সকল প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল কর্মীকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে তারা দাঁড়াতে পারে নাই বা কোন সুনাম অর্জন করতে পারে নাই। কারণ, সৃজনশীল কর্মীকে হেয় প্রতিপন্ন করলে কাজে তাদের অনীহা চলে আসে। অনেক উর্ধ্বতন মনে করেন একজন নাইতো কি হয়েছে অপরজন কাজটা করবে, কিন্তু তারা এটা ভাবেন না যে, কাজ হয়ত হবে তবে সেটা পূর্বের ন্যায় হবে কি না বা প্রত্যাশিত ফলাফল বয়ে আনবে কি না। যেসকল প্রতিষ্ঠান এমন বিপরীতমুখী কাজে পারদর্শী সেসকল প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত ততোই অন্ধকার। মনে রাখা প্রয়োজন দক্ষ কর্মীরা সবসময় সৃজনশীল হয়। তারা নতুন নতুন পদ্ধতি ও সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়। ব্যবস্থাপনার ভুলে যদি তারা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তবে তারা কাজের প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলে এবং নিজে ভুল জায়গার কাজ করছে বলে ভাবতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তারা চাকরি ছেড়ে দেয়।

কাজের পদ্ধতিগত জটিলতা

অনেক প্রতিষ্ঠানেই সুনির্দিষ্ট পন্থায় কাজ করার জন্য কোন সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকে না। যেমন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই কার কি কাজ, কাজটা কিভাবে করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) ও চার্টার অব ডিউটিজ থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের আছে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সুসংগঠিতভাবে সম্পাদন তথা সুশাসন নিশ্চিকরণার্থে আলোচ্য দলিল দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের। বর্ণিত দু’টি দলিল বা নথি না থাকায় কোন কোন প্রতিষ্ঠান এক জনের কাজ অপরজনকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করে ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ লোকের জন্য তা করা দুষ্কর হয়ে পরে বা কাজে গতি থাকে না। উদাহরণস্বরূপ সকালবেলায় অফিসে গিয়ে কর্মী দেখলেন যে, তার ডেস্কে এক গাঁদা ফাইল রেখে দিয়েছে কিন্তু কাজটা কিভাবে করবেন তার কোন নির্দেশনা নাই এমনকি পূর্বেও দেয়া হয় নাই বা আদৌও একাজগুলো তার আওতাধীন কি না সে বিষয়ক সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নাই, উর্ধ্বতনেরও থেকে সাপোর্ট নাই কিংবা অধঃস্তন ব্যাকআপ নাই। আবার অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো অধঃস্তন খবরদারি শুরু করেন, সে বিষয়ে আপত্তি দিলে উর্দ্ধতন ভর্ৎসনা করেন যা কর্মীর জন্য অবমাননাকর, এমন হলে ভালো কর্মীও চলে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক।

উর্ধ্বতনের রুক্ষ মেজাজ

মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ কিংবা স্বভাব অথবা অন্য কারণ যাইহোক না কেন, অনেক সময়ই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শর্ট টেম্পারড হয়ে যান। এমন ঘটনা হঠাৎ হঠাৎ হলে খুব বেশি ঝামেলা হয় না কিন্তু নিয়মিত বা ঘন ঘন রাগারাগি বা অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি কোন কর্মীই পছন্দ করেন না। এমনও দেখা গেছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নতুন ঝামেলার কাজ নিতে চান না অথচ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজটি জরুরি সেক্ষেত্রেও রাগারাগি বা নেতিবাচক আচরণ করে থাকে এক্ষেত্রেও কর্মী সেই চিরাচরিত তত্ত্ব ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’ পন্থা অবলম্বন করেন, হয়ত অল্প কয়েক জন প্রতিবাদ করার সাহস দেখান কিন্তু বুদ্ধিমানেরা নীরবে চাকরি ছেড়ে দেন। এক্ষেত্রে একজন বিচক্ষণ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজেকে স্ক্রিমিং না করে পরবর্তী সময়ে ঠাণ্ডা মাথায় সমস্যাটা নিয়ে কর্মীদের সাথে আলোচনা করতে পারেন বা বুঝিয়ে বলা যেতে পারে দক্ষ কর্মীর কাছ থেকে তিনি কি আশা করছেন।

বাড়তি কাজ বা অতিরিক্ত কাজের চাপ

প্রতিষ্ঠানে যে কর্মী যত নিবেদিত ব্যবস্থাপকও তার প্রতি তত বেশি নির্ভরশীল। ব্যবস্থাপক চান তার কাজ যেন যথাযথ ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। বিধায় বড় বড় কাজের চাপ সবসময় সেই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর কাঁধেই বর্তায়। ব্যবস্থাপক একজন দক্ষ কর্মীর হাতে কাজ দিয়ে সবসময় নিশ্চিন্ত থাকতে চান। কিন্তু তিনি একবারও ভাবেন না, যাকে এত কাজের চাপ দেওয়া হচ্ছে তার পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে এই সব কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে। ফলস্বরূপ, কর্মী সব কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন এবং তার কাজের মান খারাপ হতে থাকে। দক্ষ কর্মীরা যতটুকু কাজ করেন তা গুণগত মানসম্পন্ন হয়। এ কারণে বসরা তাদের দিয়ে সব সময় বাড়তি কাজ করিয়ে নিতে চান। তখন কর্মীদের কাছে পারদর্শিতা শাস্তি হয়ে দাঁড়ায়।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে বাড়তি প্রতি ঘণ্টার কাজে উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। কাজেই দক্ষদের দিয়ে বেশি বেশি কাজ করিয়ে লাভ নেই। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সপ্তাহে পঞ্চাশ ঘন্টার বেশি কাজ কর্মীর উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। আর সাপ্তাহিক শ্রম যদি পঞ্চান্ন ঘন্টার বেশি হয় তবে উৎপাদনশীলতা এমনভাবে হ্রাস পায় যে সে কর্মীর কাছ থেকে আর নতুন কিছু আশা করা যায় না। সুতরাং কাজের প্রতি আন্তরিক কর্মীকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেয়ার প্রবণতা দূর করতে হবে নচেৎ একটা সময় কর্মী কাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন।

চ্যালেঞ্জকে নিরুৎসাহিত করা

নতুন এবং তরুণ কর্মী যেকোন চ্যালেঞ্জিং কাজ হাতে নিতে বা সম্পাদন করতে সক্ষম কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি মনে করেন তার নিজের পক্ষে কাজটা করা সম্ভব না বিধায় অন্যরাও পারবে না, তাহলে ভুলটা সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায়। নতুনরাই উদ্যমী, সৃষ্টিশীল ও যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত থাকে তাই তাদের মাধ্যমেই চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো করতে হয় বা তাদেরকে দিতে হয়, যা তাদেরকে সফলতা দেখাতে অনুপ্রাণিত করে। এরা ধরাবাঁধা নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরেও কাজ করতে পছন্দ করে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিবর্তন মেনে নিতে পারেন না বা পরিবর্তন চান না, তারা বুঝতে চান না প্রতিনিয়তই কাজের ধরন ও মাধ্যম পরিবর্তন হচ্ছে, যার সাথে নতুনরাই ভালো তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারঙ্গম, নতুনরা একটু সৃজনশীল পদ্ধতিতে কাজ করলেই পুরাতনরা ভুল ধরতে ব্যস্ত হয়ে যান আবার এমন অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মীও পাওয়া যায় যরা চান না কনিষ্ঠ কর্মী নির্দিষ্ট পন্থার বাইরে সৃজনশীল পন্থায় কাজ করুক। প্রবাদ আছে বাঘ দিয়ে হরিণ শিকারই করতে হয় তাকে দিয়ে ইঁদুর শিকার করানো ঠিক না। জ্যেষ্ঠদের দ্বারা যদি নতুনদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ বারিত করা হয় এবং একই অন্য প্রতিষ্ঠান করে ফেলে তখন নিজের প্রতিষ্ঠানের ইমেজ নষ্ট হয় এবং অন্যদের নিকট কদর হ্রাস পায়। সেক্ষেত্রে একই ধারার অন্য সফল প্রতিষ্ঠানে কর্মী চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আবার অনেক উর্ধ্বতনই হয়ত দেখা যায় তার অধঃস্তন যে কাজটা সমাধা করছে সে কাজ সম্পর্কে ঐ উর্ধ্বতনের কোন ধারণাই নাই ফলে অধঃস্তনের কাজটা চ্যালেঞ্জিং কি না তাও সে বুঝতে পারে না ফলে মতবিরোধ দেখা দেয় যা ভবিষ্যতে উভয়ের জন্যেই খারাপ ফলাফল বয়ে আনে।

প্রয়োজনের সময় ছুটি মেলে না

কর্মী যদি রোবট না হয় তবে সে সামাজিক জীব এবং তার সামাজিক অনেক আচার আচরণ, অনুষ্ঠান, সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক কিছুই থাকতে পারে সে সময় যদি তিনি ছুটি চেয়ে না পান তখন তার মানসিক যাতনা শুরু হয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। মানুষ মাত্রই দৈনন্দিন অনেক জুট-ঝামেলা থাকতে পারে যেমন- কাছের কেউ অসুস্থ হতে পারে, সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তে পারে কিংবা দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারে ইত্যাদি। মানুষ প্রথমত চাকরীটা করেই ব্যক্তিগত জীবনের নানা প্রয়োজন মিটাতে অথচ প্রয়োজনের সময় ছুটি না পেলে সে সুযোগ বুঝে একদিন চাকরীটা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের সুযোগ কম থাকা

একজন কর্মী তার ছাত্র জীবনে চিন্তা করে লেখাপড়া শেষে সম্মানজনক একটা চাকরি করবে, চাকরি পাওয়ার পরে চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে ভাবে, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পরে সামাজিক পরিচিতি এবং স্ট্যাটাসের জন্য পদোন্নতি নিয়ে ভাবে। যেখানে তার ইগো বেশী সক্রিয় থাকে। তবে এখানে মজার বিষয় হলো বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানেই একজন কর্মী একটা কাজ প্রতিনিয়ত দিনের পর দিন, বছরের পর বছর করতে করতে যখন সে কাজে অধিক দক্ষ হয়ে যান তখন কিন্তু তাকে আর সে কাজে রাখা হয় না বরং তাকে নির্দিষ্ট সময় পরে পদোন্নতি দিয়ে দেয়া হয়। যে যেই কাজে দক্ষ তাকে দিয়ে তো সেই কাজ ই করানো উচিত, তাই না? বড়জোর তাঁর বেতন কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। বিষয়টা কিন্তু তেমন না, যে যেই কাজে ভালো তাঁর সে কাজ আর করার প্রয়োজন নেই। অন্য কেউ সেই কাজ করবে, আগের কর্মী সর্বোচ্চ সুপারভাইজ করতে পারে এবং পাশাপাশি সে নূতন কাজ শিখবে এবং সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে। চাকরির ক্ষেত্রে উত্তরসূরী তৈরি জরুরি। আর এভাবেই একজন দক্ষ কর্মীকে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের সুযোগ করে দিতে হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ যদি এ বিষয়টির প্রতি নজর না দেয় তবে একদিন কর্মী নিজে থেকেই চলে যেতে বাধ্য হয়।

যথাযথ সম্মান, সম্মানী ও প্রতিদান না দেয়া

দক্ষ কর্মীর উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ দিলে যেমন উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, তেমনি তাকে যদি যথাযথ সম্মানী ও পদমর্যদা না দেয়া হয় তাহলেও তিনি শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। দক্ষ কর্মীকে দিয়ে সেরা কাজটা করাতে হলে তাকে উপযুক্ত পদমর্যাদা ও যথাযথ সম্মানী দিতে হবে। না হলে অসময়ে সেরা কর্মীকে হারাতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই দক্ষ কর্মীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে আর্থিক ও পদমর্যাদা বিষয়ক পাওনাটাও অন্যদের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। নচেৎ মেধা বা প্রতিভার অবমূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু যখন তারা আর সবার মতোই একই পাল্লায় বিবেচিত হন, তখন চলে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।

ইদানিং অনেক প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায় মাসের পনের বিশ তারিখ চলে যায়, তবুও আগের মাসের বেতন দেয়ার কোন উদ্যোগ নাই। অথচ দশ-বার তারিখের মধ্যেই কর্মীর পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। বিশেষ করে ঈদের সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে এবং কর্মীরা বেতন-ভাতার দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে। অন্যদিকে প্রতিবাদ করলে তাদের চাকরিই চলে যায়, বিশেষ করে যারা গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, কিংবা কারখানা জাতীয় জায়গায় কাজ করে, তাদেরকে ঘর বাড়ি ছেড়ে চাকরির জন্য শহরে আসতে হয়। নতুন জায়গায় বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ইত্যাদি সব কিছু সামাল দিতে তাঁরা হিমসিম খায়। উপরন্তু, মাসিক বেতন পেতে দেরি হলে তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যথা সম্ভব সময়মতো কর্মীদের বেতন দিয়ে দেওয়া। সময়মতো বেতন পেলে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্যও ইতিবাচক সুবিধা আনয়নে সহায়ক।

নির্দিষ্ট সময় অন্তর–অন্তর বেতন বাড়ে না

কর্মী নিয়োগ ও বাঁছাই এর সময়ই তাঁর বেশ কিছু গুণাবলি (শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ইত্যাদি) বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক জব অ্যানালাইসিস (জব ডেস্ক্রিপশন ও জব স্পেসিফিকেশন) বিবেচনায় তাঁর বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট করা হয় এবং পদায়ন দেয়া হয়। কাজে যোগদানের পর কর্মী সাধারণ প্রেরণা নিয়েই দুই-তিন বছর কাজ করে যায় কিন্তু তারপর তার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে থাকে। মানব সম্পদে বিভাগের একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব সমস্যাট খুঁজে বের করা, যদি বেতন কম হয়ে থাকে তবে বেতন বৃদ্ধি করতে হবে যৌক্তিকতার সাথে, প্রণোদনার প্রয়োজন থাকলে তা দিতে হবে নচেৎ প্রেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে সব সময় কর্মী চাপ দিলেই বেতন বাড়াতে হবে এমন কোন বিষয় নাই। অভিজ্ঞতা ও কাজের মান বৃদ্ধি পেলে মানব সম্পদ বিভাগের স্বউদ্যোগেই বেতন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তানা হলেও কর্মী কাজ ছেড়ে যেতে পারে।

কর্মীর ভালো-মন্দ না দেখা

যে সকল প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মীর ভালো-মন্দ দেখেন না বা খোঁজ খবর নেন না সে প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন ও অধঃস্তনের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে না। কর্মী সফলতায় আনন্দিত হন না অথবা সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে উর্ধ্বতনরা এগিয়ে আসেন না, তাদের অধীনে কোনো কর্মীই কাজ করতে চান না। ভালো ও দক্ষ কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেয়ার এটিও বড় কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কর্মীদের দূরত্ব ও ভালো সম্পর্ক গড়ে না ওঠা। ব্যবস্থাপক ও তার কাছাকাছি ঊর্ধ্বতন কর্তাদের পেশাদার হওয়ার পাশাপাশি আরও বেশি মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হওয়া উচিত। তাতে কর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা ভাল কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে দেয় ও কাজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। ব্যর্থতায় একজন ভালো কর্মী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে পারেন।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা

অনেক প্রতিষ্ঠানেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দক্ষ ও যোগ্য কর্মী কাজে সন্তুষ্ট হয়ে নানারকম কল্যাণমূলক প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা কথাই থেকে যায় এমন ক্ষেত্রে কর্মীরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর আস্থা হারান তাঁরা। ফলশ্রুতিতে অবিশ্বস্ত কর্মকর্তাগণের অধীনে কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার বিকল্প পথ অনুসন্ধানে ব্যস্ত হন।

কর্মীর সামান্য ভুলে বা সরল বিশ্বাসে কৃত ভুলে বড় ধরনের শাস্তি প্রদা

দক্ষ ও যোগ্য কর্মীর কাজের সামান্য ভুলকে শুধরিয়ে না দিয়ে বা সরল বিশ্বাসে কৃত ভুলের কারণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনেক সময়েই কঠোর শাস্তি দিয়ে থাকেন। তাদের বিশ্বস্ততা, দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যা কর্মঠ কর্মীদের কাজের যোগ্যতাকে হেয় করা হয়। এক্ষেত্রে উর্ধ্বতনরা বুঝতে চান না যে, কাজ করলে ভুল হবে কাজ না করলে ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে না, এক্ষেত্রে তাদের বিচক্সণতা দিয়ে যাচাই করা উচিৎ কর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন কিনা। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এমন বিশ্লেষন না করা হলে দক্ষ কর্মীরা সহজ কাজকে সহজভাবে নিতে পারেন না এবং ভালো পরিবেশের খোঁজে থাকেন।

অদক্ষ বা অযোগ্যকে পদোন্নতি দেয়া

দক্ষ ও যোগ্য কর্মীরা সর্বক্ষণ গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করে থাকেন সুতরাং পদোন্নতি তাদেরই প্রাপ্য। ব্যবস্থাপক যদি বিভিন্ন নিয়ম নীতির বেড়াজালে ফেলে বা স্বজনপ্রীতি বা বিশেষ পক্ষপাতের কারণে ভুল মানুষকে পদোন্নতি দেন বা কখনো জ্যেষ্ঠতা কখনো দক্ষতা অর্থাৎ পছন্দের লোককে যখন যে পদ্ধতিতে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যায় তেমন খামখেয়ালিপনার মাধ্যমে যথাযথ কর্মীকে বঞ্চিত করে পদোন্নতি দেয়া হয় তবে সংশ্লিষ্ট কর্মী মানব সম্পদ বিভাগের প্রতি আস্থা হারান এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা ভাবেন। সুতরাং খামখেয়ালিপনা বা নিয়মনীতির বেড়াজালের সুযোগ নিয়ে নয় বরং দক্ষতা, যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, উদ্যমী, সততা ও নিবেদিত প্রাণ কর্মীদেরই পদোন্নতির ব্যবস্থা করা জরুরি। ব্যর্থতায় দক্ষ ও যোগ্য কর্মী সুযোগ খুঁজতে থাকেন এবং ভালো কোনো চাকরি পেলে ওই কর্মী চাকরিটি দ্রুত ছেড়ে দেন। কারণ, পরিশ্রমী ও যোগ্য কর্মীরা কিছুটা বেশি পাওয়ার দাবি রাখেন। প্রয়োজনে মানব সম্পদ বিভাগ যোগ্যতমের প্রতি সুবিচার করার স্বার্থে পদোন্নতির প্রতিটি স্তরেই বিভাগীয় পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখতে পারে। কিন্তু অনেক সময়ই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অদক্ষ ব্যবস্থাপকগণ বিচক্ষণতা হারিয়ে ভুল মানুষের পদোন্নতি দিয়ে থাকেন, এতে যোগ্য ও দক্ষ কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে কর্মী তার কাজের স্বীকৃতি পেতে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার প্রয়ানস চালান।

কর্মীদের আবেগ-অনুভূতিকে কে পাত্তা না দেয়া

প্রত্যেক মনুষ্য কর্মীর নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, রূচি, সৃজনশীলতা এবং প্রয়োজন থাকে যা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক নিগৃহীত হলে কর্মীদের অহংবোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে সকল কর্মী সকল নিয়ম নীতি পালন স্বত্ত্বেও আবেগ লালনে বাঁধাপ্রাপ্ত হন, তাদের কাছে কাজের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই কর্মীর আবেগ-অনুভূতিতে বাঁধা আসলে তার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং সে বিকল্প চাকরির পথ খোঁজেন।

যন্ত্রণাদায়ক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া

প্রতিটি কর্মীর কর্মক্ষমতার একটা সুনির্দিষ্ট সীমা থাকে। চাকরির প্রাথমিক অবস্থায় সহনীয় বা যৌক্তিক প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে না দিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অনেক সময়ই অস্বাভাবিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন যা অর্জনে কর্মীর সুস্থ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি মনে হয় কর্মীর কাছে তখন তিনি বিকল্প পথ খোঁজেন।

একই কাজে অন্য প্রতিষ্ঠানে বেশি সুযোগ সুবিধা থাকা

মানব সম্পদ বিভাগ বিষয়টি পছন্দ করুক বা না করুক, এক প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিজের প্রাপ্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করবেই। বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি যদি কর্মক্ষেত্রে আকর্ষণীয় না হয় তাহলে কর্মী হারানোর ভয় থেকেই যায়।

কর্মক্ষেত্রে গুমোট পরিবেশ

এমন কোন পরিবেশ বা বিধি-বিধান থাকে প্রতিষ্ঠানে যে কেউ মন খুলে কথা বলতে পারে না বা মতামত দিতে পারেন না বা প্রাণ খুলে হাসিরও সুযোগ নাই, কেউ হাসলেও অন্যরা এমনভাবে তাকায় যেন কোন ভিন গ্রহের প্রাণী দেখছেন, তেমন কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে আসলে উৎফুল্ল মন ও মেজাজের কর্মীর মানসিকতা খারাপ হয়ে যেতে পারে। সে তখন বর্তমান গুমোট পরিবেশ থেকে মুক্তি চাইতেই পারে।

বিনোদনের অনুপস্থিতি

একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে কাজের মান ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। দুই থেকে তিন ঘন্টা একটানা কাজ করার পর দশ থেকে পনের মিনিটের জন্য বিশ্রাম খুবই জরুরি, এতে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়, কাজে নতুন করে গতি আসে। এক্ষেত্রে একটা কমন স্পেসে টিভি রাখা যেতে পারে, মাঝে মাঝে আভ্যন্তরীন বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে, বছরে একবার ইফতার পার্টি, পিকনিক, নববর্ষ উদযাপন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কর্মীদের বিশ্বের সাথে হালনাগাদ তথ্যে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে নিয়মিত নিউজ পেপার সরবরাহ করা যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন ত্রিশ মিনিটের জন্য বিশ্বের চলমান ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা সভা করা যেতে পারে। দৈনন্দিন সেবা প্রদান বিষয়ক উদ্ভাবনী ধারণা প্রদানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। এ সকল বিষয়সমূহ নিশ্চিত করা গেলে সৃজনশীল কর্মীরা কাজ করে আনন্দ পাবেন এবং সবার সাথে একটা ভালো মিথস্ক্রিয়া ঘটে ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে থাকে। বিধায় যথাযথ চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা না থাকলে কর্মী হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

হঠাৎ পাওয়া সুযোগ গ্রহণ

এ বিষয়টি পূর্ব থেকে অনুমান করা সম্ভব হয় না, কোন কর্মী যদি অন্য কোথাও ভালো একটা প্রস্তাব পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে কিছু না বলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য মানব সম্পদ বিভাগের কিছুই করণীয় থাকে না।

নিরাপত্তার অভাব

একজন কর্মী তার শিক্ষা জীবন শেষে সম্মানজনক একটা চাকরি নিবে, চাকরি পাওয়ার পরে চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে ভাববে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি মানুষই নিরাপত্তা চায় তা বাড়িতে, অফিস-আদালতে, সমাজে অথবা অন্য যেকোন স্থানে তবে কর্মক্ষেত্রে মানুষ নিরাপত্তাটা তুলনামূলক ভাবে বেশি আশা করে। কেননা কাজে নিরাপত্তা না থাকলে জীবনের অন্যান্য ইভেন্টে তার ভোগান্তি পোহাতে হয়। এখন এমন যদি হয় যে, সে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানকার বিধি-বিধান এমন যে চাকরি যেকোন মুহুর্তেই চলে যেতে পারে তবে সে আতংকে থাকবে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই তাই তারা চাকরি ছেরে দিবেন বা বিকল্প পথ খুঁজবেন, এটাই স্বাভাবিক। একজন চাকরি দাতা হিসেবে মানব সম্পদ বিভাগ থেকে কর্মীকে এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। তার যদি মনে হয় চাকরিটি বেশি দিন টিকবে না; যে কোন সময় চলে যেতে পারে তাহলে সে সুযোগ মতো অন্য একটি চাকরি খুঁজে নিবে। কেউই কাজ থেকে প্রত্যাখাত হতে চায় না। তাই যে কোন সময় চাকরীচ্যুত হতে পারে এমন দ্বিধা থাকলে প্রত্যাখাত হওয়ার পূর্বেই চাকরি ছেড়ে দিবে।

অহংকারী সহকর্মী

প্রায় সকল কর্মক্ষেত্রেই এমন সহকর্মী পাওয়া যায় যারা মনে করেন তারা অন্যদের তুলনায় সবকিছু ভালোভাবে করতে পারেন কিংবা বেশি জানেন। একজন যদি কোনো কিছু অন্যদের তুলনায় ভালো পারেন, তবে তারা এটিকে অপ্রয়োজনীয় কিংবা তিনিই এটি ভালো পারবেন বলে দাবি করেন বা তিনি করলে আরও ভালো হতে পারত। অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস বিষয় দুটি ঠিক এক নয়। যারা আত্মবিশ্বাসী তারা কখনোই এমনটা মনে করেন না যে, অন্য কারো সাফল্যে তার ক্ষতি হবে কিংবা তারা অন্যকে টেনে নীচে নামানোর চেষ্টা করেন না। বরং অন্যের কাজের ভালো দিকটা ফুটিয়ে তুলেন এবং উৎসাহিত করেন, তারা বুঝেন যে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ দলগত কাজ এখানে স্বতন্ত্রভাবে একজনের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না বরং চার্টার অব ডিউটিজ অনুযায়ী যার যার কাজ তিনি করবেন। একটা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় কোনভাবেই কোন একক বিভাগ বা শাখা বা উইং প্রতিষ্ঠানের সফলতা আনতে পারে না। অনেক সময়ই দেখা যায় অনেকেই তার নিজ বিভাগ বা শাখাকে প্রতিষ্ঠানের মুল বিভাগ বা শাখা বলার চেষ্টা করেন এবং অন্য বিভাগ বা শাখাকে হেয় করার মত হাস্যকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে নিজেকে অন্যের নিকট হাসির পাত্রে পরিণত করেন। এদের ধারণা তার নিজের কাজটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বাকীদের কাজ কিছুই না। একটা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের শারীরিক কাঠামোর সাথে তুলনা করা যায়, যেখানে প্রতিটি অঙ্গেরই সুনির্দিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, একটি ছাড়া অপরটি অচল। এমন অহংকারী সহকর্মীর আচরণের কারনেও অনেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন কারণ সকল সুস্থ মানুষই আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলার চেষ্টা করেন কেননা কোন কর্মীই চাইবেন না তার কাজ কেউ ছোট করে দেখুক বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুক।

কেস স্টাডি

একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পদে কর্মরত একজন কর্মীকে কিছুদিন পূর্বে তার অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁকে একটি ফাইল তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যথাসময়ে কাজ শেষ করে উক্ত নির্বাহী ফাইলটি সিনিয়র বরাবর উপস্থাপন করেন। কিন্তু দু-একটা ছোট্ট খাটো ভুলের কারণে সিনিয়রের বেদম বকাঝকা শুনে তাঁর নিজের ডেস্কে ফিরতে হয়। এ নিয়ে তার ভিষণ মন খারাপ, শুধু রুটি-রুজির কথা ভেবেই আর ইস্তফা দেন নাই! সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই এমন চিত্র অস্বাভাবিক না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝাড়ি খেয়ে মন খারাপ করে কখনো বাড়ি ফেরেন নাই এমন চাকরিজীবী খুঁজে পাওয়াটা দুর্লভ। এভাবে কাজের ভুল হয়তো শেষ পর্যন্ত সংশোধন করে নেয়া যায়, কিন্তু কর্মীর মনে বয়ে চলে অশান্তির ঝড়। এ সংশ্লেষে গবেষকগণ দেখিয়েছেন যে, অশান্তির এ ঝড়ই ভবিষ্যৎ ক্ষতির মূল। এতে কাজের গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি থমকে যায় কর্মীর সৃজনশীলতা। দ্য লিডারশিপ কোয়ার্টারলি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় যে, বস বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তবে কাজের গতি বাড়ে, মানও ভালো হয়। আর এর বিপরীত হলে ফলাফল খুবই খারাপ হয়।

সংশ্লিষ্ট গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন আমেরিকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের শিক্ষক চৌ-ইউ সাই, তিনি বলেন, ‘ভালো ব্যবহার বা সদাচরণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি কর্মস্থলে আপনার সম্পর্কে অনুসারীদের মনোভাব বদলে দিতে পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন, অফিসের নেতা বা বস আপনার প্রতি সত্যিই সহানুভূতিশীল, তখন অফিসের কাজ আরও গুরুত্বের সঙ্গে করতে উৎসাহিত হবেন।’ এ গবেষণার জন্য তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর এক হাজার সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত প্রায় দুই শত পেশাদার চাকরিজীবীর মধ্যে জরিপ চালানো হয়েছিল। যদিও দুটি দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা ভিন্ন, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, উভয় দেশেই বা জায়গায় ঊর্ধ্বতনদের বিষয়ে কর্মীদের চাওয়াটা অভিন্ন।

গবেষণায় নেতৃত্বের তিনটি ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমটিতে নেতা পুরোপুরি কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরতান্ত্রিক, তিনি যা বলেন তা-ই হয়। কর্মীদের নিয়ে তাঁর ভাবার সময় নাই। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধারার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধস্তন কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন এবং তাঁদের সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে চান। নেতৃত্বের সর্বশেষ ধরনটি প্রথম দু’টির সমন্বিত রূপ। এতে বস একদিকে থাকেন কর্তৃত্ববাদী, অন্যদিকে কর্মীদের কল্যাণও চান তিনি। গবেষকগণ বলছেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু সমর্থন দিয়ে কর্মীর সর্বোচ্চ সেবা আদায় করে নেয়া সম্ভব। অধ্যাপক চৌ-ইউ সাই বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, অধস্তন ও কর্মীরা কোনো যন্ত্র নয়। তাঁরা মানুষ এবং প্রত্যেকটি মানুষই সম্মান প্রত্যাশা করেন।’

তাহলে কর্মীদের কীভাবে কাজে লাগাতে হবে?

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অধস্তন কর্মীর কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তা বা নেতা তখনই সফল হবেন, যখন তাঁর কর্মীরা নিখুঁত কাজ করবেন। এ জন্য একটি দল হিসেবে কাজ করা প্রয়োজন, প্রভু-ভৃত্যের মতো সম্পর্ক হলে সফলতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে প্রধান কর্মকর্তা বা নেতাকে তিনটি কাজে দক্ষ হতে হবে। যেমন-

– কাজের ভালো-খারাপ দিক সম্পর্কে কর্মীকে নিয়মিত অবগত করতে হবে। ভুল হলে অকারণে অপমান বা অপদস্থ না করে সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে হবে। আবার কাজ ভালো হলে খোলা মনে প্রশংসাও করতে হবে;

– উর্ধ্বতন কর্তাব্যাক্তিগণ কর্মীদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করবেন। দুই পক্ষের মধ্যে থাকতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার মিথস্ক্রিয়া, তাহলে উর্ধ্বতনের কঠোর শাসনেও কর্মীর মন খারাপ হবে না বরং তা হবে নিখুঁত কাজ করার প্রেরণা;

– কর্মীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুসন্ধিৎসু প্রবণতাকে উৎসাহ দিতে হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মনে রাখতে হবে, কাজ করতে গিয়ে কর্মীর মাঝে মাঝে পা পিছলালেও দিন শেষে লাভ হবে তাঁর প্রতিষ্ঠানেরই।

প্রতিষ্ঠানে ভালো কর্মী নিয়োগ দেয়া ও তাদেরকে ধরে রাখা মানব সম্পদ বিভাগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক কিভাবে দক্ষ, যোগ্য ও ভালো কর্মী ধরে রাখা যায়-

– অফিসের তেলবাজ ও চাটুকার এবং একজনের বিরুদ্ধে অপরজনের দোষ ত্রুটি তুলে ধরার জন্য যে সকল কর্মী দিনাতিপাত করছেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং মূল স্টাফ লাইন থেকে দূরে রাখতে হবে, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। কারও দোষ বা ত্রুটি কেউ গোচরে আনলে প্রথমেই ক্রস চেক করে নিতে হবে যাতে কোন কর্মীর প্রতি অবিচার করা না হয়, দক্ষ ও যোগ্য কর্মী ধরে রাখার স্বার্থে এটা ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ম্যানেজমেন্টের মনে রাখা উচিত এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ যারা করেন তারা খুবই চতুর হন এবং বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে তারা উপস্থাপন করে থাকেন। এধরনের চাতুরি শৈলী যারা দেখিয়ে থাকেন প্রথমেই দেখতে হবে তার নিজের কাজের কি অবস্থা, সে কি তার নিজের কাজ ঠিকভাবে করছেন নাকি অন্যেরটা দৃষ্টিগোচর করে নিজের ব্যর্থতা ও দূর্বলতা লুকানোর চেষ্টা করছেন। এ ধরনের লোক প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর তাই কর্মী ধরে রাখার জন্য এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর;

– অনেক সময় দেখা যায় কোন কর্মী জটিল কোন বিষয়ের সমাধান করলেন বা তার সৃজনশীলতা দিয়ে নতুন কিছু করলেন কিন্তু তারই সহকর্মী বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে উর্ধ্বতনের কাছে যেতে না দিয়ে তিনি নিয়ে গিয়ে বললেন অনেক পরিশ্রম করে করেছি স্যার এবং উর্ধ্বতনের প্রশংসা নিয়ে আত্মতুষ্টি অনুভব করলেন বা কোন সুবিধা নিলেন। এমন যেন না হয় সে বিষয়টির প্রতিও কর্তৃপক্ষকে বিচক্ষণতার সাথে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে এবং প্রকৃত কর্মসম্পাদনকারীর মূল্যায়ন ও প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে;

– কর্মী ভালো না মন্দ সেটা বোঝার পদ্ধতি হলো মানবসম্পদ বিভাগ কর্তৃক কর্মীর দক্ষতার সারা বছরব্যাপী নিয়মিত মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি। যার মাধ্যমে খুব সহজেই পরিমাপ করা যায় কোন কর্মীর চেয়ে কোন কর্মী ভালো বা মন্দ। গতানুগতিক বার্ষিক প্রতিবেদনের বেঁড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে;

– ভালো কর্মী ধরে রাখার জন্য পরিচর্যার প্রয়োজন। যেমন কর্মীকে প্রেষণা দেয়ার জন্য যথাযথ কৌশল প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে;

– প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে যেমন একসঙ্গে সকল সুবিধা না দিয়ে ধাপে ধাপে দিতে হবে তবে দীর্ঘ ব্যবধানও ঠিক হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মুদ্রাস্ফীতি হয়, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়, বাজার মূল্য বৃদ্ধি পায়, কর্মীর পারিবারিক খরচ বৃদ্ধি পায়, ঠিক এ নির্দেশকগুলোর সাথে সামঞ্জস্য বিধানপূর্বক যৌক্তিকতার ভিত্তিতে কর্মীর বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি দেয়া উচিত;

– খুব কম ক্ষেত্রেই কর্মীকে একবার নিয়োগ দেওয়ার পর মানবসম্পদ বিভাগ তার খাপ খাওয়ানোর বিষয়টির প্রতি নজর দেয়। ফলে অগোচরে কর্মী তার উৎসাহ হারাতে থাকেন এবং ঝরে পড়েন। এক্ষেত্রে মানব সম্পদ বিভাগের বিষয়টি নিয়মিতকরণ আবশ্যক;

– কর্মীকে নিয়মিত জিজ্ঞেস করতে হবে সে কেমন আছে তার পরিবারের কি অবস্থা। কোন সমস্যা থাকলে যেন সে উর্ধ্বতনের কাছে তার ফরিয়াদ জানাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অধঃস্তন কর্মীর নাম সম্বোধনপূর্বক কথা বলা যেতে পারে, এতে করে সে মানসিক শান্তি পাবে যে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা তার নাম মনে রেখেছেন। মানবসম্পদ বিভাগ একই সাথে শাসক এবং বন্ধু হলে উভয়েরই উপকার হয়;

– সকল কর্মীর ক্যারিয়ার গঠণ বিষয়ে স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে বিধায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তাঁর অধঃস্তন কর্মীর ক্যারিয়ার বিষয়ক দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে এবং যথাযথ নির্দেশনা বা গাইড করতে হবে;

– ভালো কর্মী ধরে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো নিয়মিত কাউন্সেলিং করা। অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা বস এবং মানবসম্পদ বিভাগ যৌথভাবে কর্মীদের কাউন্সেলিং এর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে, যা কর্মীর মানসিক সত্তার উত্তম পরিচর্যা করে থাকবে;

– একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপককে হতে হবে প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। ঠিক যেমন পরিবারগুলোতে যত কঠিন সময়ই যাক না কেন, অভিভাবকের সুনজর ও ভালোবাসা কারো প্রতি কম থাকে না, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের দৃষ্টিভঙ্গিও তেমন হওয়া উচিত। তাহলে কর্মী চলে যাওয়ার বদলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে বহুগুণ।

কর্মক্ষেত্রে যে ধরনের সহকর্মী অন্যদের জন্য ‘বিপজ্জনক’

কর্মক্ষেত্রে কিছু সহকর্মী থাকেন যারা প্রকৃত অর্থে অন্যের সফলতা চান না। বরং তাদের কারণে অন্যান্যরাও কর্মক্ষেত্রে বিপদে পড়তে পারেন। এমন কি ব্যর্থতার কারণে চাকরিটাও হারাতে হতে পারে। কেউ যখন নতুন চাকরি শুরু করেন তখন তিনি মনে করেন তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বস এবং সহকর্মীদের সবসময় তার পাশে পাবেন। প্রথম কয়েকদিন কিংবা সপ্তাহ খুব ভালোই কাটে তার। মনে হয় কর্মক্ষেত্রের লোকজন খুবই বন্ধুসুলভ এবং সকল কাজে তারা সহায়তা করবেন। অনেকে তার দুপুরের খাবার গ্রহণ কিংবা কফি খাওয়ার জন্য আশপাশের দোকানের খোঁজ খবরও দেন। কিন্তু হঠাৎই সবকিছুতে আমূল পরিবর্তন আসে এবং দেখা যায় নতুন কর্মীর ধারণা আর মিলছে না। যে ব্যক্তির সঙ্গে ক্যাফেতে বা অফিসের করিডোরে পরিচয় হয়েছিল সেই হয়তো সারাক্ষণই জ্বালাতন করছেন। আর তার কাজ কর্মক্ষেত্রে নতুন কর্মীর বিপদও ডেকে আনতে পারে যে কোনো সময়। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং কর্মক্ষেত্রে এরকম ‘জ্বালাতনকারী’ কর্মী থাকেই। অ্যাসোসিয়েশন ফর সাইকোলজিকাল টাইপ ইন্টারন্যাশনাল-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের ৮০ শতাংশ সমস্যাই হয় কর্মীদের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক থাকার কারণে। কর্মক্ষেত্রে সফলতায় এ সকল লোকেরা একে অপরের উৎকণ্ঠার কারণ হতে পারেন। কিছু সহকর্মীদের পাওয়া যাবে যারা আপাত অন্তরঙ্গতা দেখাবে কিন্তু প্রকৃত অর্থে অন্যের সফলতা কামনা করেন না। বরং তাদের কারণেই কর্মক্ষেত্রে বিপদে পড়তে হতে পারে। এমন কি ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তারা। তবে এ ধরনের জ্বালাতনকারী বা বিপজ্জনক কর্মীকে আগেই চিহ্নিত করা সম্ভব তাদের কিছু ব্যবহার থেকে। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো যে সকল সহকর্মীর মধ্যে থাকবে তাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকা তথা ক্যারিয়ার গঠনের লক্ষ্যে, যেমন-

নিজের মতই গুরুত্বপূর্ণ, বাকি সব গুরুত্বহীন বা মূল্যহীন

যে সকল মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র বিচারিক মানসিকতা কাজ করে তারা পৃথিবীকে কেবলই কালো আর সাদা, ঠিক কিংবা ভুল হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন তাদের মতামতের চেয়ে উপযুক্ত বা গ্রহণযোগ্যে আর কিছু হতে পারে না। তারা সবসময় সহকর্মীকে তাদের পক্ষের বলে মনে করবেন, নতুবা বিপক্ষের, এর বাইরে তারা কিছু চিন্তা করতে পারেন না। এদের মানসিকতাই পক্ষপাতদুষ্ট, নিরপেক্ষ যে কিছু থাকতে পারে তা তারা মানতেই চান না। কোন সহকর্মী যদি স্বাধীনভাবে কোন মন্তব্য করেন তাহলে তারা ধরেই নেন মন্তব্যটি কোন পক্ষের হয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন সহকর্মীদের সাথে যাদের মতের মিল হয় না তারা তাদেরকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন এবং অন্যকে ভুল প্রমাণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান।

অভিযোগকারী সহকর্মী

কর্মক্ষেত্রে কিছু সহকর্মী পাওয়া যায় যারা সবকিছুতেই অপরের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সুপারভাইজার কিংবা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নালিশ করবেন বা খুঁজে খুঁজে নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরবেন ভুলেও তারা অপরের ইতিবাচক বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর করবেন না বা করলেও এমন শৈলী ব্যবহার করবেন যেন ঐ সকল ইতিবাচক কাজ কোন কাজই না এটা যে কেউই পারে এমন। তারা সব সময় অন্যের খুত ধরতে পারঙ্গম, তারা এটা ভুলে যান যে, যিনি কাজ করেন তার ভুল হতেই পারে বা সরল বিশ্বাসেও ভুল করতে পারে, যারা কাজ করেন না তাদের কোন ভুল নাই। এধরনের সহকর্মী বাস্তবিকই কোন সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারেন না বরং সমস্যা সৃষ্টি করেন। মনে রাখা প্রয়োজন যারা দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তারা তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সময় ও সুযোগ তার থাকে না। বিধায় এ ধরনের নালিশকারী সহকর্মীদেরকে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী কর্তৃক এড়িয়ে চলা উচিত।

আড়ালে বা পিছনে কথা বলা সহকর্মী

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি আন্না এলিনুর রুজভেল্ট বলেন, ভালো মনের মানুষ আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করে, মোটামুটি মনের মানুষ আলোচনা করে ঘটনা নিয়ে আর নীচু মনের অধিকারীরা আলোচনা করে মানুষকে নিয়ে। আলোচনার সময় অন্য মানুষের সমালোচনা করেন নীচু মানসিকতার লোকজন। তাদের কথা সবসময় হয়তো অন্যের কাছে বিদ্বেষপূর্ণ মনে নাও হতে পারে কিন্তু অন্যের দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে তারা খুব আনন্দ পান। তাদের মধ্যে কখনোই এ মানসিকতা কাজ করে না যে, প্রত্যেকেই নিজেদের জন্য সংগ্রাম করছেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের আশেপাশের পরিবেশ বা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব নিয়ে আগ্রহ খুবই কম, তারা নিজেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখার পরিবর্তে অন্যদের খারাপ দিক দেখার প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করেন। এ ধরনের বিকৃত মানসিকতার সহকর্মীদের এড়িয়ে চলা উচিত।

অহংকারী সহকর্মী

প্রায় সকল কর্মক্ষেত্রেই এমন সহকর্মী পাওয়া যায় যারা মনে করেন তারা অন্যদের তুলনায় সবকিছু ভালোভাবে করতে পারেন কিংবা বেশি জানেন। একজন যদি কোনো কিছু অন্যদের তুলনায় ভালো পারেন, তবে তারা এটিকে অপ্রয়োজনীয় কিংবা তিনিই এটি ভালো পারবেন বলে দাবি করেন বা তিনি করলে আরও ভালো হতে পারত। অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস বিষয় দুটি ঠিক এক নয়। যারা আত্মবিশ্বাসী তারা কখনোই এমনটা মনে করেন না যে, অন্য কারো সাফল্যে তার ক্ষতি হবে কিংবা তারা অন্যকে টেনে নীচে নামানোর চেষ্টা করেন না। বরং অন্যের কাজের ভালো দিকটা ফুটিয়ে তুলেন এবং উৎসাহিত করেন, তারা বুঝেন যে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ দলগত কাজ এখানে স্বতন্ত্রভাবে একজনের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না বরং চার্টার অব ডিউটিজ অনুযায়ী যার যার কাজ তিনি করবেন। একটা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় কোনভাবেই কোন একক বিভাগ বা শাখা বা উইং প্রতিষ্ঠানের সফলতা আনতে পারে না। অনেক সময়ই দেখা যায় অনেকেই তার নিজ বিভাগ বা শাখাকে প্রতিষ্ঠানের মুল বিভাগ বা শাখা বলার চেষ্টা করেন এবং অন্য বিভাগ বা শাখাকে হেয় করার মত হাস্যকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে নিজেকে অন্যের নিকট হাসির পাত্রে পরিণত করেন। এদের ধারণা তার নিজের কাজটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বাকীদের কাজ কিছুই না। একটা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের শারীরিক কাঠামোর সাথে তুলনা করা যায়, যেখানে প্রতিটি অঙ্গেরই সুনির্দিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, একটি ছাড়া অপরটি অচল। দক্ষ এবং যোগ্য কর্মীদের উচিৎ এধরনের মানসিকতার সহকর্মীকে না চটিয়ে শোভন আচরণ প্রদর্শণপূর্বক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার নিজের কাজ সঠিকভাবে করে যাওয়া এবং অহংকারী কর্মীকে এড়িয়ে চলা।

যারা সবকিছুতেই হ্যাঁ বলেন

যেসব সহকর্মী সব কিছুতেই ‘হ্যাঁ’ বলেন, তারা হয়তো সবসময় উর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত সাধারণভাবেই মেনে নিবেন কিংবা বেশিরভাগ লোক যেটা বলবেন সেটাই করবেন। এজন্য কোনো সভা বা কোন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বেই তাকে এ বিষয়টি অবহিত করা প্রয়োজন যে, তার মতামতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি যেন ভেবেচিন্তে মতামত দেন। এদের উপরে অন্যায়ভাবে কোনোকিছু চাপিয়ে দিলেও এরা প্রতিবাদ করেন না বরং খুশি মনে মেনে নেন। আবার এদের জন্যই অন্যরা বিপদে পড়তে পারেন, যারা তার মতো নয়। এ ধরনের সহকর্মীদের সাথে কাজ করার সময় কৌশলী হতে হবে।

সময় নষ্টকারী

কর্মক্ষেত্রে এমন কিছু সহকর্মী থাকেন, যারা সময়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না। তারা অন্যের সময়ের গুরুত্ব না দিয়ে তার নিজের মতো কাজ করেন। নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, এটা তারা বুঝতেই চান না। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ঐ সহকর্মীর সাথে কথা বলে তাকে সময়ের বিষয়টি বোঝানো জরুরি এবং পরবর্তী টিমওয়ার্কে বা দলগত কাজে তার সঙ্গে কাজ না করাই শ্রেয়।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যমান তারপরও কিছু কিছু বিষয় আছে যার প্রতি নজর দেয়ার পাশাপাশি সকল কর্মীকেই সতর্ক থাকা উচিৎ, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। এমন অনেক সহকর্মী থাকেন যাঁরা বাইরে বন্ধুসুলভ আচরণ করলেও, সুযোগ পেলেই আড়াল থেকে অন্যকে বিপদে ফেলতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে বন্ধুবেশী এমন কর্মীদের নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা দেখিয়েছে যে, বন্ধুবেশী কর্মীদের সাথে কাজ করাটা সত্যিই বেশ কঠিন। একই দলে কাজ করার কারণে ইচ্ছে থাকলেও চাকরি থেকে অব্যহতি নেয়া ব্যতীত তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব হয় না। আবার কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের সঙ্গে উত্তপ্ত বিতর্কেও জড়ানো যায় না, এ যেন উভয় সংকট। এমন অবস্থার মুখোমুখি হলে অন্যান্য কর্মীকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে এমন বন্ধুবেশী কর্মী কে কে আছেন তারপর দেখতে হবে সুনির্দিষ্টভাবে তারা কাজে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা তাঁরা সৃষ্টি করছেন, এদু’টি বিষয় নির্ধারণের পরে তার উপর ভিত্তি করে সমাধানের পথে এগোতে হবে, যেমন-

অপরের ভাবনা চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া

বন্ধুবেশী কোন কর্মী কাজ শুরুর সময় সদালাপের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা পর্বে আপনার ভাবনার কথা জেনে নিয়ে পরে তা নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ওই সহকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে যে তিনি যে কাজটি করছেন তা নীতি বিরুদ্ধ, এরপরও কাজ না হলে সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি শোভনভাবে অবহিত করতে হবে।

আপাত প্রশংসার আড়ালে অন্যের স্থান দখলের অপচেষ্টা

কর্মক্ষেত্রে নতুন যোগ দেওয়া বা পুরাতন কোনো সহকর্মী অপরের কাজ ও কাজের ধরন নিয়ে অতি (!) উত্সাহ দেখাতে পারেন এবং আপনার কাজের ভূয়সী প্রশংসাও হয়তো করবেন। কিন্তু প্রশংসার আড়ালে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছক কষে আপনাকে ডিঙিয়ে আপনার পদে নিজেকে বসানোর জন্য নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে পারেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রশংসাবাক্যে গা ভাসিয়ে দিলে বিপদে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে সেরকম কোন সন্দেহ থাকলে প্রয়োজনে আপনাকে রূঢ় হতে হবে। তাঁকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে হবে, কর্ম ক্ষেত্রে তাঁর এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে তার নিজের কাজের সার্বিক মূল্যায়নের ওপর, একটি-দু’টি কাজের উপর নয়।

নিরাশার বীজ রোপণকারী

এ ধরনের সহকর্মীরা প্রায়ই অন্যের সাথে আলাপচারিতার সময় প্রতিষ্ঠানের নানা বদনাম করবেন এবং অয়ৌক্তিকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, এ প্রতিষ্ঠানের মতো দুর্বিষহ কাজের পরিবেশ আর কোথাও নেই। এ ছাড়া আরও নানা অভিযোগ ও সমস্যার কথা কর্মীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। এভাবে তিনি নিরাশার বীজ রোপণ করতে চাইলে তাতে কোনভাবেই কর্ণপাত করা ঠিক হবে না বরং তাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে এত সমস্যা থাকলে সে কেন চাকরিতে আছেন। তবে প্রতিষ্ঠানে যদি সত্যিই কোনো সমস্যা থাকে, তবে তা ইতিবাচক ও শোভন উপায়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই।

নিজের কাজ অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া

এ ধরনের সহকর্মীরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রায়ই নিজের কাজ অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে সম্পাদিত কাজটি নিয়ে উর্ধ্বতনের বরাবর দাখিল করে নিজের কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নিজের দায়িত্ব আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে তারপর সময় পেলে ঐ সহকর্মীর অনুরোধ আপনি রাখতে পারেন কিংবা সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

বর্ণিত বিষয়ের বাইরে আরও নানা ধরনের উটকো ঝামেলা থাকতেই পারে তাই সবারই উচিৎ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এমন ধরনের সহকর্মীকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটানোর সুযোগ তাঁরা না পান। যৌথভাবে কোনো কাজের দায়িত্ব পেলে শুরুতেই কাজ ভাগ করে নিতে হবে। সমস্যার মুখোমুখি হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর আগে নিজের নজরে আসা সমস্যা বা অভিযোগগুলো লিখে ফেলতে হবে, তবে ভুলেও ব্যক্তিগত কোনো মতামত লেখা যাবে না। লেখা শেষে পুনরায় পাঠকরত যে সকল সমস্যা নিজেই সমাধান করা সম্ভব তা তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। অতঃপর গুরুত্বপূর্ণ বা জটিল বিষয়গুলো যতটা সম্ভব নিরপেক্ষতার সাথে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সমাধানের লক্ষ্যে আপনার অভিযোগ বা সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে।

অনেক সময় সহকর্মী আপনার সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আপনাকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার জন্য আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কুত্সা রটাতে পারে বা মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে পারে, সেক্ষেত্রে মাথা গরম করা যাবে না কিংবা তার সাথে যোগাযোগও বন্ধ করা যাবে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে ভালো সম্পকৃ বজায় রাখতে হবে এবং দৈননন্দিন তথ্য আদান-প্রদান চালিয়ে যেতে হবে। এতে করে ভবিষ্যতে আপনাকে ফাঁদে ফেলার সুযোগ পাবেন না তিনি। সমস্যা খুব বেশি গুরুতর না হলে চুপচাপ থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝি অবসানের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভুলেও বাইরের কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা একেবারেই অনুচিৎ।

প্রতিষ্ঠানে কর্মী ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি এবং যথাযথ মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা বা প্রেষণা

শুরুতেই জেনে নেয়া যাক মোটিভেশন কি?

মোটিভেশন হলো কাজ করার চালিকাশক্তি যা ভালো কাজ করার উৎসাহ দেয়। মোটিভেশনের অভাব শুধু কাজের ইচ্ছাই কেড়ে নেয় তা নয়, ব্যক্তি জীবনেও ডিপ্রেশন ডেকে আনে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির লিডারশিপ ও ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ের অধ্যাপক মারি জোহানসেন অনুপ্রেরণার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-

“অনুপ্রেরণা হল সেই আকাঙ্খা বা শক্তি যা মানুষকে কোনও কিছু অর্জন করার জন্য কাজ করার ইচ্ছা বা উ‌ৎসাহ সৃষ্টি করে”

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মানুষের ক্ষুধা অনুভূত হয় বলে তারা খাবার সংগ্রহ করে এবং তার জন্য তাকে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, ক্ষুধা হলো খাবার সংগ্রহের মূল অনুপ্রেরণা। আবার অনেকেই দেখা যায় রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভূনা খিচুড়ির ঘ্রাণ নাকে আসার সাথে সাথে তার তা খেতে ইচ্ছে হয়। অথবা বাসায় খাবার প্রস্তুত আছে জানা সত্ত্বেও রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়েন, অথবা বাড়ি ফেরার পথ না ধরে বাজারের দিকে যান ভূনা খিচুড়ির সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য। এখানে ভূনা খিচুড়ির ঘ্রাণ মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। অর্থা‌ৎ, কোনও কাজ করার পিছনের কারণই অনুপ্রেরণা।

মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেন নাই, কারণ তাঁরা চেয়েছিলেন পরাধীনতার পরাকাষ্ঠ থেকে বেড়িয়ে স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচতে তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও সুন্দর একটি দেশ বা পরিবেশ রেখে যেতে, যেখানে বাঙ্গালি জাতি মাথা উঁচু করে বাঁচবে। এখানে স্বাধীনতা প্রাপ্তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। একজন কর্মী হয়ত সারাদিন অফিসে কাজ করে মাস শেষে বেতন পাওয়ার আশায়, অপরদিকে তার পাশেরজনই হয়তো কাজ করছে কাজটি অধিকতর ভালোভাবে করে এবং শিখে আরও ভালো অবস্থানে যাওয়ার জন্য, এ সবই অনুপ্রেরণা বা প্রেষণা।

অনুপ্রেরণা বা প্রেষণা হল এমন একটি কারণ বা অবস্থা, যা মানুষকে নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য উ‌ৎসাহিত করে অথবা নির্দিষ্ট কিছু করার ইচ্ছা জাগায়।

কর্মক্ষেত্রে প্রেষণা বা অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন

কর্মক্ষেত্রে প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চাকাকে সচল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধ করার এ প্রক্রিয়াকেই কর্মক্ষেত্রের প্রেষণা বলে অভিহিত করা হয়।

সাধারণত প্রতিষ্ঠান দু ধরনের হয়ে থাকে, যেমন- সেবামূলক ও উৎপাদনমূলক। প্রতিষ্ঠান যে ধরনেরই হোক না কেন, তা সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে তার কর্মী বা শ্রমিক তথা কর্মরত মানব সম্পদ। এ মানব সম্পদের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে তাদের দ্বারা কখনোই সর্বোৎকৃষ্ট কার্যফল আশা করা যায় না। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ যত ধরনের কাজ কাজ করে থাকেন তন্মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অধঃস্তন কর্মীদেরকে স্ব স্ব কাজে অনুপ্রাণিত করা। কর্মীদের প্রত্যাশা বা আশা-আকাঙ্খা, চিন্তা-চেতনা, কাজের প্রকৃতি, কার্য পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করতে হয়, যাতে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথবাবে পালনে আগ্রহী হয়। কর্মীদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা তথা প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাজে উদ্বুদ্ধকরণের এ প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। প্রেষণার ফলে কর্মী তার সকল আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন সহজতর হয়। প্রেষণা মানুষের অন্তরে নিহিত একটি সুপ্ত শক্তি যা উজ্জীবিত হলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে। অনুপ্রেষিত (motivated) ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে, অধিকতর দক্ষতার সাথে তার কার্য সম্পাদনে সচেষ্ট হয়। অভাব বা প্রয়োজনবোধ থেকেই প্রেষণার উৎপত্তি বা সৃষ্টি। মানুষের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ হলে সে প্রেষিত (বা অনুপ্রেষিত) হয়েছে বলে বিবেচিত হয়।

ব্যবস্থপনা বিশেষজ্ঞদের মতে প্রেষণার সংজ্ঞা নিম্নরূপ-

শারলেকার (S. A. Sherlekar) বলেছেন, “যে ব্যবস্থাপকীয় কার্যের সাহায্যে ব্যক্তিবর্গকে কার্য সম্পাদনে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও তাড়িত করা যায় তাকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a managerial function to inspire, encourage and impel people to take required action).

ওইরিখ ও কুঞ্জ (H. Weihrich & H. Koontzt) বলেছেন, “সব ধরনের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, প্রয়োজন এবং সমরূপ শক্তিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত সাধারণ পদবাচ্যকে প্রেষণা বলে”। (Motivation is a general term applying to an entire class of drives, desires, needs, wishes and similar forces).

Keith Daris এবং H. John W. Newstrom বলেছেন, “কাজের দিকে কর্মীকে ধাবিত করার শক্তিই হলো প্রেষণা”। (Motivation is the strength of the drive towards an action).

মাইকেল জুসিয়াস (Michael Jucious)-এর মতে প্রেষণা হচ্ছে ব্যবস্থাপক কর্তৃক সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ যা কর্মীদেরকে নির্ধারিত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে উৎসাহিত ও প্রণোদিত করে।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, প্রেষণা হলো এমন একটি ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। কর্মী যাতে তার সর্বোচ্চ পরিপক্কতা (maximum maturity) প্রয়োগ করতে পারে, মূলতঃ প্রেষণা সে কাজটিই করে থাকে। মানুষ প্রত্যেকেই তার নিজের জীবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও। মানুষ প্রতিদিন কাজ করে, দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে অন্যদের দ্বারা তার হয়ে নিজের কাজ করাতে মোটিভেট করে বা অনুপ্রাণিত করে বিভিন্ন উপায়ে।

প্রেষণার প্রকারভেদ

প্রেষণা বা অনুপ্রেরণা দু’ধরনের হয়ে থাকে, যেমন-

– জন্মগত অনুপ্রেরণা;

– এবং পরিবেশগত অনুপ্রেরণা:

জন্মগত অনুপ্রেরণা

মানবজাতির মধ্যে জন্মগতভাবেই কিছু অনুপ্রেরণা থাকে যা তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে উ‌ৎসাহিত করে থাকে আবার কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যও করে থাকে। অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন এর ‘নিড থিওরি’ এর প্রবর্তক বিশ্বখ্যাত মনোবিদ ডেভিড ম্যাক্কেল্যান্ড এর মতে কিছু মোটিভেশন মানুষের ডি এন এ-তে কোড করা আছে।

মানুষের ক্ষুধাও এমন একটা মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা যা প্রতিটি প্রাণীরই আছে এবং এটা জন্মগত। ক্ষুধা না থাকলে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বিনা কাজে জীবন পার করে দিত। ক্ষুধার মত সন্তানের প্রতি বা রক্তের সম্পর্কের প্রতি বা নিকটাত্মীয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্ম থেকেই বিদ্যমান। পৃথিবীতে এমন বাবা-মা খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা তাঁদের সন্তানের জন্য নির্দ্বিধায় নিজের জীবন বিলীন করে দিবেন না। এসবই জন্মগত অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন বা প্রেষণা।

পরিবেশগত অনুপ্রেরণা

যেসকল অনুপ্রেরণা পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে মানুষের মানসিকতার অংশ হয়ে যায় তা ই পরিবেশগত অনুপ্রেরণা হিসাবে বিবেচ্য। ক্ষুধা জন্মগত অনুপ্রেরণা, কিন্তু বিশেষ খাবার খাওয়ার ইচ্ছা পরিবেশ থেকে আসা অনুপ্রেরণা। ডেভিড ম্যাক্কেল্যান্ড এর মতে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে মানুষকে কিছু করা বা কিছু না করা শেখানো সম্ভব। মানুষকে মোটিভেশন দিয়ে তার মধ্যে বড় কিছু করার ইচ্ছা জাগ্রতকরণ সম্ভব, যাতে সে বড় কিছু অর্জন করার জন্য কাজ করে। মোটিভেশন বিশেষজ্ঞ ভি.এইচ.ভ্রুম ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত বই ‘ওয়ার্ক এ্যান্ড মোটিভেশন’ এ বলেছেন যে, বিশেষ পর্যায়ের পারফরমেন্সের জন্য বিশেষ ধরনের পুরস্কার বা মোটিভেশনের প্রয়োজন হয়।

একজন কর্মী ঠিক ততটুকু কাজ করবে, যতটুকু করার জন্য তাকে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা হবে। যথাযথ প্রেষণা বা মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মীকে দিয়ে অনেক কাজই সম্পাদন করিয়ে নেয়া যায়, যা তাকে দিয়ে ইতিপূর্বে করানো যায় নাই। কর্মক্ষেত্রে সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করলে সেটা কর্মীর কাজের মান পরিবর্তন করার মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে।

 

প্রতিষ্ঠানে কর্মী ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি এবং যথাযথ মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা বা প্রেষণা

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য

কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ যে সক্ষমতা প্রয়োগ করে কঠোর পরিশ্রম করে থাকে সেখানে মূল ভূমিকাই থাকে প্রেষণার। প্রেষণা এমন একটি প্রক্রিয়া যা কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে যৌক্তিক আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মীরা সর্বোচ্চ সক্ষমতা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারে। তাই এটি একদিকে যেমন কর্মীর মনোবল দৃঢ় করে তেমন অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনশীলতার গতি বৃদ্ধি করে থাকে। প্রেষণা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত করে।

প্রেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

– মনস্তাত্ত্বিক ধারণা

প্রেষণা সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয় অর্থাৎ মানুষের ভিতরের কিছু প্রভাকীয় প্রবণতা থেকে প্রেষণার সৃষ্টি যা একটি মানসিক শক্তি। বিশেষ চাহিদার কারণে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তৈরি হয়। প্রেষণা কর্মীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে;

– মানবীয় উপাদানের সাথে সম্পৃক্ততা

একটি প্রতিষ্ঠানে দু’ধরনের উপাদান থাকে, যেমন- একটি মানব সম্পদ বা কর্মী এবং অপরটি ভৌত অবকাঠামো বা বস্তুগত উপাদান। প্রেষণার অধিক্ষেত্র শুধু মানবীয় অর্থাৎ মানব সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাদেরকে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়;

– অব্যাহত প্রক্রিয়া

কালের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার ধরন পরিবর্তিত হয়, যেমন- এক সময় সেল ফোন ছিল না কিন্তু এর আবির্ভাবের পর মানুষের কাছে সেল ফোনের চাহিদা বেড়ে গেল। কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের একটি করে সেল ফোন উপহার হিসেবে দিলে কর্মীরা অনুপ্রাণিত হলো। মোবাইল ফোন আসার পূর্বে হয়ত প্রতিষ্ঠানের প্রণোদনা দেয়ার ধরন অন্য রকম ছিল, হতে পারে তখন কর্মীদের পেজার দিলে তারা অনুপ্রাণিত হত । সুতরাং এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রেষণা একটি অব্যাহত বা চলমান প্রক্রিয়া, যা শুরু করা যাবে কিন্তু কিছু সময় পর বন্ধ করা যাবে না, কেননা বন্ধ করে দিলে প্রেষণা অকার্যকর হয়ে পড়বে;

– সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যভিত্তিক

প্রেষণা সর্বদাই উদ্দেশ্য কেন্দ্রিক, একটি প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হলো কর্মীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা আদায় করা। যার সাথে প্রেষণার উদ্দেশ্যে সরাসরি জড়িত। এক কথায় বলা যায় যে, প্রেষণা বা অনুপ্রেরণা উদ্দেশ্য তথা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়;

– অভাবের সাথে সংশ্লেষ

অভাবের সাথে কর্মীর প্রেষণার সংশ্লেষ রয়েছে, অর্থাৎ প্রথমে অভাবের তাড়ণা জাগ্রত হবে অতঃপর মানুষ তা পুরণে সচেষ্ট হবে। নির্র্দিষ্ট সময়ান্তে প্রতিষ্ঠানে কর্মী তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতির একটি অভাব বোধ করে এবং প্রতিষ্ঠান যদি তার এ অভাব পূরণ করে তাহলে সে অনুপ্রাণিত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। প্রকৃতই অভাবের সাথে প্রেষণার সরাসরি সংশ্লেষ বিদ্যমান বা অভাবই প্রেষণার মূল ভিত্তি;

– ইতিবাচক বা নেতিবাচক

প্রেষণা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় ধরনেরই হতে পারে। যেমন- ইতিবাচক প্রেষণার ক্ষেত্রে কাউকে পুরষ্কৃত করে প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পাদন করা যায় আবার কাউকে ভর্সনা বা তিরস্কার করেও কাজ সম্পাদনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে যা নেতিবাচক প্রেষণা হিসেবে বিবেচ্য;

– প্রভাবকীয় স্পৃহা সৃষ্টিকারী

প্রেষণা হলো প্রভাবকীয় স্পৃহা সৃষ্টিকারী, যা মানুষকে কোনো কাজ করা বা না করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করে থাকে। প্রেষণা সরাসরি কর্মীর মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে ফলে সে কর্মসম্পাদনে প্ররোচিত হয়। বিধায় প্রেষণা জোগালে কর্মীর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে এবং যা প্রভাকীয় স্পৃহা হিসাবে বিবেচ্য;

– ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের সাথে সম্পৃক্ততা

বাংলা ভাষায় প্রবাদ বাক্য আছে যে, ‘যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট তাকে সে ফুল দিয়েই পূজো করতে হয়’। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিভেদে প্রেষণার ধরন ও ধারণে ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক তাই প্রেষণা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে;

– আর্থিক বা অনার্থিক প্রকৃতি

প্রেষণা আর্থিক বা অনার্থিক উভয় প্রকৃতিরই হতে পারে। কখনও কখনও আর্থিক সুবিধা দিয়ে কর্মীকে প্রেষিত করা হয় আবার অনেক ক্ষেত্রেই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াদির মাধ্যমে কর্মীকে প্রেষিত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে;

– আচরণের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ

প্রেষণা এমন একটি শক্তি যা মানুষের আচরণকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করে এবং প্রেষিত কর্মীর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা তথা উৎফুল্লতা কাজ করে।

কর্মী মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণার প্রয়োজনীয়তা

কর্মী অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কেননা যদি কোন প্রতিষ্ঠান তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় বা তার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সফল করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই কর্মী প্রতি নজর দিতে হবে তথা তাদের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মীর মোটিভেশনের ঘাটতি থাকলে ধরে নিতে হবে স প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। কর্মক্ষেত্রে কর্মীর সফলতা হার বৃদ্ধিতে অনুপ্রেরণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণা বলছে, প্রতিষ্ঠান থেকে সক্রিয় বা ভাল বা দক্ষ কর্মী চলে যাওয়ার মূল কারণই হলো যথাযথ অনুপ্রেরণার ঘাটতি বা অভাব। আবার এমনও হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের মোটিভেশনের কারণেও অনেক কর্মী প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। যখন কর্মীদের কাজের প্রতি যথাযথভাবে অনুপ্রাণিত করা যাবে তখনই প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত সাফল্য আসবে। কেননা যখন কর্মীদের সঠিক ভাবে বাহ্যিক বা অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণা নিশ্চিত করা যায় তখন তাদের কর্মক্ষমতা পূর্বের তুলনায় কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়। কর্মীদের প্রেষণা ব্যাতিরেকে জোরপূর্বক কাজ করালে প্রতিষ্ঠান সাময়িক লাভবান হলেো সূদুরপ্রসারী ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে।

কর্মীদের অনুপ্রেরণা প্রদানের সুবিধা

কোন প্রতিষ্ঠান যখন তার কর্মীর মনোভাব বুঝবে, তার সম্পর্কে জানবে, তার চাওয়া পাওয়া পূরণে সমন্বয় সাধন করবে তথা তার যথাযথ অনুপ্রেরণা প্রদান করবে তখন প্রতিষ্ঠান সামগ্রিকভাবে লাভবান হবে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীকে সঠিক অনুপ্রেরণা নিশ্চিতে নিম্নবর্ণিত সুবিধাদি পাওয়া যায়-

মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধি

প্রেষণা কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মী তার সকল প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত করে। এতে মানব শক্তির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। উপযুক্ত প্রেষণাদানের ফলে কর্মী প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়;

কর্মী তার প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়

যখন কর্মী যথাযথ অনুপ্রেরণা পায় তখন সে তার কাজের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার মধ্যে অধিকতর দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং কাজকে উপভোগ করে। যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রেষণা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয় সে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে ফলে উৎপাদন অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে;

ব্যবস্থাপনা ও কর্মী সম্পর্কের উন্নয়ন

কর্মীদের প্রেষণা উঁচু মানের হলে তারা ব্যবস্থাপকদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এতে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে। ফলে ব্যবস্থাপকগণ সহজেই তাদের দ্বারা নির্দেশ পালন করিয়ে নিতে পারেন। কারণ অনুপ্রেষিত কর্মীরা সহজে ব্যবস্থাপকের নির্দেশ পালন করে থাকে।

কর্মী সন্তুষ্টি অর্জন

সঠিক মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মী সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজতর হয় যা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে। কর্মী সন্তুষ্ট থাকলে কাজের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে আর্থিক ও অনার্থিক উপায়ে প্রেষিত করা হলে তারা সহজে উক্ত প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মী-ঘূর্ণায়মানতা (লেবার টার্ণওভার) হ্রাস পায়;

কর্মীর চলমান বিকাশ

অনুপ্রেরণার মাধ্যমে কর্মী যখন কাজের প্রতি আগ্রহী হবে তখন সে নিজের থেকেই তার সেরা প্রচেষ্টা দেয়ার প্রয়াস পাবে এবং নিজেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখতে সচেষ্ট হবে ও আত্ম উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিবে। নতুন কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে আগ্রহান্বিত হবে এবং নতুন কিছু জানতে ও শিখতে ইচ্ছা প্রকাশ করবে। যখন তাদের সামনে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরা হবে তখন তারা সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেকে স্বপ্রণোদিত হয়েই প্রস্তুত করবে। কেননা অনুপ্রেষিত কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি পূর্ণমাত্রায় বজায় থাকে বিধায় তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। উপরন্তু কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজমান থাকলে তারা সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা বিকাশে উদ্যোগী হয়। তাদের নব নব ধারণা ও উন্নয়নমূলক চিন্তা প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেও সহায়ক হয়;

কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন

কর্মী যখন লক্ষ্য অর্জনে আত্ম উন্নয়নে জোর দিবে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন কাজ দেয়া হলে, তারা কর্মক্ষমতা এবং কাজ করার আগ্রহের মধ্যে সমন্বয় সাধনপূর্বক সর্বোচ্চ সাফল্য বয়ে আনবে। কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষণা দেয়া হলে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পূর্ণমাত্রায় পালনে সচেষ্ট হয় যা কাজের প্রতি তাদের মমত্ব বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ মনে করে কর্মীরা সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বিধায় তাদের সক্ষমতা ও কর্ম-অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও প্রেষণা কর্মীর দক্ষতার সাথে সাথে কর্মসম্পাদনে প্রেষণা যোগায় ফলে কর্মক্ষেত্রে সময় এবং সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়। কর্মী দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে প্রতিষ্ঠানেরও সার্বিক দক্ষতা ও সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগানের কৌশল

কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার কথা ভাবলেই মনে প্রশ্ন জাগে কর্মীর সন্তুষ্টির জাদুকরী উপাদানগুলো আসলে কী? স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে শুধুমাত্র বেতন, পদোন্নতি, প্রণোদনা ইত্যাদি হয়ত অনুপ্রেরণার উপাদান বা নির্দেশক কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে, একজন কর্মীর দৈনিক কর্মোদ্যমে এ উপাদানগুলোর ভূমিকা খুব বেশি জোড়ালো নয়। মানুষের গতানুগতিক চিন্তা হলো কেবলমাত্র বেতন বৃদ্ধি করলে অথবা পদোন্নতি দিলেই কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি পাবে, আসলেই কি তাই? সর্বৈব বিষয়টি সঠিক না কেননা কর্মীর বেতন বৃদ্ধি পেলে হয়ত তিনি গাড়ি কিনবেন, পদোন্নতি হলে মিষ্টি খাওয়াবেন, কিন্তু এটা কি নিশ্চিত তাতেই কর্মীর কর্মোদ্যম বা কর্মস্পৃহা বেড়ে যাবে? এ খুশি কর্মীকে একটানা প্রতিদিন নব-উদ্যমে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে? কতদিন করবে? এক মাস? নাকি এক বছর? আসলে এ খুশি ভুলতে কর্মীর বেশিদিন লাগবে না, সর্বোচ্চ প্রথম-মাসের বেতন পাওয়া বা পদোন্নতি পাওয়ার প্রথম ছয়মাস পর্যন্ত হয়ত এ প্রাপ্তির উত্তেজনা থাকবে, তারপর সেই আগের মত তথৈইবচ! কর্মীর জীবনে এসব উপাদানের প্রয়োজন আছে কিন্তু তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন যথাযথ অনুপ্রেরণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে কর্মীর লক্ষ্যে পরিণত করা। সঠিক অনুপ্রেরণা প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যকে দিয়ে যেমন ভালো কাজ করানো যায় তেমনি অনুপ্রাণিত হয়ে কর্মী নিজেও নিজেকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যেতে পারেন। অনুপ্রেরণা ভীতু মানুষকে সাহসী করে তোলে এবং একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষকে বিশ্ব জয়ের আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। নিম্নে কর্মীকে অনুপ্রাণিত করার কয়েকটি পরীক্ষিত উপায় উপস্থাপন করা হলো:

কর্মীর স্বতন্ত্র অবদানের মূল্য দেয়া

ম্যানেজমেন্টকে অবশ্যই প্রতিটি কর্মীর অবদানকে স্বতন্ত্রভাবে মূল্য দিতে হবে। যখন কর্মীরা তাদের কাজের মূল্যায়ন পাবে তখন তারা গর্ববোধ করবে এবং কাজ করে প্রশান্তি লাভ করবে। কর্মীর ছোট বড় যেকোনো অবদানের মূল্য দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সকল অবদানের জন্য আর্থিক পুরষ্কার দেয়া না গেলেও কর্মীদেরকে নূন্যতম ধন্যবাদটা দিতে হবে, তাদের প্রতি বা তার কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, এতে ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের কাছে ছোট হবে না বরং কর্মীরা আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।

যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ

কর্মীকে কাজের প্রতি আগ্রহান্বিত করার লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কর্মীর খোঁজ-খবর নিতে হবে তার সমস্যা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি কাজ করতে গিয়ে সে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন করছে বা আদৌ কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানার চেষ্টা করতে হবে। কেবল চিঠি, ফোন, ই-মেইল, নোটিশ ইত্যাদির মাধ্যমে নির্দেশনা দিলেই হবে না, স্বশরীরে তার খোঁজ নিতে হবে তার সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। প্রতিদিন কর্মীর খোঁজ খবর নেয়ার জন্য কিছু সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে, সেটা হতে পারে কফি ব্রেক বা লাঞ্চ টাইমে অথবা বেশী ব্যস্ততা থাকলে সপ্তাহে একদিন না হলে অন্তত মাসে একদিন কর্মীদের সাথে বসা যেতে পারে, এতে করে কর্মীর সাথে প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভাল সম্পর্ক তৈরি হবে। কর্মীদের বুঝাতে হবে প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে দিয়ে শুধু কাজ করা হচ্ছে না, এখানে একটি টিম-ওয়ার্ক হয় যেখানে সবারই গুরুত্ব সমান ভাবে এবং শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয়।

মাঝে মাঝে কর্মীদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের কাছ থেকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের মতামত চাওয়া যেতে পারে যা তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য ভাবতে শুরু করবে। তাছাড়া কর্মীদের পরামর্শে হয়ত কোন সৃজনশীল ধারনাও চলে আসতে পারে কারণ তারা খুব কাছ থেকে কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি

অনেক সময় কর্মীরা ইতিবাচক কর্ম পরিবেশের অভাবে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ম্যানেজমেন্টের উচিত হবে কর্মীদের কাছ থেকে কর্মক্ষেত্র বিষয়ে ফিডব্যাক বা মতামত নেয়া এবং কোনো সমস্যা থাকলে তার দ্রুত সমাধান করা।

ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টিতে গ্রাফিক্যাল পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, যেমন অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ইতিবাচক ছবি বা পোস্টার লাগানো, কফি মগে ইতিবাচক উক্তি প্রিন্ট করে দেয়া, বিভিন্ন প্রখ্যাত লেখকের মোটিভেশনাল বা উদ্দীপনামূলক বই ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কর্মীদের জন্য শোভন বিশ্রামের স্থান, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কক্ষ, ইনডোর প্লান্ট, হাল্কা বিনোদনের ব্যবস্থার মাধ্যমেও ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।

বর্ণিত তিনটি উপায় প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেরই জন্য প্রযোজ্য তবে এর বাইরেও কর্মীদেরকে প্রেষণা দানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানভেদে এ উপায়গুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণতঃ মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য, প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে প্রেষণাদানের উপায় নির্ধারণ করা হয়। এসকল বিষয়াদি বিবেচনাকরতঃ কর্মীদের প্রেষণা দানের জন্য মূলত দু’ধরনের উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন-

– আর্থিক প্রেষণা;

– এবং অনার্থিক প্রেষণা।

আর্থিক প্রেষণার উপাদানসমূহ

অর্থের মাধ্যমে যখন কর্মীদের প্রেষণা দেয়া হয় তখন তা আর্থিক প্রেষণা হিসেবে গণ্য হয়। যেসব আর্থিক উপায়ে কর্মীদের প্রেষিত করা হয় তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

– ন্যায্য বেতন

চাকরির শুরুতেই কর্মীর প্রথম ও প্রধান চাহিদা হচ্ছে তার কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত বেতন বা পারিশ্রমিক। এ পারিশ্রমিকই তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কর্মে একনিষ্ঠ হতে প্রারম্ভিকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন না দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে;

– বোনাস

কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ বেতনের পাশাপাশি বোনাস প্রদান করেও কর্মীদেরকে প্রেষিত করা যায়। সাধারণত ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে কর্মীদের জন্য বোনাস ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে;

– লভ্যাংশ প্রদান

কাজের প্রতি কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য অর্জিত মুনাফার একটা অংশ প্রদান করা যেতে পারে। মুনাফার অংশবিশেষ যদি কর্মীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাহলে তারা কাজের প্রতি উৎসাহিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে;

– পদোন্নতি

যথাসময়ে পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমেও কর্মীকে প্রেষিত করা যায়। দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের পদোন্নতি দানের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয় এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সহজ হয়;

– চিকিৎসা সুবিধা

কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণার্থে সুচিকিৎসার সুবিধা প্রদান জরুরি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে কর্মীদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করার জন্য বিনামূল্যে কর্মীদের ও তাদের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে তারা কাজে উৎসাহ খুঁজে পায়। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে চিকিৎসা ভাতাও দেয়া যেতে পারে;

– পুরস্কার

কর্মীর ভাল কাজের জন্য আর্থিক পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যা তার সৃষ্টিশীল কাজকে উৎসাহিত করবে। কেননা এটি তার কাজের স্বীকৃতি নিশ্চিত করে;

– রেশন সুবিধা

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে কর্মীকে সহায়তা করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ান্তে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী হ্রাসকৃত মূল্যে দ্রব্যাদি সরবরাহ করা যেতে পারে যা কর্মীকে কাজের প্রতি উদ্দীপ্ত করবে;

– ক্যান্টিন সুবিধা ও ভর্তুকি

প্রতিষ্ঠানে কার্যরত অবস্থায় কর্মীদের চা-নাস্তা ও অন্যান্য খাবারের জন্য ক্যান্টিন সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে কাবার প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছুটা ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে যাতে তারা স্বল্পমূল্যে ও সময়মত আহার গ্রহণ করতে পারে;

– বাসস্থানের ব্যবস্থাকরণ

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হলো বাসস্থান। বাসস্থান সুবিধা বা বাসস্থান ভাতা প্রদান করেও কর্মীদের প্রণোদিত করা যায়;

– পরিবহন সুবিধা

কর্মীদের যাতায়াত সমস্যা একটি বড় ধরনের সমস্যা বলে বিবেচিত এ সমস্যা থেকে উত্তরণ তথা প্রেষণার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিবহন সুবিধা দিলে তারা কাজে উৎসাহিত হবে;

– অন্যান্য আর্থিক সুবিধা

উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া প্রেষণাদানের আরও কয়েকটি উপাদান রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন ইত্যাদি। বর্তমান বেতনের বিপরীতে কর্মীদেরকে ঋণ বা অগ্রিমও প্রদান করা যেতে পারে যা কর্মীর জীবনের ক্রান্তিলগ্নে সহায়ক হবে।

অনার্থিক প্রেষণার উপাদানসমূহ

আর্থিক উপাদান ছাড়াও কর্মীদের প্রেষণাদানের জন্য অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তা-ই অনার্থিক প্রেষণা। নিম্নেসে উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো:

– শোভন ও সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কাজের শোভন ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকা খুবই জরুরি। কর্মক্ষেত্রটি খোলামেলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, আলো-বাতাস চলাচলকারী ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ হওয়া বাঞ্চনীয়। নারী-পুরুষ সকলেই যেন পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করতে পারে সেদিকটাতে নজর দিতে হবে। যা কর্মীকে কাজ করতে অধিক উৎসাহিত করে;

– চাকরি নিরাপত্তা

কর্মক্ষেত্রে চাকরির নিরাপত্তা না থাকলে কোনো কর্মী আন্তরিকতার সাথে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও নিরাপত্তা একান্ত অপরিহার্য। এ গুলোর অভাব প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদনে কর্মীদেরকে পরিপূর্ণভাবে একাত্ম হতে নিরূৎসাহিত করে থাকে;

– আকর্ষণীয় কাজ

কর্মীর কাজ যদি আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক হয় তবে কর্মীরা উৎসাহের সাথে কার্য সম্পাদন করে থাকে। তাই কাজটি আনন্দদায়ক করার লক্ষ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি তৈরির সময় বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেয়া আবশ্যক। এমনকি কর্মীর চার্টার অব ডিউটিজও সে অনুযায়ী হওয়া আবশ্যক;

– প্রশংসা ও স্বীকৃতি

কর্মী কর্তৃক সম্পাদিত কাজের প্রশংসার জন্য প্রশংসা করা যেতে পারে কেননা সকল মানুষই তার কাজের প্রশংসা ও উৎসাহ কামনা করে থাকে। কাজেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভাল কাজের জন্য যদি প্রশংসা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয় তাহলে তাদের নিকট থেকে অধিকতর উন্নতমানের কাজ আশা করা যায়;

– পদবী পরিবর্তন

অনেক প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায় কর্মীর পদবীর এমন নাম দেয়া হয়েছে যা কর্মী অন্যদের কাছে বলতে সংকোচবোধ করে, যেমন- পিয়ন, দপ্তরী, নিরাপত্তা রক্ষী বা সিকিউরিটি গার্ড, সুইপার, কেরানী, সুপারভাইজার ইত্যাদি। অথচ এ নামগুলি যদি যথাক্রমে এমন হয় যেমন- অফিস সহায়ক বা অফিস সহকারী, টাইম কিপার ও সহকারী, ওয়াচম্যান বা নিরাপত্তা সেন্ট্রি বা সিকিউরিটি পার্সোনেল, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা কম্পিউটার অপারেটর, মনিটরিং অফিসার ইত্যাদি, অন্যদিকে আবার যে সকল পদবী সহকারী ব্যবস্থাপক তার নাম সহকারী পরিচালক করা হলে কর্মীরা অনেকটা উদ্দীপ্ত হয়। পদবী পরিবর্তনে টাকার প্রয়োজন হয় না অথচ এ বিষয়টি সর্বত্রই অবহেলিত;

– অধিকার ও ক্ষমতা

কর্মক্ষেত্রে কর্মীকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) এবং চার্টার অব ডিউটিজ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক অধিকার এবং ক্ষমতা দেয়া হয় তবে তিনি তার কাজ স্বাচ্ছন্দ্যে করার সুযোগ পাবেন, এতে সুশাসনও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মীদেরকে অধিকার ও দাপ্তরিক সংশ্লেষে ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে অর্থাৎ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ যথাযথ হওয়া বাঞ্চনীয়;

– ন্যায় বিচার

প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সময়ে সময়ে নানা অভাব অভিযোগ থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠান যদি এ বিষয়ে সুসংগঠিত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করণার্থে যথাযথ অভিযোগ নিষ্পত্তি (গ্রিভেন্স রিড্রেসিং) এর ব্যবস্থা করতে পারে তবে কর্মীরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে। দক্ষ ও যোগ্য কর্মীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করণার্থে কর্তৃপক্ষকে যথাসাধ্য যৌক্তিক চেষ্টা করা জরুরি। অন্যায় বা ভুলের যেমন শাস্তির বিধান থাকে, তেমর ভাল কাজের পুরস্কারও থাকে। যার যা পাওনা তা তাকে যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিতে সঠিক সময়, স্থান ও পাত্র নির্বাচনে দক্ষতার পরিচয় দেয়া জরুরি। এতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন সহজ হবে। মাসিক বা সাপ্তাহিক সভার মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, অধস্তন সহকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের যুক্তিসংগত চাহিদা থাকে কিন্তু কিছু করার থাকে না তেমন ক্ষেত্রে বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি উভয় পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মোকাবেলা করা আবশ্যক;

– মিথ্যা আশ্বাস পরিহার

প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সাধারণত তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতিটি কথা, কাজ, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনার গুণাগুণ, ব্যক্তিগত ও মানবিক গুণাগুণ সবকিছুই অনুসরণ করে থাকে। ফলে উর্ধ্বতনের বলা কথা, আদেশ, নির্দেশনা, পরামর্শ এসব ঘিরেই তাদের কার্যক্রম, পদচারণা ও স্বপ্ন দেখা চলমান থাকে। বিধায় কখনোই কর্মীকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মিথ্যা আশ্বাস দিয়েও অনেক সময় অনেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন বা সাময়িকভাবে দ্রুত সমাধান আনলেও ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের চলার পথে আরও গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে থাকে। কর্মীদের প্রতি যদি কর্তৃপক্ষের আস্থা থাকে তাহলে মিথ্যা আশ্বাস না দিয়ে বরং সত্য ও সঠিক বিষয়টি তুলে ধরতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। কোনভাবেই মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার প্রয়োজন নেই। কর্মীর ভালমন্দ দেখতে পারার যোগ্যতাও কর্তৃপক্ষের বা উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকের যোগ্যতা ও দক্ষতার মাপকাঠি। যদি পরিস্থিতি এমনই হয় যে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া ব্যতীত বিকল্প নাই তবে তা এমনভাবে দিতে হবে যেন সে মিথ্যা কম ক্ষতিকর হয় এবং যতদূর সত্যের কাছাকাছি থাকা যায়। এক্ষেত্রে প্রদত্ত আশ্বাসটি লিখে রাখতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত ভাবতে হবে, কোনোভাবে এই মিথ্যা আশ্বাসটিকে সত্য বানানো যায় কি না। কেননা মিথ্যা আশ্বাস কর্মীকে হতাশ করে;

– শোভন আচরণ

অধস্তনদের নিকট থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ আদায় করার লক্ষ্যে উর্ধ্বতনের জন্য জরুরি বিষয় হলো তাদের সাথে শোভন বা সদয় আচরণ করা। যাতে একদিকে যেমন অর্থ খরচ হয় না, অন্যদিকে এমন আচরণের মাধ্যমে উর্ধ্বতন ও অধস্তনের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়;

– প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ

প্রশিক্ষণ কর্মীদের মনোবল ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে তথা সমসাময়িক জ্ঞানের জগতে বিচরণপূর্বক কর্মীকে হালনাগাদ রাখতে সহায়ক। অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রশিক্ষণকে একটি বাড়তি ঝামেলা বলে মনে করেন, আবার অনেক সময় দেখা যায় যে কর্মীটি ফাঁকিবাজ বা কাজ করেন না বা যার দাপ্তরিক দায়িত্ব কম তাকে প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেন, অন্যদিকে যিনি অনেক কাজ করেন তাকে দিয়ে আরও কাজ করানোর লক্ষ্যে তাকে প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেন না। অনেক দপ্তরেই দেখা যায় কর্মঠ কর্মীকে প্রশিক্ষণে প্রেরণ না করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলে থাকেন “প্রশিক্ষণে গিয়ে কি শিখবেন বা কি শেখাবে? ওদের চেয়ে আপনি অনেক বেশী জানেন”। আবার প্রশিক্ষণ করাতে যে অর্থের ব্যয় হয় এটাকেও অনেকেই অপচয় মনে করেন। এ বিষয়ে পন্ডিত জওহার লাল নেহেরুর বিখ্যাত একটা উক্তি হলো- “Training is expensive. Without training it is more expensive”, কেননা কর্মী যদি হালনাগাদ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ না পেয়ে থাকেন তবে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয় বা শ্লথ হয়। এমনও দেখা যায় যে, অনেক সময়েই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ দায়সাড়াভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে যা খুবই অনুচিত কাজ। প্রশিক্ষণ প্রদাণের ক্ষেত্রে কর্মীর কোথায় উন্নয়ন প্রয়োজন সেটা জানতে হবে যদি জানা না থাকে তবে প্রশিক্ষণ প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন (Training Need Assessment বা TNA) করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র এবং প্রশিক্ষণার্থী চিহ্নিত করতে হবে। আর এ কাজের জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে, যাকে তাকে দিয়ে করালে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কম্পিউটারে একটা এক্রোনিম আছে GIGO যার ইলাবোরেশন হল Garbage In, Garbage Out, প্রশিক্ষণের কাজের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি;

– সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ

ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্তে যদি কর্মী প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকে, তাহলে কর্মীরা তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকে এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তাই মাঝে মাঝে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর্মীদের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে, এতে তারা নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভাববে যা তাদের কাজ করতে উদ্দীপ্ত করবে;

– শ্রমিক-সংঘ করার সুযোগ

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা থেকে শুরু করে বর্তমানকালে সর্বত্রই শ্রমিকসংঘ করার অধিকার কর্মীদের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কর্মীদেরকে সুস্থ্য ও শোভন শ্রমিকসংঘ গঠন করার সুযোগ দিয়ে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায় যা তাদেরকে প্রতিষ্ঠান ও কাজের অনুপ্রেষিত করবে;

– প্রতিষ্ঠানের সুনাম

সকল প্রতিষ্ঠানেরই উচিত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সকল প্রকারের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতপূর্বক সমপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুনাম অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। কেননা প্রতিষ্ঠানের সুনাম কর্মীদের কাজে প্রেরণা যোগায়। অর্থাৎ সুপ্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কর্মীরা গর্ববোধ করে থাকে এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মী তার উপর অর্পিত কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনে উৎসাহ পায়;

– শিক্ষার সুযোগ

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হলে কর্মীরা উৎসাহিত হবে। এছাড়াও কর্মরত কর্মীদেরকে যদি ক্যরিয়ার গঠনের লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রানিত করার সাথে সাথে এ সংশ্লেষে প্রণোদনা দেয়া যায় তবে কর্মী কাজের প্রতি আরও বেশী আগ্রহবোধ করবে এবং নিজেদের মধ্যে সুস্থ্য প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। কর্মী যত বেশী শিক্ষার সাথে জড়িত থাকবে প্রতিষ্ঠান ততই উন্নতির দিকে ধাবিত হবে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে;

– সঠিক তত্ত্বাবধান

সুষ্ঠু ও সঠিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেয়া যায়। সঠিক তত্ত্বাবধান কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করে এবং এতে কর্মীরা আগ্রহের সাথে কর্মসম্পাদনের সুযোগ পায়।

বর্ণিত প্রেষণার নির্দেশক বা উপাদানসমূহর আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কর্মীদের প্রেষণাদানের ক্ষেত্রে আর্থিক ও অনার্থিক উভয় উপাদানই সমান গুরুত্ব বহন করে। কেননা, অর্থ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন হলেও অনার্থিক উপাদানগুলো মানব হৃদয়ে প্রশান্তি আনে, জীবনকে করে পরিতৃপ্ত এবং এ ধরনের প্রেষণা কর্মীর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম।

কেস স্টাডি-১

কর্মী অনুপ্রেরণা হিসেবে আর্থিক সুবিধা প্রদান

অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করতে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সুবিধা সংশ্লিস্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, যা কখনো প্রণোদনা, উৎসব ভাতা, উৎসাহ ভাতা, বোনাস ইত্যাদি নামে অভিহিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের আর্থিক সুবিধা তাদের কর্মীকে কতটুকু অনুপ্রাণিত করতে পারে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মনস্তাত্ত্বিক আরিয়ালি, লোয়েনস্টাইন এবং নিনা মাজার এ বিষয়ে সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষায় দেখতে পান যে, যখন বোনাস এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন কর্মীদের পারফর্মেন্স বা কর্মদক্ষতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। কেবল ল্যাব পরীক্ষাই নয়, তারা একই পরীক্ষা বাস্তবে ইনটেলের ইজরাইল অফিসেও করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে কর্মীদের কাজের প্রথমদিনে পুরস্কৃত করতে নিম্নবর্ণিতভাবে চার ভাগ করা হয়:

প্রথম ভাগ, যারা টাকা পাবেন বোনাস হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিপস বানাতে পারলে। এটা সেদিন কাজে আসলেই তাদের জানানো হলো;

দ্বিতীয় ভাগ, যারা নির্দিষ্ট পরিমান চিপস বানাত পারবেন তারা পাবেন পিৎজা ভাউচার;

তৃতীয় ভাগ, এদের জানানো হলো তারা নির্দিষ্ট পরিমান চিপস বানাতে পারলে বস তাদের অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা দিবেন;

চতুর্থ ভাগ, এটা কন্ট্রোল গ্রুপ বা নিয়ন্ত্রিত দল, যাদেরকে কিছুই দেয়া হবে না।

অফিসের বড়কর্তাদের প্রশ্ন করা হলো তারা কী মনে করেন, কোনটা কর্মীদের কর্মক্ষমতা বেশী বৃদ্ধি করবে বলে প্রতীয়মান হয়। বড়কর্তারা সবাই বললেন টাকাটাই বেশী কাজ করবে তারপর পিৎজা ভাউচার।

পরীক্ষায় দেখা গেল প্রথমদিনে প্রথম তিন পুরস্কারই কর্মীদের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করেছে। সবচাইতে ভালো করেছে পিৎজা ভাউচার ৬.৭ শতাংশ। এরপরেই একেবারে কাছাকাছি করেছে বসের অভিনন্দন ৬.৬ শতাংশ। তিনটার মধ্যে টাকা বোনাস কাজ করেছে ৪.৯ শতাংশ।

অর্থাৎ একেবারে কিছু না দেয়ার চাইতে ইনসেন্টিভস বা প্রণোদনা দেয়া কাজে দেয়।

এরপর দ্বিতীয়দিনে দেখা গেল অদ্ভূত অবস্থা। এইদিনে আর পুরস্কার দেয়া হয় নাই। যাদের টাকা বোনাস দেয়া হয়েছিল আগের দিন তাদের পারফর্মেন্স খুব খারাপ হয়েছে। এমনকি যাদের প্রথমদিনে কিছু দেয়া হয় নাই তাদের পারফর্মেন্স থেকেও ১৩.২ শতাংশ কম। এপর্যায়ে কর্মীরা ভেবেছে প্রতিষ্ঠান গতকালের কাজের জন্য পুরস্কার দিয়েছে আজ কিছুই দিচ্ছে না, বিধায় আজ আমার কম কাজ করলেও হবে। এইভাবে আগেরদিনের টাকা বোনাস নেতিবাচক অনুপ্রেরণার কাজ করেছে।

এভাবে এক সপ্তাহের তথ্য দিয়ে দেখা গেল টাকা বোনাস যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের পারফর্মেন্স যাদের কিছু দেয়া হয় নাই তাদের থেকে গড়ে ৬.২ শতাংশ খারাপ ছিল।

পিৎজা ভাউচার এবং অভিনন্দন

এই দুইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেল অভিনন্দন পারফর্মেন্স যা বৃদ্ধি পেয়েছিল তিনদিনে তা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়ে কন্ট্রোল গ্রুপ বা নিয়ন্ত্রিত দলের সমপর্যায়ে চলে গেছে। কিন্তু পিৎজা যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের পারফর্মেন্স টাকা গ্রুপ এবং অভিনন্দন গ্রুপের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিল।

অর্থাৎ, কমপ্লিমেন্ট বা অভিনন্দন তিনদিন পর্যন্ত কর্মীদের পারফর্মেন্স বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়েছে এবং টাকা বোনাস কর্মীদেরকে নেতিবাচকভাবে অনুপ্রাণিত করলো।

কেস স্টাডি-২

বহিঃস্থ প্রেষণা এবং অন্তঃস্থ প্রেষণার সমন্বয় সাধন

উলি ও ফিশব্যাখ নামক দু’জন গবেষক একটা জিমে গবেষণা করে দেখেছেন যে, যখন মানুষ কোন কাজ করে তখন কাজটা ভালোভাবে করাটাই তার কাছে মূখ্য হয়। দেখা গেছে এক্সারসাইজের সময় এক্সারসাইজটি ঠিকমত করা, করতে যাতে তাদের ভালো লাগে, উপভোগ করেন এটাই তারা চান। এটাকে বলা হয় ইন্ট্রিনসিক বা অন্তঃস্থ প্রেষণা। কিন্তু কাজটি করার আগে তারা এক্সট্রিনসিক বা বহিঃস্থ প্রেষণাকে প্রাধান্য দেন। অর্থাৎ এক্সারসাইজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো হবে ইত্যাদি বিবেচনা করে জিমে যান। অন্য কাজ হলে কর্মী কেমন টাকা পাবেন তার উপর ভিত্তি করে এমন প্রেষিত হন।

অর্থাৎ, মানুষ মনে করে যে বহিঃস্থ প্রেষণা তাকে কাজটি করায়। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি তা নয় বরং অন্তঃস্থ প্রেষণাই কাজটি করায় বিধায় সে ভালোভাবে কোন কাজ করে যায় এবং দিনের পর দিন তা করার উৎসাহ পায়।

একারণেই চাকরি বা অন্য কোন কাজের আগে একজনের কখনো ইন্ট্রিনসিক বা অন্তঃস্থ প্রেষণা উপেক্ষা করে যাওয়া ঠিক না। যা বেশীরভাগ মানুষই করে থাকেন এবং পরবর্তীতে কাজটি করতে করতে একঘেয়েমি এসে যায় বা স্বস্তিবোধ করেন না। প্রতিষ্ঠানে কর্মী ধরে রাখার জন্য তথা প্রেষিত করার জন্য প্রতিটি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা আবশ্যক।

প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বিভাগ কোনটিকে বেশী গুরুত্ব দিবে প্রশিক্ষণ নাকি প্রেষণা?

পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হয় এমন যেকোনো কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষণের কেননা প্রশিক্ষণ কাজে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার অনেক সময় দেখা যায় প্রশিক্ষিত জনবল থাকা স্বত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের কর্মসম্পাদন আশাজনক নয়। প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করলেও কিছু কর্মীর কাজের গতি ও মানসিকতা প্রায় অপরিবর্তিতই থেকে যায়। যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা ও লক্ষ্য অর্জন উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

এটা খুবই যৌক্তিক আকাঙ্খা যে, কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়ার পর বা সব কিছু জানার পর কর্মী তা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। কিন্তু বাস্তবে সর্বত্র এমনটা নাও হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে কেউ জামাকাপড় ইস্ত্রী করা বা কাপড় পরিষ্কার করতে জানলে যে তিনি তা সবসময় করতে চাইবেন, তা কিন্তু না। আসলে একজন মানুষ যত জ্ঞানীই হোন না কেন, কাজ করার আগ্রহ বা প্রেষণা না থাকলে সে জ্ঞান অকার্যকর হয়ে পড়ে।

অপরদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা তথ্যাদি না থাকলেও একজন মানুষের মধ্যে যদি যথেষ্ট পরিমানে অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন থাকে তাহলে সে ঠিকই যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিতে চাইবে নিজ থেকেই। তাই সর্বপ্রথম কর্মী মোটিভেশন বা প্রেষণা অন্য যেকোন প্রশিক্ষণের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায়শঃ দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে কিছু কর্মীর দৈনন্দিন কাজ করতে আলস্য বা অনাগ্রহ থাকে এবং এরা কাজ ফেলে রাখে বা দিনের কাজ দিনেই সম্পাদন করেন না। ফলে এসংশ্লেষে অন্য সহকর্মীদের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে দলগত কাজের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রিপোর্টিং করা সম্ভব হয় না বা নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রেষণা বা প্রেষণা সংশ্লেষে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য হয়ে পরে।

কাজে আলস্য বা দীর্ঘসূত্রিতা যেকোনো কর্মীর নিম্নমানের পারফরম্যান্সের মূল কারণ হয়। কোনো কর্মীর মদ্যে যদি ‘যা হয় হোক’ বা ‘ক্যাজুয়াল’ মনোভাব থাকে তবে ‘প্রশিক্ষণ’ বা ‘দক্ষতা’ তার পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটাতে পারবে না। ঠিক একারণেই যাকে তাকে প্রশিক্ষণে প্রেরণ না করে তৎপূর্বে কর্মীর আগ্রহ বা প্রেষণার অবস্থা যাচাই করে নেয়া আবশ্যক। সকল প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের উচিৎ প্রশিক্ষণের পূর্বে সঠিকভাবে ‘প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন’ বা ’ট্রেনিং নিড অ্যাসেসমেন্ট’ করা, এলামেলোভাবে যখন যাকে ইচ্ছা তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া বা যখন যে বিষয়ের কথা মনে হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া এমন উদ্ভট চিন্তা ধারা থেকে কর্তৃপক্ষকে বেড়িয়ে আসতে হবে। নতুন কিছু শিখার ক্ষেত্রে প্রায় দেখা যায় যে, মোটিভেশনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বা কর্পোরেট প্রশিক্ষণে এ বিষয়টির উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয় না, এমনকি কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এবিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মী থাকলেও তাকে কাজে লাগাতে বিব্রতবোধ করেন নিজের অস্তিত্ব সংকটের আশংকায়। সবসময়ই কর্মী ধরে রাখা ও পারফরম্যান্স বৃদ্ধির জন্য কর্মীর ‘প্রশিক্ষণ’ দ্বিতীয় সুযোগ বা পন্থা হিসাবে বিবেচ্য অন্যদিকে কর্মীর ‘মোটিভেশন বা প্রেষণা’ প্রথম পন্থা তথা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগানের কৌশল

এ পর্যন্ত কিভাবে কর্তৃপক্ষ তার কর্মীকে অনুপ্রাণিত করবেন সেসকল বিষয়াদি আলোচনা করেছি কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় করণীয়র পাশাপাশি কর্মীর নিজেকেও নিজেই অনুপ্রাণিত করা জরুরি।

কর্মী কীভাবে কাজে নিজেকেই নিজে প্রেষিত বা মোটিভেট করবেন

কর্মীকে বিশ্লেষন করে দেখতে হবে তার কৃত কাজটি কীভাবে অন্যকে সাহায্য করছে, এটা যখন কর্মী উপলব্ধি করতে পারবে তখন কাজটির মধ্যে অর্থবহ আবহ তৈরী হবে এবং তা করতে তিনি অনুপ্রাণিত থাকবেন। বিষয়টির সুস্পষ্টতার স্বার্থে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন- একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রতিদিনই হাসপাতালে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করতেন। দীর্ঘদিন একই কাজ করতে গিয়ে তার কাজে তিনি উৎসাহ হারিয়ে ফেললেন এবং কাজটি ছেড়ে দিতে চাইলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তার মা’এর সাথে আলোচনা করলে তার মা তাকে বুঝালেন কিভাবে তার কাজ মানুষের উপকার করছে। কীভাবে হাসপাতালে আসা রোগীদের জীবাণু থেকে বাঁচাতে, তাদের ভালো জীবন যাপনে এই ময়লা পরিস্কারের কাজটি সাহায্য করছে। এতে কর্মীটি তার কাজের অনুপ্রেরণা ফিরে পায়। মায়ের যুক্তির কারণে সে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে অনুধাবনপূর্বক তার কাজের অর্থ খুঁজে পেয়েছে। আগে যেটি ছিল আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ এখন সেটা পরিণত হয়েছে রোগীদের সহায়তা করা।

আত্মপরিচয়বোধ নিশ্চিতপূর্বক নিজেকে প্রেষিতকরণ

আইকেইএ একটি ফার্নিচার কোম্পানি যারা পার্টস হিসেবে ফার্নিচারের অংশগুলি দেয়, সাথে ইন্সট্রাকশন। ইন্সট্রাকশন দেখতে দেখতে এমন এক ফার্নিচার ঠিক করতে মনস্তাত্ত্বিক ড্যান আরিয়ালি প্রায় হিমশিম খেয়ে যান। কিন্তু পরে তিনি লক্ষ করেন ঐ ফার্নিচারটিকে তার কাছে বেশী ভালো লাগে। তিনি এর প্রতি আলাদা আকর্ষণ অনুভব করেন এবং মায়ার দৃষ্টিতে এর দিকে তাকান। নিজের তৈরী জিনিসের প্রতি মানুষের মমতা থাকে বেশী। রিসার্চে দেখা গেছে নিজের তৈরী জিনিস কিনতে মানুষ পাঁচ গুণ বেশী দামও দিয়ে থাকে।

১৯৪০ সালে আইকেইএ’র আগেও মানুষের সাইকোলজিক্যাল এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল আমেরিকান কেক মিক্সিং কোম্পানি পি ডাফ এন্ড সনস। তারা প্রথমে এক ধরনের কেক মিক্স বাজারে আনে। যা পানিতে মিশিয়ে গরম করেই কেক বানানো যায়। কিন্তু দেখা গেল ৪০’এর গৃহিণীরা এটা ঠিকমতো গ্রহণ করছেন না। এগুলি ভালো বিক্রি হলো না। ডাফ কোম্পানি তাদের সমস্যাটি বুঝতে পারলো। তারা কেক মিক্স থেকে ডিম ও দুধ সরিয়ে নিল। তখন গৃহিণীদের কাজ করার জায়গা থাকে। তারা কেক মিক্সে দুধ যোগ করেন, ডিম যোগ করেন। তখন যে কেক হয় তা হয় তাদের নিজের তৈরী। সেই খাবার অন্যে যখন ভালো বলে তখন তাদের ভালো লাগে। তারা তখন রান্নাটিকে নিজের মনে করতে পারেন এবং স্বকীয়তার একটা আবহ সৃষ্টি হয়। সেন্স অব আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয়ের এক বর্ধিত রূপ হয় মানুষের তৈরী পণ্যতে। একজনের হাতের রান্না ভালো মানে এটা তার পরিচয়ের সাথে যুক্ত একটি বিষয় এবং তার আত্মপরিচয়েরই অংশ হিসাবে মনে করা হয়।

এর বিপরীতটা হলে কেমন হয়? যেমন- বাংলাদেশের একটা বৃহৎ মশলা প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাদের কিছু বিজ্ঞাপনে ভোক্তার এই সেন্স অব আইডেন্টিটিকে আঘাত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোম্পানিটির মাংসের মসলার বিজ্ঞাপনে বলা হয়, “এটা থাকলে যে কেউই রাধতে পারে সুস্বাদু মাংস!” অথবা ফিরনি মিক্সের বিজ্ঞাপনে মিক্সকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে এই মিক্স হলেই যে কেউ ভালো রাঁধতে পারবেন। অর্থাৎ এসব বিজ্ঞাপনে মসলা রান্না যিনি করেন তাকে অস্বীকার করা হচ্ছে, এমন বিজ্ঞাপন ভোক্তার সেন্স অব আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয়কেই অবহেলা করছে যা অনুপ্রেরণা কমাবে ভোক্তার উক্ত মসলা ক্রয়ের ক্ষেত্রে। কোন রাঁধুনীই নিশ্চয়ই চাইবেন না তার রান্নার গুণের কথা বলতে গিয়ে অন্যরা তার কৃতিত্ব না বলে মসলার কৃতিত্বের কথা বলুক। বিজ্ঞাপনের এই বার্তাটা নেতিবাচক অনুপ্রেরণার কাজ করে। মসলার বিজ্ঞাপনে মসলা নিয়েই বলতে হবে তার বিকল্প নাই কিন্তু এখানে যদি মসলা ও রান্নাকারী উভয়কেই গুরুত্ব দিয়ে বা সামঞ্জস্য রক্ষা করে উপস্থাপন করা হত তবে বিদ্যমান মসলার বিজ্ঞাপটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা পেত। মানুষকে প্রেষিত করতে তাই সৃষ্টি করার আনন্দ এবং সেন্স অব আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয় দিতে হবে। নিজে কাজ করে তা অসুন্দর হলেও কর্মীর মধ্যে একটা ভিন্ন ধরনের মানসিক প্রশান্তি এনে দিবে। এরকম যেকোন কাজে নিজে সরাসরি অংশ নিলে তা কাজটির মধ্যে একটা অর্থবহ অনুভব তৈরি করে এবং কর্মী নিজেকে প্রেষিত করতে সক্ষম হন।

প্রেষণা বিষয়ক আপাত সারমর্ম

মনস্তত্ব বিশারদ ড্যান আরিয়ালির ভাষায় মোটিভেশন বা প্রেষণা মানুষের প্রতিটা কাজের সাথে সরাসরি জড়িত এবং এতটাই জটিল একটা বিষয় যে একে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা দূরুহ একটা বিষয় তাই এখানে একটা আপাত সারমর্ম টানা যায়। আর তা হলো-

সাইকোলজিক্যাল গবেষণা থেকে প্রেষণা বা মোটিভেশনের মূল কিছু নির্ধারক ফ্যাক্টর বা বিষয়ের ধারণা পাওয়া গেছে এবং এ সকল নির্ধারকের মধ্যে আর্থিক বিষয়টিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ন নির্ধারক নয়, এর সাথে আরও অনেক গুরুত্বপূণৃ নির্ধারক বা ফ্যাক্টর রয়েছে যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

– কর্মীকে তার কাজের অর্থবহতা এবং সংযোগ সবচেয়ে বেশ প্রেষিত করতে সক্ষম। অর্থবহতা ও সংযোগ বলতে যে কাজটি সম্পাদন করা হচ্ছে তার গ্রহণযোগ্য অর্থ এবং এটা সমাজে কী প্রভাব বিস্তার করছে বা অথবা কর্মীর পূর্ণতা বোধ যে কাজটি তিনি করতে পারছেন যা সৃজনশীল এবং অপরের উপকারে আসছে এমন একটা অনুভূতি সৃষ্টিকারী;

– কর্মীর আত্মপরিচয়ের বিকাশের বা প্রসারের আকাঙ্খা অর্থাৎ কাজটি তার পরিচয়কেই বর্ধিত করে নিয়ে যাবে। এ আকাঙ্খাও তার কাজ করাকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত কর্মীদের আত্মপরিচয় বিকাশ তথা ব্যাপ্তির সু্যোগ রাখা বা সুযোগ তৈরি করে দেয়া;

– টাকা প্রেষণায় সাময়িক ভূমিকা রাখলেও এটা ক্ষণস্থায়ী বা সংক্ষিপ্ত প্রেষণার কাজ করে অর্থাৎ মোটিভেটর হিসেবে টাকা আর্থিক সুবিধার অবস্থান খুব একট ভালো না। এর পরিবর্তে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সামজিক বিষয়াদি যেমন অভিনন্দন, উৎসাহ, উপহার, প্রশংসা ইত্যাদি উপাদারগুলি ভালো প্রেষণা সৃষ্টিকারী। যে সকল ক্ষেত্রে সামাজিক বিষয়াদি বেশী প্রযোজ্য সেখানে টাকা বা আর্থিক বিষয়াদিকে প্রেষণা হিসেবে প্রয়োগ করলে তার ফলাফল হবে কূবই নেতিবাচক;

– কর্মীকে ধরে রাখার স্বার্থে বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষণায় পারস্পরিক সুসম্পর্ক, শ্রদ্ধা ও সম্মাণ, বিশ্বাস রাখা এবং দীর্ঘ নিশ্চয়তা প্রদান করা আবশ্যক। দীর্ঘ নিশ্চয়তা বলতে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক যাতে কর্মী অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তার ক্যারিয়ারের উন্নতি সম্ভব, সুষ্ঠু ও শোভন কর্মপরিবেশ বিদ্যমান, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে ইত্যাদি। অর্থাৎ বর্তমান প্রতিষ্ঠানে তার ভবিষ্যত নিশ্চয়তা আছে কোন ঝুঁকির মধ্যে নাই বা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন কোন অগ্রহণযোগ্য বিধি-বিধান অনুপস্থিত।

পরিশেষে বলতে চাই যে, প্রেষণা এমন একটি ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়, উপরন্তু কর্মী ঐ প্রতিষ্ঠানেই তার ক্যরিয়ারের উন্নতি করতে চায়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানবসম্পদ তথা কর্মী। কর্মীর সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যের সাথে সম্পাদিত হতে পারে না। প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সচল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আননয়ের পাশাপাশি কর্মীকে ধরে রাখে। যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামো, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি), চার্টার অব ডিউটিজ, শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতাই নয় বরং যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা বিবেচনায় নিয়মিত পদোন্নতি, সুসংগঠিত পদায়ন নীতিমালা (যেমন: শুরুটা হবে মাঠ পর্যায়ে বা প্রারম্ভিক প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অত:পর নীতি প্রণয়ন সংশ্লিস্ট ক্ষেত্রে, শুরুতেই প্রাতিষ্ঠানিক ওরিয়েন্টেশন প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগ বা শাখায় পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদায়ন, ইত্যাদি), ক্যরিয়ার গঠনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনস, সৃজনশীলতা ও মেধার বিকাশসহ মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ, সমতা ও ন্যায্যতার সমন্বয় সাধন এবং মানবাধিকার সুরক্ষাকারী শোভন চাকরির বিধি-বিধান প্রনয়নপূর্বক বা হালনাগাদকরণের মাধ্যমে একটা ইতিবাচক কর্মক্ষেত্র তৈরি সাপেক্ষে যেকোনো প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য কর্মীদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও এ কাজটা সহজসাধ্য বা স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব না তথাপিও সময় নিয়ে হলেও ম্যানেজমেন্টের উচিত এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা এবং দূরদৃষ্টিতার পরিচয় দেয়া। সর্বোপরি বলা যায় কর্মীদের কাছ থেকে সেরা সেবা পেতে এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কর্মীদের সঠিকভাবে অনুপ্রাণিত করা বা মোটিভেশন দেয়ার বিকল্প নাই।

গ্রন্থপঞ্জি:

ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এর ক্লাস লেকচারসমূহ

এবং

https://lifedoze.com/

https://loraku.com/

https://m.somewhereinblog.net/

https://muradulislam.me/

https://news.priyo.com/articles/

https://www.dailyinqilab.com/article/

https://www.deshrupantor.com/

https://www.ekushey-tv.com/19925

https://www.kalerkantho.com/a2z/204243

https://www.prothomalo.com/life/

https://www.protidinersangbad.com/tarunno/56319/

https://www.risingbd.com/lifestyle/

http://youthcarnival.org/bn/management-mistakes/

www.armiah.com